ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
তবে সত্যিকার সুখী কে? ঈশ্বরের জন্যে যে দুঃখভোগ করতে প্রস্তুত, সে-ই। দুর্বলচিত্ত, অস্থিরমতি মানুষ সব সময় বলে: ‘‘দেখ, লোকটি কত সুখে আছে, কত ধনী, কত উচ্চপদস্থ সে, কত তার শক্তি আর প্রতিপত্তি!’’
কিন্তু একবার দৃষ্টিপাত কর স্বর্গীয় ঐশ্বর্যের দিকে; দেখবে কত অনিশ্চিত আর ভাববহুল এই সব ঐহিক বিত্ত। দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কা ছাড়া একে আদৌ রক্ষা যায় না। ঐহিক বস্তুর প্রাচুর্যের দ্বারা কারো সুখ নির্ধারিত হয় না; প্রয়োজনমতো স্বাচ্ছন্দ্যই মানুষের পক্ষে যথেষ্ট।
পার্থিব জীবন সত্যিই অশেষ দুঃখের আকর।
মানুষ আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে যত আগ্রহী, ততই তার কাছে এই সংসার বিস্বাদ হয়ে ওঠে। কারণ মানবজাতির ত্রুটিবিচ্যুতি ও বিকৃতিসমূহ সে তত গভীরভাবে বোঝে, তত পরিষ্কারভাবে দেখে।
পান-আহার, নিদ্রা-জাগরণ, পরিশ্রম ও বিশ্রাম প্রভৃতি দৈনন্দিন জীবনের জৈবিক প্রয়োজনগুলি—পাপ থেকে মুক্তি পেতে চায় এমন সব ভক্ত মানুষের পক্ষে কত-না কষ্টকর।
আত্মনিবিষ্ট মানুষ এই পার্থিব জীবনের নানা দৈহিক চাহিদার ভারে অত্যন্ত বিব্রত হয়ে থাকে। মহর্ষি দাউদ এদের হাত থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানিয়েছেন, ‘আমার প্রয়োজনগুলি থেকে আমাকে মুক্তি দাও, প্রভু।’
যারা নিজেদের দুর্দশাও বোঝে না, তাদের ধিক! যারা এই শোচনীয় অধঃপতিত জীবনে আসক্ত, তাদের ধিক। অনেকেই জীবন-কে গভীরভাবে আঁকড়ে ধ’রে থাকে—অথচ পরিশ্রম কিংবা ভিক্ষা ক’রেও নিজেদের নিত্য প্রয়োজন মেটাতে পারে কিনা সন্দেহ; তারা ভাবে চিরকাল এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারলে তারা ঈশ্বররাজ্যের জন্যে ভ্রূক্ষেপও করত না।
ওরে মূঢ়, অবিশ্বস্তহৃদয় মানুষ! পার্থিব ভোগের আকাঙ্ক্ষায় তোরা এমনভাবে ডুবে আছিস যে স্থূল শারীরিক প্রবৃত্তি-ই তো সব সময় ধ্যান করিস। হতভাগ্যের দল! অসীম দুঃখের মধ্যে দিয়ে অবশেষে একদিন তোরা শিখবি, তোদের এই সব কামনার বস্তু কত অসার আর মূল্যহীন।
এদিকে দেখ: ঈশ্বরের করুণাধন্য সন্তগণ, খ্রীষ্টের একনিষ্ঠ বন্ধুবর্গ—এই সংসারের যা সম্বল, সেই সব দেহ-পরিতোষক বস্তুকে বিন্দুমাত্র আমল দেন নি। তাঁদের সমস্ত আশা ও লক্ষ্য শাশ্বত বিত্ত সঞ্চয়ের অনুরাগী।
তাঁদের সমস্ত বাসনা উন্মুখ হয়ে থাকত, যা চিরন্তন, যা অদৃশ্য তারই জন্যে; তাঁদের একমাত্র ভয়-পাছে দৃশ্য বস্তুর প্রতি অনুরাগের জন্যে তাঁদের অধঃপতন ঘটে। আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে আস্থা হারিও না—এখনও সময় আছে; প্রহর এখনও অতিক্রান্ত নয়।
দিনের পর দিন কেন স্থগিত রেখেছ তোমার সঙ্কল্পের রূপায়ণকে? জাগ, ওঠ, এই মুহূর্তেই শুরু কর, বল: ‘‘এখনই কর্মক্ষেত্রে নামার সময়, এখনই সংগ্রামের কাল, আপন জীবন সংশোধনের এই তো পরম মুহূর্ত।’’