ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
শ্যামলবাবু বলেন, অভিজিৎ জয়পুরের প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন খেলোয়াড় ছিল। এলাকায় খেলার জগতে ও খুবই পরিচিত নাম। কিন্তু, গোলরক্ষকের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে মাঠেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাকে অকালে চলে যেতে হল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় বুধবার জয়পুরের রাজগ্রামে বিদ্যালয় স্তরের রাজ্য প্রতিযোগিতার আসর বসবে। সেখানে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিযোগীরা আসবে। অভিজিৎ বাঁকুড়ার টিমে সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমরা ওর পরিবারের পাশে রয়েছি।
জয়পুরের বিডিও বিট্টু ভৌমিক বলেন, দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিজিতের চিকিৎসার বিষয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ব্লক প্রশাসন শোকার্ত পরিবারের পাশে রয়েছে। সরকারি নিয়মে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে যেটুকু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় তা দেওয়া হবে।
আশুরালি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিমলচন্দ্র দিগর বলেন, বিদ্যালয়ে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রদের নিয়ে ফুটবল টিম তৈরি হয়েছিল। প্রত্যেকেই খুব ভালো খেলার জন্য দল ফাইনালে ওঠে। অভিজিৎ গোলরক্ষক ছিল। এর আগের খেলায় সে বেশ কয়েকবার নিজস্ব দক্ষতায় নিশ্চিত গোল হওয়া থেকে বাঁচায়। কিন্তু এদিন এভাবে দুর্ঘটনার কারণে ওকে চলে যেতে হবে তা ভাবতেই পারছি না।
মৃতের দাদা মিলন দে বলেন, ছোটবেলা থেকেই ভাইয়ের ফুটবল খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল। রোজ সে গ্রামের মাঠে প্র্যাকটিস করত। ওদের টিম ফাইনালে উঠেছে শুনে আমি আমার কর্মস্থল বিষ্ণুপুরের মড়ার থেকে জয়পুরে খেলা দেখতে এসেছিলাম। খেলার প্রায় শেষের মুখে গোল বাঁচাতে গিয়ে সংঘর্ষে চোখের সামনেই ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু ও যে এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে পারিনি।
বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদ ও জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর অনুর্ধ্ব-১৯ ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। এবারেও কিছুদিন আগে ব্লকের ১৭টি স্কুলের টিম তাতে অংশ নেয়। বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন মাঠে নক আউট পর্যায়ে খেলা হয়েছে। ওইদিন জয়পুর হাইস্কুল মাঠে চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা ছিল। বিকেল ৩টেয় আশুরালি ও মাগুরা হাইস্কুল ফাইনালে মুখোমুখি হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই স্কুলের শিক্ষক ছাড়াও ব্লক প্রশাসন ও বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে শেষের দিকে মাগুরা হাইস্কুল একটি ফ্রি কিক পায়। তাতে গোল বক্সের মধ্যে বল এলে আশুরালি হাইস্কুলের গোলরক্ষক অভিজিৎ তা ধরার জন্য বেশ কিছুটা উঁচুতে লাফায়। প্রথমবার তার হাত থেকে বল ছিটকে গেলে সে দ্বিতীয়বার বল ধরতে গেলে বিপক্ষের ফরোয়ার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তাতে দু’জনেই মাটিতে পড়ে যায়। তারপরই অভিজিৎকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন সকাল থেকেই মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন। তিনি মর্গে গিয়ে দ্রুত ময়নাতদন্তের বন্দোবস্ত করেন। সেখানে মৃতের দাদা মিলনকে সমবেদনা জানান। দুপুরে মর্গ থেকে মৃতদেহের সঙ্গেই আশুরালি গ্রামে আসেন মন্ত্রী। তিনি মৃতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গ্রামে গিয়ে দেখা গেল মৃতের বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি বিশ্বজিৎ দে শোকস্তব্ধ। মা পুতুলদেবী অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরের উঠানে ঘন ঘন সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। খেলার মাঠে এভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।