ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
প্রসঙ্গত, গত সোমবার কলকাতায় দেহ হস্তান্তর নিয়ে অশান্তি হওয়ার পর গভীর রাতে ব্যাপক পুলিসি প্রহরায় মৃতদেহ বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রাতেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাছে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানায় নানুর থানার পুলিস। কিন্তু, মৃতের পরিবারের সদস্যরা দেহ নিতে অস্বীকার করেন। তাঁরা দাবি করেন, পুলিস কারও অনুমতি ছাড়াই দেহ কলকাতার হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছে। তাই তাঁরা দেহ গ্রহণ করবেন না। একথা শোনার পর পুলিসের পক্ষ থেকে স্বরূপ গড়াইয়ের বাড়ি ও বাসাপাড়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় দেহ গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে পোস্টার দেওয়া হয়। তাতেও অবশ্য কাজ হয়নি। তার জেরে পুলিস-প্রশাসন ও বিজেপির মধ্যে শুরু হয় প্রবল দ্বন্দ্ব।
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে খবর, গত শুক্রবার রাতে নানুরের রামকৃষ্ণপুরে মহোত্সব চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হন বিজেপি নেতা অনুপ গড়াইয়ের ভাই স্বরূপবাবু। তিনি রবিবার রাতে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তারপর থেকেই বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতোরে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। সোমবার সকাল থেকে দেহ নিয়ে বিজেপি সদর দপ্তরে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু তাতে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার কারণ দেখিয়ে বাধা দেয় পুলিস।
পুলিসের তরফে জানানো হয়, দেহ নানুরে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু, বিজেপি নেতৃত্ব ও মৃতের পরিবার সেই কথা মানতে নারাজ ছিলেন। সোমবার দিনভর টালবাহানার পর অবশেষে রাত্রি ২টো নাগাদ পুলিস বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে স্বরূপ গড়াইয়ের মৃতদেহ। দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য রাতেই পরিবারকে জানানো হয়। কিন্তু, পুলিসের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পরিবারের সদস্য থেকে গ্রামবাসী সকলেই। তাঁরা দাবি করেন, পুলিস কোনওরকম অনুমতি ছাড়াই স্বরূপ গড়াইয়ের মৃতদেহ এনআরএস হাসপাতাল থেকে বের করে বোলপুরে নিয়ে এসেছে। যতক্ষণ না পুলিস কেন এমন করেছে তা জানাবে ততক্ষণ দেহ গ্রহণ করা হবে না।
অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে দেহ নিতে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে আসেন মৃতের স্ত্রী চায়না গড়াই ও বিজেপি নেতৃত্ব। দেহ নিয়ে ফের সেখানে শুরু হয় টানাপোড়েন। দেহ নিতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিতে অস্বীকার করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় সোমবার গভীর রাতে পুলিস মর্গে দেহ রেখে গিয়েছে। তাই পুলিসের অনুমতি ছাড়া দেহ হস্তান্তর সম্ভব নয়। সেই কথা শুনে মৃতের স্ত্রী ও বিজেপি নেতৃত্ব বোলপুরে এসডিপিও অফিসে যান। অন্যদিকে, সেসময়ই বিজেপির নেতা কর্মীরা বোলপুর-নানুর রাস্তা অবরোধে নামে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কয়েক ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করা হয়। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মী-সমর্থকরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় প্রচুর পুলিস মোতায়েন করা হয়। অবরোধে শামিল হন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সংসদ সদস্য সৌমিত্র খাঁ, নেতা অনুপম হাজরা প্রমুখ। বোলপুর থানার পুলিস একাধিকবার অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে রাত ৮টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। কিন্তু তারপর আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানুর থানার রিক্যুইজিশন আনার কথা বলায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত দেহ নিয়ে যেতে পারেনি মৃতের পরিবার।
বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, দেহ নেওয়ার জন্য পুলিসের দাবিমতো সমস্ত তথ্য জানানো হয়েছে। তার ভিত্তিতে পুলিস দেহ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল নানা অছিলায় বাধা দিচ্ছে। একেক সময় একেক রকম কথা বলা হচ্ছে। পুলিস আর হাসপাতাল মিলে আমাদের হয়রানি করছে।
অন্যদিকে, এদিন সিউড়িতে এসপি অফিসের সামনে দ্বিতীয় দিনের ধর্না মঞ্চে যোগ দেন সংসদ সদস্য সৌমিত্র খাঁ যোগ। তিনি বলেন, পুলিস কত মামলা করবে, করুক। এবার বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক জঙ্গি আন্দোলন করা দরকার। আমরা রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছি। আর ছ’মাস পর সরকার এমনিই পড়ে যাবে। তারপর রাস্ট্রপতি শাসন জারি হবে। রাজ্যে আমাদের সরকার গঠন হবে। তখন এসবের জবাব দেওয়া হবে।