ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
জীবনে ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশের মধ্যে প্রভাব বিনিময় সব সময় চলে। ব্যক্তিত্বের যেমন বিভিন্ন স্তর আছে পরিবেশেরও তেমনি বিভিন্ন স্তর আছে। জড় শরীরের সঙ্গে জড় জগতের সংস্পর্শ আছে। তেমনি মনোময় শরীরের সঙ্গে মনোজগতের এবং অধ্যাত্ম শরীর বা জীবাত্মার সঙ্গে বিশ্বাত্মার বা ঈশ্বরের সম্পর্ক বিদ্যমান। ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন স্তর থেকেই অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। আমরা যখন যে স্তরে বা যে জগতে বাস করি তখন সেই স্তরের অভিজ্ঞতাকেই সত্য বলে মনে করি। জাগ্রত অবস্থায় আমরা যা কিছু দেখি শুনি তাই আমাদের মনকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাপৃত করে রাখে। স্বপ্নাবস্থায় আমরা যা দেখি স্বপ্ন চলা কালে আমাদের কাছে তা সত্য বলে মনে হয়। এ সবই অনুভূতি বা ‘দর্শন’, তবে সেগুলি সবই সত্য বলে যেন মনে না করি। তাই সমস্যা হচ্ছে ভ্রান্ত ও যথার্থ অনুভূতির পার্থক্য নির্ণয় করা। ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রে বৈধ অনুভূতির ব্যাপারে বিচারের আদর্শ কি হবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। জড় বিজ্ঞানী বস্তুজগতে নিহিত সত্যের সন্ধানে আগ্রহী। তিনিও যে সকল ঘটনা অনুভব করেন তা পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বারা যাচাই করেন। মনোবিজ্ঞানীরও নিজস্ব ‘দর্শন’ আছে। তিনি অন্তর্দৃষ্টির সহায়ে চিন্তাধারা যে নিয়মে চলে তা প্রকাশ করতে সমর্থ হন। অধ্যাত্ম-জিজ্ঞাসু চান ঈশ্বর বা চরম সত্যকে সরাসরি অনুভব করতে, একেই বলে অপরোক্ষানুভূতি।
ইন্দ্রিয়জ্ঞানের বিষয়ে অত্যধিক চিন্তা করি। মনে করি এই বাহ্য জগৎকে প্রত্যক্ষভাবেই উপলব্ধি করছি। তা নয়। বাইরের বস্তু থেকে উদ্দীপনা আসে চোখে। সেখান থেকে খবর বাহিত হয় মনে, আত্মায়, যিনি প্রকৃত জ্ঞাতা। এক পরোক্ষ পদ্ধতি! অথচ একেই আমরা অপরোক্ষ অনুভূতি বলে মেনে নিতে অভ্যস্ত। প্রকৃত সরাসরি অনুভূতি বা অপরোক্ষানুভূতিতে সরাসরি প্রকাশ পায় আত্মজ্যোতিতে। এই অন্তর্জ্যোতিঃ মন ও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই প্রকাশিত হন। ইনি স্বয়ং প্রকাশও বটে। ইহাই জ্ঞানাতীত অবস্থা। কখনো একে ‘তুরীয়’ বলে অভিহিত করা হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা সাধারণতঃ ‘জাগ্রৎ’, ‘স্বপ্ন’ ও ‘সুষুপ্তি’—এই তিন অবস্থার জ্ঞানের মাধ্যমে লাভ হয়। এই তিন অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, চতুর্থ অবস্থা একটি আছে, যাকে বলা হয় ‘তুরীয়’। অন্য তিন অবস্থার মতো এটি অবশ্য একটি অবস্থা নয়। এ হলো অতীন্দ্রিয় জ্ঞান বা চৈতন্য স্বরূপ! এই চৈতন্যের আংশিক প্রকাশ ঘটে ঐ তিন অবস্থায়। ঐ অবস্থায় জীবাত্মার উপলব্ধি হয় যে, সে পরমাত্মারই অংশ।
বিভিন্ন গ্রন্থ পড়ে আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করা উচিত নয়। তথ্য জানবার জন্য আমাদের পড়ার প্রয়োজনীয়তা আছে, কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও জানতে হবে যে, কোন্ ভাবাদর্শগুলি আমাদের গ্রহণ করতে হবে এবং কোন্গুলি বর্জন করতে হবে। আধ্যাত্মিক সাধনা সংক্রান্ত নানা ধর্মগ্রন্থ আমরা পড়লেও যে সকল কথা আমাদের পক্ষে কল্যাণকর সেগুলি পূর্বেই জেনে না নিয়ে ঐ সকল গ্রন্থের নির্দেশ অনুযায়ী আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্রতী হওয়া উচিত নয়।