ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
সাধন-ভজনের দ্বারা যেসব উপলব্ধি বা দর্শনাদি হবে তা গুরু ছাড়া আর কাকেও বলবে না। তোমার আধ্যাত্মিক সম্পদ—তোমার অন্তরতম চিন্তাধারা—নিজের অন্তরে লুকিয়ে রাখবে। তা অপরের কাছে প্রকাশ করবে না। উহা তোমার পবিত্র গুপ্তধন, একমাত্র ভগবানের সঙ্গে একান্তে উপভোগ্য বস্তু। সেইরকম আবার তোমার দোষ, ত্রুটি ও অনাচারের কথা অপরের কাছে বলে বেড়াবে না। তাতে আত্মসম্ভ্রম খোয়াবে ও অপরের কাছে হীন বলে প্রতিপন্ন হবে। নিজের দোষ, দুর্বলতা ভগবানকে জানাবে ও তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে যেন তিনি সেগুলি শোধরাবার শক্তি দেন।
ধ্যান করতে বসে প্রথমে খানিকক্ষণ স্থির হয়ে বসে মন যেখানে যেতে চায় যেতে দাও। ভাববে, আমি সাক্ষী, দ্রষ্টা। বসে বসে মনের ভাসা-ডোবা, দৌড়ঝাঁপ দেখ, লক্ষ্য কর। ভাববে, আমি দেহ নই, ইন্দ্রিয় নই, মন নই, আমি মন হতে সম্পূর্ণ পৃথক। মনও জড়, জড়েরই একটা সূক্ষ্ম অবস্থা। আমি আত্মা, প্রভু, মন আমার দাস। যখনই কোন বাজে চিন্তা মনে উঠবে, তখনই সেটাকে জোর করে দাবিয়ে দেবার চেষ্টা করবে।
সাধারণতঃ বিশ্রামের সময় বাঁ নাক দিয়ে নিঃশ্বাস পড়ে, কাজের সময় ডান নাক দিয়ে পড়ে, ধ্যানের সময় দু-নাক দিয়ে পড়ে। যখন দেহ মন শান্ত হয়ে আসবে আর দু-নাক দিয়ে সমানভাবে নিঃশ্বাস পড়বে, তখন বুঝবে ঠিক ঠিক ধ্যানের অনুকূল অবস্থা হয়েছে। তবে দেখবার জন্যে নিঃশ্বাসের দিকে অত নজর দেবে না, অথবা এইটিকে মাপ-কাঠি করে কর্ম নিয়ন্ত্রণ করবে না। মন স্থির হলে বায়ু স্থির হয়—কুম্ভক হয়। আবার বায়ু স্থির হলেই মন একাগ্র হয়। ভক্তিতেও কুম্ভক আপনি হয়—বায়ু স্থির হয়ে যায়। হৃদয়ের ব্যাকুলতার সহিত স্মরণ-মনন ও মন্ত্রজপ করলে প্রাণায়াম আপনা হতেই হয়।অভ্যাস ও বৈরাগ্য ছাড়া মনের একাগ্রতা আনবার অন্য কোনও সুগম বা সহজ উপায় নেই।
যতক্ষণই জপধ্যান কর—তা ১০/১৫ মিনিটও কর সেও ভাল, কিন্তু সেটুকু প্রাণমন ঢেলে দিয়ে করবে। তিনি অন্তর্যামী, ভেতর দেখেন, তিনি তো আর কতটুকু সময় ধ্যান করলে বা কতবার জপ করলে তা দেখবেন না।
প্রথম প্রথম জপধ্যান নীরসই লাগে, তবু ওষুধ গেলার মতো করে যাবে। ৩/৪ বৎসর নিষ্ঠার সহিত করলে তবে আনন্দ পাবে। তখন একদিন না করলে ভারি কষ্ট হবে, কিছু ভাল লাগবে না।
আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে হলে পুরুষকার দরকার। আমি নিজের চেষ্টায় সাধন-ভজন করে ভগবান লাভ করব, এই দৃঢ় সঙ্কল্প করে নিষ্ঠার সহিত ৩/৪ বৎসর রোজ অন্ততঃ সকাল ও সন্ধ্যায় প্রত্যেক বারে দু-ঘণ্টা করে আসনে বসে জপধ্যান করে যাও দেখি।
সংসারীর পক্ষে বেশি প্রাণায়াম করা ভাল নয়। যারা বেশি প্রাণায়াম করতে ইচ্ছুক, তাদের যথাসময়ে পরিমিত পুষ্টিকর সাত্ত্বিক আহার, নিয়মিত কার্যকলাপ, উদ্বেগশূন্য জীবন, স্বাস্থ্যকর নির্জন স্থান, বিশুদ্ধ বায়ু, কোষ্ঠ পরিষ্কার, স্বল্পভাষী হওয়া—এসব চাই। আর সর্বোপরি ঠিক ঠিক ব্রহ্মচর্য রক্ষা করা চাই। এসবের ব্যতিক্রম হলে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কের রোগ হবার সম্ভাবনা।
জপধ্যান করতে করতে যখন মন স্থির হবে, শুদ্ধ হবে, তখন মনই তোমার গুরু হবে, অন্তর হতেই সকল বিষয় বুঝতে পারবে, সংশয় ও প্রশ্নের সমাধান পাবে। তোমাকে পর পর যা করতে হবে, কীভাবে চলতে হবে, মনই সব বলে দেবে।
স্বামী বিরজানন্দের ‘পরমার্থ-প্রসঙ্গ’ থেকে