সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
মানুষ কিছুই করতে পারে না, কোন জীবিত প্রাণীই কিছু করতে পারে না পরমপুরুষের সমর্থন না থাকলে। অর্থাৎ যখন মানুষের ইচ্ছা পরমপুরুষের ইচ্ছার সঙ্গে মিলে যায়, কেবল তখনই মানুষের ইচ্ছা ফলপ্রসূ হয়, নইলে মানুষের ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। যখন জীবের বাসনা আর কৃষ্ণের ইচ্ছা এক হয়, তখনই সে ইচ্ছায় ফল ফলে, নচেৎ তা নির্ঘাত ব্যর্থ হয়। ‘প্রপত্তি’ শব্দের এইটাই মর্মার্থ, এইটাই প্রকৃত ভাবনির্যাস।
ভক্তিবাদ তত্ত্বটা পুরোপুরি এই প্রপত্তির ওপরেই আধারিত। জ্ঞানবাদ জিনিসটা প্রপত্তিকে সমর্থন করে না, ভক্তিবাদ কিন্তু ষোল আনা এই প্রপত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ হয়তো প্রপত্তিবাদের বাস্তবতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। জ্ঞানী হয়তো বলতে পারেন, যদি সব কিছু পরমপুরুষের ইচ্ছায় বা সংকল্পেই হয়ে থাকে, তাহলে মানুষের বৈয়ষ্টিক প্রচেষ্টার দরকারই বা কী? জ্ঞানী হয়তো ভাবতে পারেন—ভক্তের পক্ষে এটা একটা দুরূহ প্রশ্ন, ভক্ত বোধ হয় এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারবেন না। কিন্তু জান তো, যদিও জ্ঞানমার্গীরা ভেবে থাকেন যে তাঁরা সবচেয়ে জ্ঞানী বা অতি বুদ্ধিমান আসলে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়, ভক্তরাই জ্ঞানমার্গীদের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান। আর যে মানুষটা ভাবে যে সে জ্ঞানী, আমি তো বলব, সে-ই হ’ল সবচেয়ে মূর্খ। আমি আগেই বলেছি, একজন তথাকথিত জ্ঞানী একটা অতি সামান্য তৃণখণ্ডকেও নাড়াতে পারবে না কিন্তু যে মানুষটা ভক্ত, যে ভগবানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে চলে সে তা পারবে। এখানেই ভক্তের শ্রেষ্ঠত্ব। আসল ব্যাপারটা হ’ল এই যে মানুষের যোগ্যতা, মানুষের শক্তি-সামর্থ্য, কর্মনৈপুণ্য প্রায় কিছুই নেই বললেই চলে। সত্যি কথা বলতে কি, মানুষের নিজের বলে কিছুই নেই। তার যা কিছু সবই সে পেয়ে থাকে পরমপুরুষের কাছ থেকে।
দেখ না, মানুষ যদি একনাগাড়ে মাত্র তিন/চার দিন না খেয়ে থাকে অথবা ধর তিন/চার/পাঁচ বছর ধরে—তাহলে তার ভৌতিক অস্তিত্বটার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তার নড়ন-চড়নও বন্ধ হয়ে যাবে...কথা বলবার শক্তিও রহিত হয়ে যাবে। তাহলেই বোঝ, মানুষের নিজের বলে আছেটা কী! ভক্ত জানে, তার যা কিছু সবই ভগবানের; এমনকি সে নিজেও তো পরমপুরুষেরই সম্পত্তি। তাই ভক্তের প্রথম কথাই হ’ল—মানুষ নিজের চেষ্টায় কিছুই করতে পারে না। জাগতিক জ্ঞান, বৈষয়িক বুদ্ধি, তথাকথিত মানবীয় বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞানগরিমা—এসবের বাস্তব মূল্য কতটুকু। এ ধরনের জ্ঞানকে বলে প্রাপ্ত বাক্য অর্থাৎ যে জ্ঞানটা বিভিন্ন পার্থিব মানুষের মাধ্যমে, জাগতিক সত্তার অভিব্যক্তির মাধ্যমে এসে থাকে।
শ্রীশ্রীআনন্দ মূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্’ থেকে