সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
প্রশ্ন হল, কেন অযোধ্যায় এই হাল হল? আসলে মন্দিরকে কেন্দ্র করে অযোধ্যায় এক অত্যাধুনিক শহরের জন্ম হয়েছে। গোটা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে রামমন্দিরের বিশেষ আকর্ষণের কথা ভেবে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে কোনও ফাঁক রাখেনি মোদি ও যোগী সরকার। কিন্তু এসব করতে গিয়েই অযোধ্যাবাসীকে উপেক্ষা করা হয়েছে নির্মমভাবে। তাঁরা স্পষ্টত অবিচারের শিকার হয়েছেন। মন্দিরের যাতায়াতের জন্য রামপথ সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মাণে যে হাজার হাজার একর জমি নেওয়া হয়েছে তার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ছিল। অভিযোগ ছিল, স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, কালভার্ট, সেতু, ব্যবসাক্ষেত্র, গুদাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন নির্মাণও কেমন অনায়াসে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে তা দেখেছেন অযোধ্যার মানুষ। এই অত্যাচার ও অবিচারের জবাব মিলেছে ইভিএমের বাক্সে। বিজেপি নিশ্চিত ছিল, মন্দিরের আবেগে ঢাকা পড়ে যাবে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের হাহাকার। তা হয়নি। এর পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থীর দেওয়া বিবৃতিতেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন দলিত মানুষ। তিনি বলেছিলেন, সংবিধান পরিবর্তন করতে ৪০০ আসন দরকার। ঘরপোড়া দলিতদের মনে হয়েছিল, সংবিধান বদলালে তাঁদের সংরক্ষণে হাত পড়বে। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাততলা মন্দির তৈরির আনন্দে ঘরের মানুষদের এই দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার কথা শুনতে পাননি বিজেপির নেতারা। ফল পেয়েছেন হাতেনাতে।
শুধু হিন্দুত্বের আবেগে সান দেওয়ার প্রশ্নেই নয়, রামমন্দিরের হাওয়া যে অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে তার প্রমাণ ব্যবসাক্ষেত্রও। মন্দির উদ্বোধন করে বিজেপি নেতারা প্রচার করেছিলেন, এখানে রোজ লক্ষ লক্ষ পর্যটক আসবেন। ফলে স্থানীয় ভিত্তিতে ব্যবসার রমরমা হবে এবং দু’হাতে কাজ জুটবে। মন্দির নির্মাণের চারমাস পরে দেখা যাচ্ছে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে পৌনে দু’লক্ষ থেকে সোয়া দু’লক্ষ পর্যটক গিয়েছিলেন অযোধ্যায়। সেই সংখ্যা এখন ৫০ থেকে ৮০ হাজারে নেমেছে। পর্যাপ্ত যাত্রী না মেলায় এক বেসরকারি বিমান সংস্থা তাদের অযোধ্যা-হায়দরাবাদ বিমান পরিষেবা ১ জুন থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য এক বিমান সংস্থা ১৫ জুলাই থেকে কলকাতা-অযোধ্যা বিমান পরিষেবা বন্ধ করার কথা জানিয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর অযোধ্যায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মহাঋষি বাল্মীকির নামে এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর প্রায় ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও সেখানকার প্রতিদিনের প্যাসেঞ্জার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি মাত্র ২৫০! একইভাবে যাত্রী সংখ্যা না বাড়ায় প্রতিশ্রুতি থাকলেও ট্রেনের সংখ্যাও বাড়েনি। শুধু পর্যটক কমে যাওয়া নয়, অযোধ্যায় তাঁদের থাকার ব্যবস্থাও যথেষ্ট অপ্রতুল। এ পর্যন্ত মোট ১৭টি হোটেলে ৬০০-র মতো ঘর রয়েছে পর্যটকদের জন্য। আরও ৭৩টি হোটেল নাকি তৈরি হচ্ছে। মোদির কথামতো অযোধ্যাবাসীর আর্থিক হাল কিন্তু ফেরেনি। দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চে একজন টোটো চালিয়ে উপার্জন করতেন রোজ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। এখন সেটা নেমে এসেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। একইভাবে পণ্য থেকে খাদ্যসামগ্রীর বিক্রিবাটাও তলানিতে ঠেকেছে। তার মানে অযোধ্যার অসমাপ্ত মন্দিরে তড়িঘড়ি রামলালাকে বসিয়েও লাভ হয়নি গেরুয়া শিবিরের। বরং বলা যায়, তাদের পথে বসিয়েছে অযোধ্যা।