সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
গুজরাতের ভূমিপুত্র হলেও নরেন্দ্র মোদি লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে। তাঁর কেন্দ্র বলে মন্দির শহর বারাণসীর ভোল বদলে গিয়েছে গত দশ বছরে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সংস্কার, মন্দিরের সামনে তৈরি নমো ঘাট— সব মিলিয়ে হিন্দুদের এই তীর্থক্ষেত্রের পরিকাঠামো যেন এক জাদুর ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছে। এমন কেন্দ্রে রাজনৈতিক ওজনে কংগ্রেস প্রার্থী তাঁর ধারেকাছেও আসেন না। তাই এমন প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেলায় ৭ লক্ষ ভোটে হারিয়ে রেকর্ড করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অথচ যে কেন্দ্র থেকে গতবার মোদি জিতেছিলেন প্রায় ৫ লক্ষ ভোটে, এবারে সেখানে তাঁর জয়ের ব্যবধান ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৩ ভোট! অর্থাৎ মোদির জয়ের মার্জিন অনেক কমেছে। ভোট ব্যাঙ্কে এই ধাক্কা তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মাকে কি ড্যামেজ করল না? অঙ্কের হিসেবে তিনি জয়ী হলেও আসলে কি এটা প্রবল প্রতাপান্বিত মোদির জয় হল? বারাণসীর মতোই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির আর এক কেন্দ্রস্থল হল অযোধ্যা। জানুয়ারিতে এই শহরে নবনির্মিত অযোধ্যা মন্দিরে রামলালার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে আবেগের ঝড় তুলেছিলেন মোদি সহ আরএসএস, বিজেপি। সেই অযোধ্যাতেই পরাজিত হয়েছেন পদ্মপ্রার্থী! ফৈজাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত অযোধ্যা। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ৫০ হাজার ভোটে জিতে মোদির অহঙ্কারকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। গোবলয়ের শক্ত ঘাঁটি এই দুটি কেন্দ্রের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে, বিভাজনের রাজনীতি ও মোদির ‘ঈশ্বরের দূত’ হওয়ার প্রচার লোকে ভালোভাবে নেয়নি।
শুধু নিজের কেন্দ্রে সম্মান খুইয়ে জয়ই নয়, বিজেপির সব প্রার্থী যাঁকে ভোটে জেতার ‘মুশকিল আসান’ ভেবেছিলেন, গেরুয়া শিবিরের সেই এক নম্বর স্টার ক্যাম্পেনার মোদি তাঁদের অনেককে পথে বসিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১৬ মার্চ নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকে ৩০ মে প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে মোট ১৬৪টি জনসভা-পদযাত্রা করেছেন মোদি। এর মধ্যে ৭৭টি আসনে হেরে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। বাংলায় কমপক্ষে ৩০টি আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমে ৯১ দিনে ২৪টি জনসভা ও একটি রোড শো করেছিলেন গেরুয়া শিবিরের এই স্টার ক্যাম্পেনার। দেখা যাচ্ছে, মোদির সভা করে যাওয়া অধিকাংশ আসনে হেরেছেন বিজেপি প্রার্থীরা। ভোট ঘোষণার আগে-পরে দুটি করে সভা করেছেন এমন তিনটি কেন্দ্র হল বারাসত, আরামবাগ ও কৃষ্ণনগর। এই তিন কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীদেরও জেতাতে পারেননি মোদি। এমনকী এবারের ভোটে গতবারের জেতা আসনও হারিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। শুধু হারজিতের অঙ্ক নয়, দলের মধ্যেও জয়ের ব্যবধানে বহু নবনির্বাচিত এম-পির থেকে পিছিয়ে পড়েছেন বিজেপির এই ‘সেরা ছাত্র’! বিজেপির যে ২৪০ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন তার মধ্যে ১১৫ জনের জয়ের ব্যবধান মোদির চেয়ে বেশি। ‘এক’ নম্বরের স্থান হয়েছে ১১৬ নম্বরে। তাঁর তুলনায় অনেক প্রথমবার হওয়া সাংসদ ও প্রভাবহীন প্রার্থীও মোদির চেয়ে বেশি ভোটে জিতেছেন। আসলে তিনি হতে চেয়েছিলেন ‘সুপার হিট’। হয়েছেন কার্যত ‘সুপার ফ্লপ’। এখন দেখার, ধরা পড়ে যাওয়া ফোলানো-ফাঁপানো যোগ্যতা নিয়ে তিনি কতদিন এনডিএ নামক জোট সরকার চালাতে পারেন।