সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
তবে আমাদের দেশের রাজনীতির বহু চরিত্রও এমন গুলবাজ গল্পকথকের ভিড়ে দিব্য বিচরণ করেন। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন তাঁরা ‘দেশনেতা’র মতো গণ্যমান্য ব্যক্তি হন। সব জেনেবুঝেও আম পাবলিক তাদের মুখের উপর কিছু বলার সুযোগ পায় না, কিন্তু রোয়াকের আড্ডা থেকে টক শো সর্বত্র উদুম হাসাহাসি চলে। এই ধরনের রাজনৈতিক দাবিকে উদ্দিষ্ট নেতার বিরোধীরা ‘জুমলা’ বিশেষণে বিঁধে থাকে। ভাবতে খারাপ লাগে, ভারত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীও নিজেকে এই স্তরে নামিয়ে এনেছেন! নরেন্দ্র মোদির একাধিক অবাস্তব দাবিকে অনেকদিন আগে থেকেই ‘জুমলা’ দেগে দিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো বিরোধীরা। সবচেয়ে হাসির খোরাক হয়েছে তাঁর অন্তত দুটি দাবি—মোদি সরকার বছরে ২ কোটি নতুন চাকরি দেবে এবং প্রত্যেক ভারতীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করবে ১৫ লক্ষ টাকা! এছাড়া গ্যারান্টি রয়েছে—সবার জন্য বাড়ি, সব বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, সবার জন্য উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা এবং ক্ষুধাশূন্য ভারত নির্মাণের। কৃষকের আয় দ্রুত দ্বিগুণ, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি, আচ্ছে দিন এবং অমৃতকাল উপহার দেওয়ারও অঙ্গীকার শোনা গিয়েছে একাধিক বার শ্রীমোদির মুখে। এই খতিয়ানকে সামনে রেখে তিনি ‘বিশ্বগুরু’র আসন অলংকৃত করারও স্বপ্ন দেখেন।
কিন্তু বাস্তবটা মোদিজির চেয়ে ভালো কারও জানার কথা নয়, কারণ তাঁর দাবি অনুসারে, তিনি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি, বেড়ে উঠেছেন দারিদ্র্য আর দুর্দশাকে সঙ্গী করেই। তাই প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনে মনে হয়, তাঁর রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়তো সত্যভাষণে তাঁকে বাধা দেয়। তাই তিনি অহরহ এমন কিছু ‘সংকল্প’ করেন এবং ‘গ্যারান্টি’ দেন, সর্বোপরি ‘সরকারি তথ্যের’ নামে যেসব পরিসংখ্যান পরিবেশন করেন, তার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! তাঁর এমন কীর্তিগাথায় সর্বশেষ সংযোজন—’দেশে দৈনিক দুটি করে কলেজ স্থাপন!’ তাঁর এক দশকের ‘অত্যাশ্চর্য উন্নয়নমুখী’ শাসনকালের ফিরিস্তি দিতে গিয়েই তিনি এই কাণ্ড করে বসেছেন। বলা বাহুল্য, এই প্রসঙ্গে তাঁর দেওয়া তথ্যের সঙ্গে তাঁরই সরকারের তরফে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের ফারাক বিস্তর! রাজনীতি কিংবা সরকারের শীর্ষ পদে তিনি আনকোরা নন, যথেষ্ট অভিজ্ঞ বা পোড়-খাওয়া এক ব্যক্তিত্ব। তাই এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই যে, তিনি এসব মুখ ফসকে বলে ফেলেন। বরং এটাই আসল কথা যে, তিনি সবই বলে চলেছেন রীতিমতো অঙ্ক কষে। কিন্তু এমন অবান্তর তথ্য, পরিসংখ্যান, দাবি, গ্যারান্টি প্রভৃতি তাঁকেই পরিবেশন করতে হতে পারে, যাঁর সত্যের ঝুলিটা একেবারেই ফাঁকা! যাঁর হাঁড়ির হাল বাস্তবে এতটাই করুণ, ১৪৪ কোটি মানুষের দেশে অন্তত প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁকে কোনোভাবেই শোভা দেয় না। মোদি বার বার নিজের ভাবমূর্তি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের গরিমা নষ্ট করছেন। এবার অন্তত তাঁর থামা দরকার।