সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
এই ‘গ্যারান্টির’ কথা বলাতেই উঠে আসে ভোটে জিততে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিশ্রুতির ‘গ্যারান্টি’র কথা। এর পোশাকি নাম রাজনৈতিক ইস্তাহার। ভোটে জিতলে জনগণের জন্য পাঁচ বছরের সময়কালে তারা কী কী কাজ করবে ছাপার অক্ষরে মূলত সেকথা জানিয়ে দেওয়া হয় ইস্তাহারে। তাই ইস্তাহার প্রকাশ একরকম রাজনৈতিক দলের অধিকারের মধ্যে পড়ে। তবে যাঁদের জন্য ভোটের বাজারে প্রতিশ্রুতির ডালি সাজিয়ে দেওয়া হয় মুদ্রিত অক্ষরে, সেই ভোটার-জনতার কতজন সঠিকভাবে ইস্তাহারের কথা জানেন, কতজন ইস্তাহারটি পড়ে দেখেন, তা নিয়ে জাতীয় স্তরে বিতর্ক সভা হতে পারে। কিন্তু যা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই তা হল, প্রতিশ্রুতিভঙ্গের ইতিহাস। একটা উদাহরণই যথেষ্ট। ‘রোটি-কাপড়া-মকান’। সোজা বাংলায় অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান। স্বাধীন ভারতে ২০২৪-এর আগে পর্যন্ত ১৭টি সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। ঘটনা হল, জীবনধারণের এই ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সোচ্চারে গলার শিরা ফুলিয়ে প্রতিটি নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক পরেও এদেশের গরিব-মধ্যবিত্তসহ সিংহভাগ মানুষকে সেই একইরকম স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটের ‘ডিভিডেন্ড’ পেতে আজও তৎপর প্রায় সব রাজনৈতিক দল! জনগণও সেই তিমিরেই। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, বিশ্বাসভঙ্গের সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। তবু মানুষ ভালো কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আশায় ভর করে তার মূল্যবান গণতান্ত্রিক অধিকারটুকু প্রয়োগ করে ভোটযন্ত্রে।
এক ঝকঝকে সকালের স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কী? এই ভোটেও এক পক্ষ জিতবে, অন্য পক্ষ বসবে বিরোধী আসনে। গণতন্ত্রের এটাই নিয়ম। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, একবার সরকার গঠন হয়ে গেলে তা হবে গোটা দেশের জন্য, গোটা দেশের মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য। এ তথ্য এখন সকলেরই জানা যে, গত দশ বছরের মোদি জমানায় দেশে ধনী দরিদ্রের মধ্যে অসাম্য বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কোপে দু’বেলা অন্ন জোটাতে পারছে না বহু পরিবার। দেশের শিক্ষিত যুবসমাজের একটা বড় অংশ বেকার। শিক্ষার অ-আ-ক-খ এখনও পৌঁছয়নি বহু ঘরে। ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা আজও একটা বড় অংশের কাছে যেন বিলাসিতা। একটা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করা কি খুব কঠিন? নাকি এ মানুষের অন্যায্য দাবি? তা কখনওই নয়। তাই এখনও বহু মানুষের মনে যে প্রশ্নটা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, তা হল, তবে কি এবারও মানুষের এই দাবিগুলি শুধু ইস্তাহারের পাতায় থেকে যাবে? আবারও কি ‘ট্র্যাডিশন’ মেনে এই চাহিদাগুলির কথাই অন্য নামে, অন্য ভাষায় লেখা হবে আগামী নির্বাচনের ইস্তাহারে? নাকি প্রতিশ্রুতিভঙ্গের ধারাবাহিকতা ভেঙে নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখাবেন দেশের নতুন রাষ্ট্রনায়ক? পরিস্থিতি যা তাতে দেশের বেশিরভাগ মানুষ নিশ্চয়ই সাতমহলা চায় না, সেভাবে রঙিন জীবনের কথা ভাবেও না। তারা চায় কাজ। খেয়ে-পরে নিশ্চিন্ত জীবন। ফল ঘোষণার পর লোকসভার ‘হট সিটের’ নতুন অতিথি যদি সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চাহিদাটুকু পূরণ করতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই আগামী দিনে তাঁকে আর ভোটের জন্য হাতজোড় করে ‘ভোট ভিক্ষা’ চাইতে হবে না। এ ‘গ্যারান্টি’ কোনও দাম্ভিক শাসকের নয়, আম জনতার মনের কথা।