সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভায় মহিলা সাংসদ ছিলেন মাত্র ২২ জন (৪.৪১ শতাংশ)। ৭২ বছর পর ১৮তম লোকসভায় ধারে ও ভারে মহিলা সাংসদের সংখ্যা অনেকটা বাড়লেও তা এক তৃতীয়াংশের ধারেকাছে নয়। মোদি জমানায় ২০১৪ সালে মহিলা সাংসদ ছিলেন ৬২ জন (১১.৪২ শতাংশ) ২০১৯-এ ৭৮ জন (১৪.৩৬ শতাংশ)। এবার তা কমে হয়েছে ৭৪ জন (১৩.৬৩ শতাংশ)। এটা স্বাভাবিক যে, সংসদে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়াতে গেলে তাঁদের অনেক বেশি সংখ্যায় ভোটে প্রার্থী করতে হবে। এখানেই যেন অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল। এবারে যেমন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ হাজার ৩৬০ জন। কিন্তু এর মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম মহিলা প্রার্থী। রাজনৈতিক দলগুলির তরফে মহিলা প্রার্থী দেওয়ার হারও তথৈবচ। অন্যদিকে, বিজেপির ২৪০ জন জয়ী প্রার্থীর মধ্যে মহিলা হলেন ৩১ জন (১২.৯২ শতাংশ)। কংগ্রেসের ৯৯ জন জয়ী প্রার্থীর মধ্যে জিতেছেন ১৪ জন (১৩.১৩ শতাংশ) মহিলা। তবে মহিলা প্রার্থীর জয়ের হারে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল সমাজবাদী পার্টির (১৪ শতাংশ), ডিএমকের ১৪ শতাংশ, জনতা দল ইউনাইটেড (১৭ শতাংশ), তেলগু দেশমকে (৬ শতাংশ) ছাপিয়ে গিয়েছে বঙ্গে মমতার দল। তৃণমূল একমাত্র ব্যতিক্রমী দল। বাংলায় তাদের ২৯ জন জয়ী প্রার্থীর মধ্যে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ১১। শতাংশের হারে যা প্রায় ৩৮ শতাংশ। যা উল্লেখযোগ্য। সব মিলিয়ে এবার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ৭৪ জন মহিলা। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মন্ত্রী হয়েছেন। এরমধ্যে আবার যে সাতজন মন্ত্রী হলেন তার মধ্যে পাঁচজন বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছেন।
ভারতে মোট জনসংখ্যায় মহিলাদের অনুপাতের মতোই লোকসভায় যে ৬৪.২০ কোটি নাগরিক ভোট দিয়েছেন, তার অর্ধেকই মহিলা ছিলেন। এবার মহিলা ভোটারের সংখ্যাও বেড়েছিল। মহিলা ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে মূলত হেঁশেল সামলাতে অভ্যস্ত গরিব মহিলাদের উজ্জ্বলা প্রকল্পে বিনা পয়সায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়া থেকে লাখপতি দিদি তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মোদি। নারীশক্তির ক্ষমতায়ন তাঁর পাখির চোখ বলে শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর আড়াই মাসের প্রচারে। মহিলাদের এই ‘বাড়তি’ গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে ভোট বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা ছিল, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে এককভাবে ৩০৩টি আসন পেতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন মহিলারা। সেই বিবেচনা থেকেই গত বছর সংবিধানের ১০৮তম সংশোধন করে লোকসভা ও বিধানসভায় এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের বিল পাস করে মোদি সরকার। তার আগে রাষ্ট্রপতি হন একজন মহিলা। এসব দেখে মনে হয়েছিল এবার অন্তত এক তৃতীয়াংশ না হলেও অনেক বেশি সংখ্যক মহিলাকে প্রার্থী করবে বিজেপি। বাস্তবে দেখা গেল, শাসকদলের টিকিট পেয়েছেন মাত্র ৬৯ জন মহিলা, তাঁদের মধ্যে জিতেছেন ৩১ জন, মন্ত্রী হলেন ৫ জন। অর্থাৎ মুখেই কেবল নারীশক্তির জয়গান! অথচ গোটা বিশ্বে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের সাফল্য উত্থান প্রায় রকেট গতিতে এগচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নিচ্ছেন মহিলারা। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নরেন্দ্র মোদি সেই পথে হাঁটলেন না। এর ফল হল, তাঁর দশ বছরের শাসনের পরেও সংসদীয় রাজনীতিতে মহিলারা সেই কাব্যে উপেক্ষিতাই থেকে গেলেন। গোটা বিশ্ব দেখল, সংসদে মহিলা প্রতিনিধির হিসেবে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয়েছে ১৪২-এ। এ লজ্জা ঢাকার নয়।