সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
তার মধ্যেই শনিবার শেষ হল দেশজুড়ে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোটগ্রহণ। গণতন্ত্রের এই সর্ববৃহৎ উৎসবে প্রায় ৯৭ কোটি ভারতবাসীর সর্বতোভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান ছিল। অন্যবারের তুলনায় এবার ভোটপ্রদানের হার অল্প কিছু কম হলেও নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই ভোট দিয়েছেন বহু কোটি মানুষ। একটা কথা খেয়াল করার এই যে, দেশের সকলে নিজ এলাকায়, এমনকী নিজ রাজ্যেও কাজের সুযোগ পান না। জীবিকার প্রয়োজনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভিন রাজ্যে এবং নানা দেশে ছুটে যেতে হয়। ভারতের গণতন্ত্রকে যাঁরা ভালোবাসেন, যাঁরা এদেশের সত্যিই উন্নয়ন চান, তাঁরা অনেক সমস্যা উপেক্ষা করে এবং বিপুল অর্থ খরচ করে শুধু ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্যেই বাড়ি ফিরেছেন। বহু মানুষ আছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী কিংবা অতিবৃদ্ধ অথবা অসুস্থ। ভোটের লাইনে এই ধরনের নরনারীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় উপস্থিতি গণতন্ত্রকে বাড়তি ভরসা জুগিয়েছে। এছাড়া ভোট চলাকালে একাধিক রাজ্যে গণ্ডগোল এবং হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটে গিয়েছে কিছু। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, উনিশের সাধারণ নির্বাচনে ভারত ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছিল। মাত্র পাঁচ বছর বাদে, এবার সেই ব্যয়ের বহর দ্বিগুণ হতে চলেছে। অর্থাৎ এবার ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ শুধু নির্বাচনের জন্য খরচ করছে অন্তত এক লক্ষ কোটি টাকা! পৃথিবীর যেকোনও ধনী দেশও, শুধু ভোটের জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের কথা ভাবতেও ভয় পাবে।
তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে এই যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল, তার মাধ্যমে যেন একটি সত্যিকারের জনগণের সরকার তৈরি করা সম্ভব হয়। দেশবাসী তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। গণনায় এবং ফলাফলে যেন তারই হুবহু প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই, রেজাল্ট যেন বিকৃত না-হয়ে যায় কোনোভাবেই। নির্বাচনী দুর্নীতি-জালিয়াতি এদেশে নতুন কোনও প্রবণতা নয়। ভয়টা, তাই সেখানেই। ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে ১৯ এপ্রিল এবং শেষ হল ১ জুন। ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা আগামী কাল, ৪ জুন, মঙ্গলবার। অর্থাৎ ভোটপ্রদানের পর ভোটযন্ত্রগুলি দফায় দফায় মোট দেড় মাস সুরক্ষিত রাখাটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভারতের নির্বাচন কমিশনকে এই বৃহত্তম চ্যালেঞ্জে জয়ী হতেই হবে। আশা করা যায়, স্ট্রংরুম এবং গণনাকেন্দ্র, গণনা কর্মী, প্রার্থী প্রভৃতি সকলেরই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কমিশন সেরা পদক্ষেপই করেছে। তাদের এই সাফল্যের উপরেই নির্ভর করছে আমরা ভারতবাসীরা আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রকৃত জনগণের একটি নির্বাচিত সরকার পাব কি না। মানুষের স্বার্থে, মানুষের তৈরি একটি নীতিনিষ্ঠ সরকার ছাড়া এই দেশকে আগামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।