সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
এবার দেখা গেল, কিছু ক্ষেত্রে পাঁক এড়িয়েই পদ্মচয়নের কৌশল নিয়েছিল মোদি-শাহের পার্টি। সুরাতের মতো অত্যন্ত ‘নিরাপদ’ আসনেও ১৬.৫৬ লক্ষ ভোটারকে ভোটের লাইনে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি। প্রেস্টিজিয়াস ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’টি বিজেপির দখলে ১৯৮৯ থেকে। সেখানেও ঘি তোলা হল বাঁকা আঙুলে! সারা দেশ দেখল—ভোটগ্রহণের অনেক আগেই আসনটি চলে গেল বিজেপির ঝুলিতে! স্ক্রুটিনিতে বাতিল হয় কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়ন। ‘হাত’-এর ‘ডামি’ প্রার্থীর লড়াইয়ের সুযোগও খারিজ করে দেন রিটার্নিং অফিসার। বিজেপির বিরুদ্ধে বাকি ছিলেন বিএসপি এবং নির্দল-সহ আটজন। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে, মনোনয়ন ‘প্রত্যাহার’ করে নেন তাঁরাও! অমনি বিজেপির মুকেশ দালালকেই ‘বিজয়ী’ ঘোষণা করা হয়। তাঁকে দ্রুত অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি। এমনকী, ‘প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম পদ্মটি সুরাতই তুলে দিল’ জানিয়ে আহ্লাদ প্রকাশ করেন দলের রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্ব। এ এক বেনজির দৃষ্টান্ত। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ছক কষেছিলেন অমিত শাহও? কারণ, গান্ধীনগরেও দেখা গিয়েছে, সুরাতের মতো বিরোধী প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর ঢল। সরকারের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’-এর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ ন’জনের মনোনয়ন প্রথমে বাতিল হল এবং তারপর প্রত্যাহারও করলেন ১৬ জন! কিন্তু কেন? প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করা কয়েকজনের দাবি, বিজেপির চাপের মুখে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এমনই এক প্রার্থী জিতেন্দ্র চৌহান। ২১ এপ্রিল সুরাতে বিজেপি প্রার্থীর অবাক জয়ের সন্ধ্যায় তাঁর একটি ভিডিও সামনে আসে। সেখানে যুবক জিতেন্দ্রকে কান্নাভেজা গলায় বলতে শোনা যায়, ‘গান্ধীনগরে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে শাহের লোকজন। তাঁকে টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়, এমনকী করা হয় অপহরণও।’ প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশসহ তাঁর আর্জি ছিল, ‘দেশ বিপদের মুখে, দেশকে সবাই মিলে বাঁচান।’ কারও কারও মতে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় যেখানে নিতান্তই অসম্ভব সেখানে রেকর্ড মার্জিনে জয়ী হতেই এই গেরুয়া কৌশল। গুজরাতের সব কেলেঙ্কারি হয়তো সামনে আসেনি, কিছু ধামাচাপা পড়ে রয়েছে আজও। এমনকী, গুজরাতে দীর্ঘদিন বাদে লোকসভায় খাতা খুলেছে কংগ্রেস।
তাই সহজ অনুমান এই যে, ভবিষ্যৎ ভেবেই ‘ডাবল বিমা’ নিয়ে রেখেছিলেন মোদি। কিন্তু যাঁর ভরসায় তাঁর কাশী-বারাণসী গমন, এবারের ভোট প্রমাণ করে দিল, সেই যোগী আদিত্যনাথেরই পায়ের নীচের মাটি ভীষণ আলগা হয়ে এসেছে, হয়তো চোরাবালির চরেই দাঁড়িয়ে আছেন তিনি! দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশের অর্ধেক আসনেও জয় এনে দিতে পারেননি যোগী—বিজেপির সংগ্রহ ৩৩/৮০! ৩৭-৩৩ রেজাল্টে সেখানে ফার্স্টবয়ের নাম অখিলেশ যাদব (সপা)। আরও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য এই যে—মিস্টার গ্যারান্টিওয়ালার ভোট কমেছে এবং তাঁর জয়ের ব্যবধান হয়ে এসেছে সংকীর্ণ (৪.৭৯ লক্ষ থেকে ১.৫২ লক্ষ)। অযোধ্যা যে লোকসভা আসনের অন্তর্গত সেই ফৈজাবাদেই লজ্জার পরাজয় হয়েছে যোগীর প্রার্থীর। হেরে গিয়েছেন স্মৃতিই ইরানি (আমেথি) এবং মানেকা গান্ধীর (সুলতানপুর) মতো দুই হেভিওয়েট বিজেপি প্রার্থীও। আর দেশে ‘চারশো পার’ দূর, পগার পার হতে হতেই কোনোক্রমে পাড়ে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন মোদি। এতেই স্বস্তি বোধ করছে দেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি যথাসময়ে রুখে দিয়ে কর্তব্যনিষ্ঠার সাক্ষ্য রাখতে পারার জন্য ধন্যবাদ ভারতবাসীকে।