সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
মাত্র ২২৩ দিনে, চন্দ্রশেখর সরকারের পতন হতেই দেশ ফের এক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে প্রবেশ করে। ওই ভোটের মাধ্যমে ফের ক্ষমতা ফিরে পায় কংগ্রেস। কিন্তু দলীয় পূর্বসূরিদের মতো সৌভাগ্য নরসিমহা রাওয়ের ছিল না। ১৯৯১-এর ২১ জুন তাঁকে একটি সংখ্যালঘু (২৭২-২৪৪ = ২৮ ঘাটতি ছিল কংগ্রেসের) সরকার গঠন করতে হয়। অর্থাৎ রাওই প্রথম কংগ্রেস নেতা যিনি কেন্দ্রে কোনও একটি সংখ্যালঘু বা পরোক্ষ জোট সরকারকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই প্রথম বার কংগ্রেসকে তানাশাহির ট্রাডিশন ভেঙে বেরতে দেখেছিল বিস্মিত দেশ। রাওয়ের পর একাধিক অকংগ্রেসি নেতা (বাজপেয়ি, দেব গৌড়া, গুজরাল) খুব স্বল্পকালের (১৬ মে, ১৯৯৬ - ১২ মার্চ, ১৯৯৯) এক্সপেরিমেন্টে ফেল করেন। ১৩ অক্টোবর, ১৯৯৯ ফের ক্ষমতাসীন হন বাজপেয়ি এবং তাঁর ওই সরকার পূর্ণ মেয়াদে ও ঈর্ষণীয় দক্ষতার সঙ্গে রাজপাট সামলায়। রাজনীতির পণ্ডিতদের অনেকের মতে, জোট সরকারকেও পূর্ণ মেয়াদের আয়ু প্রদানের শিক্ষা বাজপেয়ি হয়তো রাওয়ের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। এমন অগ্নিপরীক্ষায় ফের একশোয় একশো নম্বর তুলে নিয়েছিলেন বাজপেয়িরই উত্তরসূরি মনমোহন সিং। কংগ্রেস নেতা হিসেবে তিনি টানা দু’বার এবং পূর্ণ মেয়াদে নেতৃত্ব দেন ইউপিএ নামক এক বারোভাজা সরকারকে। তাই মনমোহনের কৃতিত্বকে রাও এবং বাজপেয়ির চেয়ে কম ভাবার অবকাশ নেই।
মনমোহনের মুণ্ডপাত করেই উত্থান মোদির। কিন্তু সেই ২০১৪ এবং ২০১৯-এর সোনালি দিন আজ অতীত। কবে ঘি দিয়ে ভাত মেখেছিলেন, সেই ‘সুখস্মৃতি’ এখনও আঁকড়ে থেকে মোদির আর লাভ নেই। তাতে কোনও সুখ হবে না, বরং সেই অতীতই আজকের নির্মম বাস্তবকে নষ্ট করে দিতে পারে। ‘আব কি বার চারশো পার’-এর স্বপ্ন যখন পূরণই হয়নি, তখন রবিবার সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই নরেন্দ্র মোদির উচিত—রাও, বাজপেয়ি, এমনকী মনমোহনেরও পদাঙ্ক অনুসরণ করা। তিনি ঠান্ডা মাথায় ভাবতে থাকুন, তাঁঁর এই নমস্য পূর্বসূরিরা কোন জাদুতে বেশ সফল হয়েছিলেন। অন্তত, একটা ব্যাপারে তর্কের অবকাশ নেই যে, তাঁরা উন্নয়নকেই পাখির চোখ করেছিলেন, নিজ নিজ দলীয় এজেন্ডা মুলতুবি রেখে। অযোধ্যা তো যথেষ্ট শিক্ষা দিয়েছে, মোদি এবারও কি পারবেন না তাঁর রাজধর্মের রথের চাকা কেবল উন্নয়নের সড়ক দিয়েই গড়িয়ে নিয়ে যেতে? তিনি যদি তাঁর অন্তরের চেহারায় এখনই বদল না আনেন তবে তাঁকে চরম মূল্য দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত হতে হবে। আসল হুঁশিয়ারিটা দিয়ে রেখেছেন বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই এনডিএ সরকার ১৫ দিনও টিকবে কি না, সেই সংগত প্রশ্ন তিনি রেখেছেন। অন্যতম প্রধান বিরোধী নেত্রীর আশঙ্কা ভুল প্রমাণের দায় আজ মোদির উপরেই ছেড়ে দিয়েছে দেশ। তবে তার একটাই শর্ত—তৃতীয় মোদি সরকার ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’কে নিছক একটি রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে দেখবে নাকি যত্নবান হবে এর বাস্তব রূপায়ণে।