সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
এরপর চলে এল ২০১৯। দেশজুড়ে প্রবল মোদি-বিরোধী ঢেউ উপেক্ষা করেই বাংলার কোটি কোটি মানুষ মোদির প্রতিনিধিদের ভোট দেন। একলপ্তে নির্বাচিত হন ১৮ জন, দলের রাজনৈতিক দাবি যাই থাক, বিজেপির ইতিহাসে সে ছিল এক অভাবনীয় ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা! কিন্তু অতঃপর বাংলার মানুষ অবাক হয়ে দেখল সেবারও মন্ত্রিসভায় কোনোরকম গুরুত্ব পেল না বাংলা। মন্ত্রী করা হল মাত্র দু’জনকে (আসানসোলে পুনর্নির্বাচিত সদস্য ও রায়গঞ্জ থেকে দেবশ্রী চৌধুরী)। আসানসোলের এমপিকে দেওয়া হল নগরোন্নয়ন এবং দেবশ্রীকে নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রক। দু’জনকেই করা হল নিয়মরক্ষার রাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাধীন দায়িত্বও দেওয়া হল না তাঁদের! দেবশ্রীকে করা হয় স্মৃতি ইরানির ডেপুটি। ২০২১-২২-এ আসানসোলের এমপি যোগ দেন তৃণমূলে। পরে অজ্ঞাত কারণে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন দেবশ্রীও। ফলে, দেশের মন্ত্রিসভায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব ‘পুরো শূন্য’ হয়ে যায় একটা সময়। দেখেশুনে এই বিভ্রম হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ নামক সবচেয়ে রাজনীতি সচেতন রাজ্যটি বোধহয় ভারতের মানচিত্র থেকে সাময়িক ছুটি নিয়েছে! অতঃপর, মোদির মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন অন্য চারজন—শান্তনু ঠাকুর (জাহাজ ও বন্দর), সুভাষ সরকার (শিক্ষা), নিশীথ অধিকারী (স্বরাষ্ট্র) এবং জন বারলা (সংখ্যালঘু উন্নয়ন)। শেষদিন পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় তাঁরাই থেকে গিয়েছিলেন, তবে রাষ্ট্রমন্ত্রী (বিরোধী কটাক্ষে যা ‘অর্ধ’ কিংবা ‘সিকি’ মন্ত্রী) পরিচয়ে।
সব মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সরকারের কাছে যাহাই ২ তাহাই ১৮! অতএব, বারোজন গেরুয়া এমপির বাংলা এবার যে আরও গুরুত্ব হারাতে চলেছে, এই সহজ অনুমান রাজনৈতিক মহল আগেই করেছিল। সোমবার পরিষ্কার তাতেই সিলমোহর দিলেন নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। তাঁর তৃতীয় মন্ত্রিসভায় বাংলা থেকে জায়গা পেলেন মাত্র দু’জন এবং যথারীতি রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেই—একজন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং অন্যজন মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি শান্তনু ঠাকুর। সুকান্ত পেলেন শিক্ষা ও উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রক এবং শান্তনু তাঁর পূর্বতন জাহাজ ও বন্দর মন্ত্রকেই পুনর্বহাল হলেন। অর্থাৎ অর্ধ বা সিকি মন্ত্রীর সংখ্যাটিও উনিশের হাফ হয়ে গেল এবার। লক্ষণীয় যে, এমনও একাধিক নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সমাদৃত হয়েছেন, যাঁরা পার্লামেন্টের কোনও হাউসেরই সদস্য নন। যেমন ভোটে গোহারা হয়েও মন্ত্রী হয়েছেন পাঞ্জাবের রভনীত সিং বিটু। এই নির্বাচনের মুখে কংগ্রেস ছেড়ে তিনি বিজেপির হাত ধরেন। প্রসঙ্গত, বিটুর দাদু পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিং খালিস্তানি জঙ্গিদের হাতে খুন হন। লোকসভায় পাঞ্জাব থেকে একটি আসনও পায়নি বিজেপি। তাই বোঝা যায়, বিটুকে মন্ত্রী করে ওই রাজ্যে প্রভাব বৃদ্ধিকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। মন্ত্রিসভায় আরও জায়গা পেয়েছেন তামিলনাডুর প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি এল মুরুগান। তিনিই গত মন্ত্রিসভার একমাত্র পরাজিত সদস্য, যিনি এবারও মন্ত্রিত্ব ফিরে পেলেন। তবে মুরুগান রাজ্যসভারও সদস্য। অন্যদিকে, সুরেশ গোপীর সৌজন্যে এবারই কেরলে খাতা খুলেছে বিজেপি, মোদি তাঁকেও মন্ত্রী করেছেন। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক জর্জ কুরিয়েন মন্ত্রী হয়েছেন ভোটে না লড়েও! কেরলে দলের সংখ্যালঘু সেলের ভরসা এই খ্রিস্টান নেতা। দক্ষিণী রাজ্যটিতে প্রভাব বাড়াতেই এই কৌশল। অর্থাৎ সবার জন্যই ‘গিভ অ্যান্ড টেক’, বাদ কেবল সর্বংসহা বাংলা—কিছু না দিয়ে এবং বলে বলে বঞ্চনা করেই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদের রাজ্য থেকে দু’হাত ভরে নেওয়া সম্ভব!