সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
ধ্যানের মতো ব্রত পালন তো আত্মাকে শুদ্ধ করে। ধ্যান তো যে কেউ করতেই পারেন। তাতে আপত্তি থাকার কথাও নয়। নেইও। কিন্তু সে তো একান্তই নিভৃতে, সংগোপনে পালন করার বিষয়। সেখানে ক্যামেরার প্রবেশ, ফ্ল্যাশলাইটের ঝলকানি, সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি কেন, সেই সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বিশেষত যেখানে ভোটের প্রচার শেষ হয়ে গিয়েছে, তার পরেও কী করে এই নীরব প্রচার চলতে পারে? বলাই বাহুল্য, প্রশ্নের উত্তর মেলেনি নির্বাচন কমিশনের তরফে। বস্তুত তাঁর ৭৬ দিনের প্রচারপর্বে মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু একটি ক্ষেত্রেও তাঁর বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ হয়েছে এমন নজির সম্ভবত দেখাতে পারেনি দেশের নির্বাচন কমিশন। আসলে হয়তো ভয় পেয়েছেন এই স্বঘোষিত ‘সর্বশক্তিমান’। হেরে যাওয়ার ভয়। তাই ধ্যানের নামে হয়তো নীরব প্রচারের কৌশল নিয়েছেন। আতঙ্কিত হওয়ার আরও লক্ষণ দেখা গিয়েছে বক্তৃতায়, শরীরী ভাষায়, কাজকর্মে। খবরে প্রকাশ, ৭৬ দিনের দীর্ঘ প্রচারপর্বে ২০৬টি জনসভা-পদযাত্রা করেছেন মোদি। এর মধ্যে বাংলায় ১৮টি। আগে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্যতম বড় অভিযোগ ছিল, তিনি প্রশ্ন এড়াতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন না। শুধু বলে যেতে চান, শুনতে অভ্যস্ত নন। পরিসংখ্যানও বলছে, ২০১৪-এর ভোটের আগে তিনি কোনও সাক্ষাৎকার দেননি। ২০১৯-এ ‘অনুগত’ এক বলিউড তারকাকে একটি মাত্র সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার একেবারে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন! হেলায় ৪০০ আসন দখলের খোয়াব দেখিয়েও ৮০টি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। কার্যত শাসকদলের লোকাল নেতাদের মতো সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গিয়েছে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে। জৈবিক প্রক্রিয়ায় যাঁর জন্ম হয়নি, যাঁকে মানবসেবায় কিছু নির্দিষ্ট কাজ দিয়ে পরমাত্মা ধরাধামে পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মোদি নিজেই, তাঁর এই রূপান্তর কেন তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এসব দেখে অনেকেই কটাক্ষ করে বলছেন, এখন ধ্যানে বসেছেন, ৪ জুনের পর হিমালয়ের কোনও জায়গাই হয়তো তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হতে চলেছে।
আসলে তিনি দশ বছরে প্রমাণ করেছেন সবটাই তাঁর কৌশল ছিল। নিজের সরকারের পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতার দায় অস্বীকার করে ভ্রান্ত তথ্য পরিবেশন করতে দুবার ভাবেননি। আবার ভোটে জিততে মেরুকরণকে ‘অস্ত্র’ করতেও দ্বিধা দেখাননি। বিজেপি তথা আরএসএস যে হিন্দুত্বের পূজারী, তা কোনও নতুন কথা নয়। কিন্তু সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে তিনি যে ভাষায় বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়েছেন তার জন্য যে কোনও ভর্ৎসনাই কম মনে হতে পারে। একসময়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে ‘মৌন প্রধানমন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করতেন মোদিরা। সেই প্রবীণ নেতাও মোদির আচরণে মুখ খুলে বলেছেন, অতীতে দেশের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী মোদিজির মতো সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি বা বিরোধীদের বিরুদ্ধে এভাবে বিদ্বেষপূর্ণ ও অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেননি।... মোদিজি তাঁর এই আচরণে প্রধানমন্ত্রী পদের মর্যাদা ও গরিমা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। দেশের মানুষ এবার দেখতে চায়, এই স্বঘোষিত ‘বরপুত্র’-কে ঈশ্বর শাস্তি দেন, নাকি ক্ষমা করেন।