সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে নরেন্দ্র মোদির উত্থান চমকপ্রদ সন্দেহ নেই। সেবার (২০১৪র ভোটের আগে) বিরোধী অবস্থানে থেকেও প্রতিস্পর্ধী মোদি এক নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যার পরিণতিতে উঠেছিল ‘মোদি-ঝড়’। পাঁচ বছর পর ২০১৯-এ ‘প্রশাসক’ প্রধানমন্ত্রীর যাবতীয় ব্যর্থতা ঢাকা পড়েছিল ‘অন্ধ’ পাকিস্তান বিরোধিতার নামে অতি জাতীয়তাবাদের প্রচারে। এই ‘মোদি-ম্যাজিক’-এর হাত ধরে শাসকদলের ভোটের ঝুলি ভরেছিল ‘বালাকোট’-এ সাহসী ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর নামে। এবার সেই ঝড় ছিল না। কারণ পদে পদে ব্যর্থতার নজির। তাই দেখা যায়নি মোদি ম্যাজিকও। তবে তার জায়গা নিয়েছিল আগ্রাসী সংখ্যালঘু বিরোধিতা। বিদ্বেষের মোড়কে ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’-এর প্রচারকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন মোদি-শাহরা। অন্যদিকে, বিরোধীরা ‘অস্ত্র’ করেছে মূল্যবৃদ্ধি-বেকারি-অসাম্যের একদিন-প্রতিদিনের বাস্তব অবস্থাকে। দেখার বিষয় হল, ধর্মের ভিত্তিতে সামাজিক বিভাজন, নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশবাসীর রুটি-রুজির জন্য লড়াইয়ের বার্তা— কে কাকে টেক্কা দেয়। শেষপর্যন্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা মিলে গেলে বুঝতে হবে ক্ষুধার রাজ্যে পেটে টান পড়লেও সবার আগে সত্য হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণা।
ফলাফল যাই হোক, ১৮তম লোকসভা গঠনের আগে প্রায় আড়াই মাসের রাজসূয়যজ্ঞে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে পক্ষপাতের গুরুতর অভিযোগ ব্যতিরেকে ভোটপর্ব মিটেছে মোটামুটি শান্তিতে। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গের কোনও কোনও এলাকা। এই রাজ্যে ভোট গ্রহণের শেষ তিন পর্বে সংখ্যায় কম হলেও কোথাও কোথাও অশান্তির সেই চেনা ছবি দেখা গেল। উদ্বেগের বিষয় হল, বুথের লড়াই মিটলেও রক্তপাত, গুলি, মানুষ খুনের লড়াইয়ে ভাটা পড়েনি। এটা যেন রাজ্যের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে গিয়েছে! এরই মধ্যে কেউ কেউ আবার এনকাউন্টারের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। আশঙ্কা হয়, ফলাফল ঘোষণার পরেও রক্তঝরা হয়তো সহজে থামবে না। তাই এসেছে নির্বাচনোত্তর হাঙ্গামা ঠেকানোর ব্যবস্থার কথা। কিন্তু এই অবস্থা পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে শাসক, বিরোধী সব পক্ষকেই। রাজ্যের মানুষ দেখতে চায়, ভোটে জয়ী প্রার্থী পরাজিতকে মিষ্টি খাইয়ে বুকে টেনে নিচ্ছেন। আর পরাজিত প্রার্থী প্রতিশ্রুতি পালনে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছেন বিজয়ীকে। অনেকটা আলেকজান্ডার-পুরুর কাহিনির মতো। এমন একটা সকালের স্বপ্ন সফল করার যাত্রা শুরু হোক এবারই।