সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের নবনিযুক্ত কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বিরোধিতা করে কড়া বিবৃতি দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। সংযুক্ত কিষান মোর্চার বুধবারের বিবৃতিতেও রয়েছে শিবরাজ-বিরোধী মন্তব্য, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে লেগে রয়েছে কৃষকের রক্ত!’ পরিষ্কার যে, এই এনডিএ সরকারকেও পিছু ছাড়ছে না কেন্দ্র-কৃষক সংঘাত। কারণটা সহজবোধ্য, এই সরকারেরও নেতৃত্বে সেই ‘কৃষক-বিরোধী’ নরেন্দ্র মোদি। আর এখানেই ধরা পড়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা-মাটি-মানুষের সরকারের সঙ্গে স্পষ্ট বৈপরীত্য। বস্তুত কৃষকের স্বার্থে রাজ্যের একাধিক স্থানে সফল গণআন্দোলন গড়ে তুলেই বাংলার মানুষের মন জয় করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে সারা পৃথিবীর নজর কেড়েছিল সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামে কৃষিজমিতে কৃষকের অধিকার রক্ষার আন্দোলন। কোনও সন্দেহ নেই, ওই আন্দোলন সারা দেশের কৃষককে নিজ নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণা দিয়েছে। আমরা জানি, ওই আন্দোলন পর্বে মমতা ছিলেন বাংলার প্রধান বিরোধী নেত্রী। ১৩ বছর যাবৎ, রাজ্যের শাসক হয়েও জননেত্রীর তকমা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি, এই কৃতিত্ব কোনোভাবেই সামান্য নয়। তার কারণ, বর্তমান শতকের প্রথম দশকে তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত আন্দোলনগুলির একটিও মেকি, এমনকী রাজনৈতিক ধান্দাবাজি ছিল না।
কৃষক কল্যাণের জন্য বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজপাট হাতে পেয়ে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেগুলিই একে একে রূপায়ণের জন্য। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘কৃষক বন্ধু’ এবং কৃষকের তরফে প্রিমিয়াম ছাড়াই ‘বাংলা শস্য বিমা’ প্রকল্প। প্রথমোক্ত প্রকল্পটি মারফত ১.০৫ কোটি কৃষককে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। সাধারণ নির্বাচনের বিধিনিষেধ উঠে যেতেই কৃষক বন্ধুর জন্য নবান্ন ২৯০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এছাড়া শস্যবিমার ক্ষতিপূরণ পেলেন ২.১০ লক্ষ কৃষক মোট ২৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, দুটি প্রকল্প মিলিয়ে সম্প্রতি রাজ্য প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা অনুদান দিল কৃষকদের। ২০১৯ সাল থেকে কৃষক বন্ধুতে এখনও পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পেয়েছেন বাংলার কৃষকরা। ১৮-৬০ বছর বয়সি মৃত কৃষকের পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকাও দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এপর্যন্ত এই খাতে ১.১২ লক্ষ পরিবার মোট ২,২৪০ কোটি টাকা পেয়েছে। আর শস্যবিমার সুবিধা দেওয়া হয়েছে মোট ৩,১৩৩ কোটি টাকার। সর্বাধিক সংখ্যক কৃষিজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করার ভাবনা থেকেই এই প্রকল্পগুলি ডিজাইন করা হয়েছে। তাই এগুলি মোদি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির চেয়ে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠতর। প্রকল্পগুলির সুবাদে বাংলার কৃষকের আয় দ্রুত বাড়ছে এবং তাতে সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলার অর্থনীতি। কৃষকের সমৃদ্ধিকে হাতিয়ার করতেই বাংলার দিকে নজর এখন শিল্প মহলেরও। কথার খেলাপে রেকর্ড গড়ে বিপন্নপ্রায় মোদি সরকারের উচিত বাংলার বর্তমান শাসকের কাছেই কথা রাখার পাঠ গ্রহণ করা।