সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
কিন্তু বকেয়া এজেন্ডা ফুলফিল করার জন্য কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় বিজেপির ফেরা জরুরি। বিরোধীরা এবং দেশবাসী তাঁদের যতই দুয়ো দিক, মোদি-শাহ জুটি সেসব বিরোধিতাকে কুলোর বাতাসেই উড়িয়ে দেবেন বলে ভেবেছিলেন। তাই দেশজুড়ে তাঁরা আওয়াজ তুলেছিলেন ‘এবার ৪০০ পার’ এবং ‘আরও একবার মোদি সরকার’। তার জন্য অকাতরে ‘গ্যারান্টি’ বিতরণে নেমেই সংবিৎ ফেরে গেরুয়া নেতৃত্বের। এবার ভোট হচ্ছে রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এবং সাত দফায়। বিরোধীদের অভিযোগ, এর পিছনে কেন্দ্রীয় শাসকের প্রভাব রয়েছে। বিরোধীদের ভয় পাইয়ে দিতেই অনাবশ্যক এই আয়োজন। এতে বরং রাজকোষের উপর অবাঞ্ছিত চাপ বেড়ে গিয়েছে, অথচ এই ‘অপব্যয়’ রুখে দেওয়া গেলে গরিব কল্যাণে বাড়তি কিছু টাকা খরচ করার সুযোগ থাকত। কিন্তু এহেন ‘রাজসূয়যজ্ঞ’ করেও কি স্বস্তিতে নেই মোদি সরকার? রাজ্যে রাজ্যে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার বসানোর পাগলামিতে মেতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল, দেশ যখন আদর্শ নির্বাচন বিধির অধীনে চলে গিয়েছে, তখন অন্তত মোদি সরকারের এজেন্সিরাজে লাগাম পড়বে।
কিন্তু কোথায় কী! এই ‘সংরক্ষিত’ সময়েও সিবিআই, ইডি, আইটি’র মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি যথারীতি সক্রিয়। বলা বাহুল্য, তাদের এই অতিসক্রিয়তার এক ও একমাত্র লক্ষ্য একাধিক বিরোধী দল এবং রাজ্য সরকার। অনেক ক্ষেত্রে আদালতকে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন বিরোধী রাজনীতির নেতারা। লক্ষণীয় যে, ভোটের দফা যত শেষের দিকে গড়াচ্ছে মোদি সরকারের পুরনো খেলাটি যেন তত বেশি নিচ্ছে নতুন আকার। প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু কেন? যে পার্টি ৫৪৩-এ ৪০০+ পাওয়ার হকদার বলে মনে করে তার মনে ভয় কি দ্রুত ঘনীভূত হচ্ছে? ৪০০ দূর, যেমন-তেমন গরিষ্ঠতা লাভ নিয়েও নিশ্চয় ভীষণ সংশয়ে এখন মোদি-শাহরা? কারণটা তাঁরাই সবচেয়ে ভালো জানেন—উনিশের ‘অভাবনীয়’ সাফল্যের অন্দরের চেহারা মোটেই স্বস্তিদায়ক ছিল না। বিজেপি এককভাবে পেয়েছিল মোট প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৩৭.৩৬ শতাংশ। সংখ্যাটি এনডিএ’র ক্ষেত্রে ছিল ৪৫। অর্থাৎ দল এবং জোট—দু’ভাবেই গেরুয়া শিবিরের প্রতি মানুষের সমর্থন ছিল ৫০ শতাংশের অনেক নীচে বা ভারতের বেশিরভাগ মানুষই তাঁদের চায়নি। তবু তাঁরা ক্ষমতায় ফিরেছিলেন, সে নিতান্তই ছিল সংখ্যার মাহাত্ম্য এবং ভাগ্যের পক্ষপাত। বিরোধীদের নাছোড় অনৈক্যকেও নিশ্চয় ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু ঘুঘু বার বার ধরা দেবে কি? এই প্রশ্নচিহ্নটি ক্রমে যেন দীর্ঘতর হচ্ছে বিজেপিওয়ালাদের জন্য। এই আতঙ্কের সঙ্গে গেরুয়া ছকটা বঙ্গে খোলসা হয়ে গিয়েছে একেবারে। তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন ‘শেষ কামড়’ দেওয়ার জন্যই। আগামী কাল, শনিবার (১ জুন) পশ্চিমবঙ্গের নয়টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, ঠিক তার দু’দিন আগে সিবিআইয়ের তলবি নোটিস ধরানো হয়েছে তাদের জাঁদরেল ভোট ম্যানেজারদের। এর পিছনে রয়েছে বিজেপির কলকাঠি, যাতে রাজ্যে শাসক দলের একাধিক ডাকাবুকো নেতা-কর্মী ভোটের কাজ থেকে ‘অফ’ হয়ে যান এবং কিছু বুথে বিজেপির পক্ষে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ উপস্থিত হয়! মনের আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ কখনোই যুদ্ধজয়ের কৌশল নয়। এই ভুল যে পক্ষ করে, তাদের রণনীতির সাফল্য নিয়ে সংশয়ই বাড়ে।