বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
চাষিরা জানিয়েছেন, সরকার চাষিদের জন্য সহায়কমূল্যে ধান কেনার কথা ঘোষণা করলেও ধান বিক্রির ক্ষেত্রে জটিলতার জন্য বাস্তবে ফড়েরাই কৃষকদের লাভের গুড় খেয়ে নিচ্ছে। চাষের জন্য জরুরি টাকার প্রয়োজনে কৃষকরা এখন সহায়ক মূল্যের নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় প্রতিকুইন্টাল ধান বাজারে প্রায় ৫০০ টাকা কম দামে বিক্রি করছেন। বেলাকোবার দালালপাড়ার বাসিন্দা এক চাষি বেলাকারা কৃষক বাজারে ধান বিক্রির জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন। ওই চাষিকে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ধান কৃষক বাজারে নিয়ে আসার দিনক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। একই অবস্থা ব্লকের অন্যান্য চাষিদের। দীর্ঘদিন পর সরকারি বিক্রয় কেন্দ্রে তারা ধান বিক্রির দিনক্ষণ পাচ্ছেন। বেলাকোবার পন্ডিতেরবাড়ি গ্রামের চাষি শ্যামল রায় বলেন, আমাকে নাম নথিভুক্ত করার সময় ২০ কুইন্টাল ধান নেওয়া হবে বলে লিখে দিয়েছিল। কিন্তু পরে আমাকে ফোনে জানানো হয় ১৫ কুইন্টালের বেশি ধান নেওয়া হবে না। বাধ্য হয়ে ১৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে হল। বেলাকোবার শিকারপুরের নর্থবেঙ্গল ফার্মের চাষি ধীরেন রায় বলেন, ধান ঝারাইয়ের টাকা জন মজুরদের নগদে মেটাতে হয়েছে। সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে এত দেরিতে ধান নেওয়া হচ্ছে অভাবি বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকছে না। বেলাকাবা কৃষকবাজারের সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় কেন্দ্রের পারচেস অফিসার মুকসেদ আলি বলেন, প্রায় ৫০০ চাষি এখন নাম নথিভুক্ত করেছেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক চাষির ধান প্রতিদিন নেওয়া সম্ভব। ফলে নাম নথিভুক্তির পরেও চাষিদের বিক্রির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শুরুতে ২০-৩০ কুইন্টাল পর্যন্ত একজন চাষির ধান কেনা সম্ভব হলেও বেশি সংখ্যক চাষিকে বিক্রির সুবিধা দিতে গিয়ে পরিমাণ কমিয়ে এখন একজন চাষির জন্য ১৫ কুইন্টাল করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঙ্গা সাহেববাড়ির চাষি নৃপেন রায় বলেন, সরকার ধানের সহায়কমূল্য যা দিয়েছে, তাতে চাষের খরচের তুলনায় কিছুটা লাভ থাকতো। কিন্তু কাছাকাছি ক্রয়কেন্দ্র না থাকায় হাটে বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। জলপাইগুড়ির নয়াপাড়ার চাষি জীবন দে গৌরিহাটে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে এসে বলেন, ক’দিন আগে ১৪০০ টাকা কুইন্টাল দরে ফড়েরা কিনেছে, এখন ১৩০০ টাকার বেশি দর দিচ্ছে না। আলুতে সার দিতে হবে, তাই হাটে কম দামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হলাম। শিকারপুরের চাষি সত্যনারায়ণ মোদক বলেন, এখন চাষিরা ধান বিক্রি করে অন্য ফসলে খরচ করবে। তাই প্রত্যেক হাটে, বাজারে ক্যাম্প করে সহায়কমূল্যে ধান কেনা হলে অভাবি বিক্রি করতে হত না। দেরিতে ধান কেনায় ও ‘চেকে পেমেন্ট’ করায় দীর্ঘসূত্রিতা অভাবি চাষিদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে গিয়েছে। বেলাকোবা কিষান মান্ডিতে সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করতে আসা চাষিরা বলেন, সরকারি নিয়মের ফাঁকফোকর দিয়ে চাষিদের মধ্যে ফড়েরা মিশে গিয়ে ধান বিক্রি করছে। ফড়েরা ধান কিনে দেরিতে বিক্রি করলেও তাদের সমস্যা নেই। কিন্তু চাষিদের চাষের মরশুমে সেই অপেক্ষা করার সময় নেই। তাই বাধ্য হয়ে ফড়েদের কাছে অনেকেই বাইরে কমদামেই আমন ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এবারে রাজগঞ্জ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধানের ফলনও মার খেয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। তাতে সহায়কমূল্য না পেয়ে চাষিদের বাইরে অভাবি বিক্রি করে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।