বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার রাজীব প্রসাদ বলেন, গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলছি।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টা। হাসপাতালের বহির্বিভাগে সার্জারি বিভাগের বাইরে লম্বা লাইন। টিকিট কেটে আসার পর এখানে প্রেসক্রিপশনগুলিকে একটি টেবিলে জমা দেওয়ার রীতি রয়েছে। এদিনও সেরকমই হয়েছে। আচমকাই সার্জারি বিভাগে এসে ঢুকলেন এক যুবক। সামনের টেবিলে অপর একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বসে রয়েছেন। ওই যুবক একে একে প্রেসক্রিপশনগুলি থেকে নাম ধরে ডেকে পর পর লাইনে রোগীদের দাঁড় করিয়ে দিলেন। এরপর রেজিস্ট্রার খাতায় স্ট্যাম্প দেওয়া সহ নানা ধরনের কাজ তিনিই করে চলেছেন। এক এক করে রোগী ডাক্তারদের দেখিয়ে বেরচ্ছেন। ওই যুবক প্রেসক্রিপশন দেখে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। একজন রোগীকে চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিতেই তাঁর পিছনে বেরিয়ে গেলেন ওই যুবক। এদিকে সামনের মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি নিজেকে হাসপাতালের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিলেন। তাঁর সামনেই যাবতীয় কাজ হচ্ছে। কিন্তু সার্জারি বিভাগের ওই যুবকের পরিচয় কি? ওই যুবক বলেন, একটু সাহায্য করার জন্য মাঝেমধ্যে ডিউটিতে আসি। তবে সরকারি হাসপাতালে তিনি কীভাবে ডিউটি করছেন? প্রশ্ন শুনেই দ্রুত গা ঢাকা দেওয়ার জন্য পালানোর চেষ্টা করেন ওই যুবক। হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালের আনাচে কানাচে এমন ‘হেল্প’ করার জন্য যুবকদের রোজ দেখা যাচ্ছে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তারা হাসপাতালের টিকিটঘরের কাছে জড়ো হচ্ছে। এরপরই গ্রাম থেকে আসা রোগীদের টার্গেট করা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এমনকী সার্জারি বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বারেও মাঝেমধ্যেই একজন বহিরাগত যুবক এমনই ‘ডিউটি’তে থাকছেন বলে অভিযোগ উঠছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের চর্ম ও অর্থোপেডিক বিভাগেও এই ধরনের বহিরাগতদের হাতেই রাশ রয়েছে। তারা কার্যত বিভিন্ন প্যাথলজি সেন্টার ও নার্সিংহোমের কমিশন এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন। অবলীলায় সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে আসা রোগীদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করে তারা টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ। এমআরআই, এক্সরে সহ বিভিন্ন পরিষেবা আগে করিয়ে দেওয়ার নাম করেও তারা রোগীর পরিবারের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ। কোনও রোগী হাসপাতালে এসে বিপাকে পড়লেই তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করার জন্য এই যুবকরা কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের জন্য দালালরাও ঘুরঘুর করছে বলে অভিযোগ। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে এসে আয়াদের নানা ধরনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেকেরই প্রাণান্তকর অবস্থা হচ্ছে। তার সঙ্গে কেউ যদি দালালদের খপ্পরে পড়ে তবে একেবারে সর্বস্বান্ত অবস্থা হচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ দালালরাজ ভাঙতে বার বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা পরিকল্পনার নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ বিশেষ কিছু হচ্ছে না। এদিকে হাসপাতালের কর্মীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করছে। হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের মতে সিংহভাগ সরকারি পরিষেবা হাসপাতালে বিনা পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দালালদের পাল্লায় পড়ে রোজ প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাম থেকে আসা গরিব মানুষ। নিদিষ্ট পরিচয়পত্র না থাকায় কারা হাসপাতালে কাজ করেন এবং কারা বহিরাগত তা রোগীদের একাংশ চিহ্নিত করতে পারছেন না। এই সুযোগটাই দালালরা কাজে লাগাচ্ছে।