বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
ফালাকাটা ব্লক সদর শহর থেকে সাত কিমি দূরে নিগৃহীত যুবক বিনোদের বাড়ি। বাড়ি বলতে টিনের চালায় বাঁশের বেড়ার ঘর। সেই বাড়িতেই মা-বাবাকে নিয়ে থাকেন বিনোদ। দাদা চাকরি সূত্রে অন্যত্র থাকেন। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসক এবং তাঁর স্ত্রীর হাতে প্রহৃত হয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে পরিবারের দাবি অনুসারে ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার পর ওই দিন রাতে ফালাকাটায় একজনের বাড়ি থেকে হদিশ মেলে বিনোদের। পরে রাত ১১ টার সময় কিছু লোক বিনোদকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। তার আগে ওই দিন সন্ধ্যায় বিনোদের বাবা ছেলেকে মারধরের ঘটনায় জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফালাকাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তারপর থেকেই গোটা পরিবার আতঙ্কে ভুগছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে বাড়িতেই শুয়ে রয়েছেন বিনোদ। এদিন তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফিরেছি। আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে এখনও অসুস্থবোধ করছি। আমার বুকে ও মাথায় ব্যথা হচ্ছে। আমার একটাই কথা আমি ঘটনার সুবিচার চাই।
জেলা পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সস্ত্রীক জেলাশাসকের বিরুদ্ধে প্রহৃত যুবকের বাবা ছেলেকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলার পুলিস সুপার সুনীল কুমার যাদব বলেন, এই ঘটনার তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে।
৭২ বছরের বৃদ্ধ বিনোদের বাবা রাজমোহনবাবু বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ পুলিস ছেলেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে। ছেলে বাড়িতে ফিরলেও আতঙ্কে আছি। কখন আবার ছেলেকে পুলিস তুলে নিয়ে যাবে এই আশঙ্কায়। আমি আমার ছেলে ও পরিবারের নিরাপত্তা চাই। বিনোদের জামাইবাবু বাপি সরকার বলেন, হাসপাতালে পুলিস যে কাণ্ড করেছে তারপর আর ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না। আমরা পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
বিনোদের মা কল্পনাদেবী ঘটনার পর থেকেই নাওয়াখাওয়া ভুলে গিয়েছিলেন। আত্মীয়স্বজন জোর করে মঙ্গলবার রাতে সামান্য ভাত খাওয়াতে পেরেছিলেন। কল্পনাদেবী বলেন, ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় আমি খুশি। আমি জানি আমার ছেলে কোনও অন্যায় করেনি। বিনাদোষে কেন আমার ছেলেকে এভাবে মারধর করা হল এর সঠিক বিচার চাই আমি। বিনোদকে মারধরের জন্য তার প্রতিবেশীরাও ক্ষোভে ফুঁসছে। প্রতিবেশী বিচিত্র দেবনাথ বলেন, বিনোদকে ছোট বেলা থেকে চিনি। একসঙ্গে বড় হয়েছি। ওকে মারধরের জন্য দোষীদের কঠোর শাস্তি চাইছি আমরা।
আরেক প্রতিবেশী চন্দ্রকিশোর বিশ্বশর্মা বলেন, বিনোদ কোনও অন্যায় করতে পারে না। ওকে মারধরের ঘটনা মানা যায় না। এর সঠিক বিচার হওয়া দরকার।
এদিকে, গত মঙ্গলবার থেকে জেলাশাসকের বাংলো শুনশান। মঙ্গলবারই দুপুর তিনটে নাগাদ জেলাশাসক সস্ত্রীক গাড়ি নিয়ে বাংলো ছেড়ে বেরিয়ে যান। বাংলোতে রেখে যান দুই শিশু পুত্রকে। জেলাশাসক সস্ত্রীক চলে যাওয়ার আধ ঘন্টা পর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলাশাসকের শাশুড়ি তাঁর দুই নাতিকে বাংলো থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। বর্তমানে জেলাশাসকের বাংলোতে কাজের লোক, রান্নার লোক বা মালি কেউ নেই। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলো।
জেলার পুলিস সুপার সুনীল কুমার যাদব বলেন, এই ঘটনার তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে যুবককে মঙ্গলবার ফালাকাটার এক মানবাধিকার কর্মীর বাড়িতে পুলিস পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই বলে এদিন পুলিস সুপার দাবি করেছেন। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এনিয়ে সর্বস্তরে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। সকলেরই প্রশ্ন, পুলিস কেন বিনোদকে গোপনে হাসপাতাল থেকে ওই মানবধিকার কর্মীর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল?