বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
প্রসঙ্গত, কলেজ ক্যাম্পাসকে বর্ণময় করে তুলতে গত পাঁচ দিন উদয়াস্ত পরিশ্রম করে মালদহ কলেজের পড়ুয়ারা রঙ্গলি এঁকেছেন। বৌদ্ধ গুম্ফার নানান চিত্র থেকে মুখোশ, পদ্ম থেকে হরেক রকমের ফুল আর লতাপাতা আলপনায় সেজে ছিল কলেজের রাস্তা। কিন্তু মঙ্গলবার রাতেই মুছে ফেলা হয় পদ্মের ছবি। রাস্তার যে অংশটিতে পদ্ম আঁকা হয়েছিল, বুধবার সন্ধ্যেয় সেখানে গিয়ে দেখা গেল পড়ুয়ারা নতুন করে আঁকছেন প্রদীপ। এই খবর ছড়াতেই তুমুল বিতর্ক উঠেছে। অনেকেই বলছেন পদ্মফুল একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতীক হওয়ায় সেই বিতর্ক এড়াতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। আয়োজকদের অন্দর মহলে এনিয়ে নীরবতা বা ফিসফিসানি আরও জল্পনা উসকে দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, শাসকদলের নেতাদের রোষ থেকে বাঁচতেই কী এত প্রচেষ্টা? পদ্ম তো একটি ফুলই। বিতর্ক এড়াতে এই জায়াটাকেই হাতিয়ার করছেন রঙ্গলি আঁকিয়েরা। আর্য খান্না, সৌভিক কুণ্ডুরা বলেন, পদ্ম জাতীয় ফুল। জাতীয় ফুলের উপর দিয়ে সবাই হেঁটে গেলে মর্যাদাহানি হয়। তা ভেবেই পদ্মটি মুছে দেওয়া হয়েছে। যদিও বিরুদ্ধ পক্ষ বলছে, এভাবে রাস্তায়, মাঠেঘাটে অনেক সম্মানীয় জিনিসের ছবিই আঁকা থাকে। তাতে যাতে পা না পড়ে সেজন্য জায়গাটি বিশেষভাবে ঘিরে দেওয়াও যেত! বাড়ির আলপনায় ‘লক্ষীর পা’ আঁকা হলে তাকে কি সকলে ডিঙিয়ে যায়?
এনিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন মালদহ কলেজের অধ্যক্ষ মানস বৈদ্য। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে উদ্বোধনী শোভাযাত্রা। তার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত আছি। রঙ্গলি’র ছবিতে ছাত্র ছাত্রীরা কোনও পরিবর্তন করেছে কি না দেখা হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক জানান, মঙ্গলবারেও রঙ্গলিতে তাঁরা পদ্মটি দেখেছেন। বুধবার দুপুরের পর নজর পড়তে দেখেন পদ্মটি নেই।
রঙ্গলি থেকে পদ্ম মুছে ফেলার বিষয়টিকে ‘অসমীচীন’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ, প্রাবন্ধিক তথা কলেজেরই কৃতী প্রাক্তনী তুষারকান্তি ঘোষের। তিনি বলেন, পদ্ম সারা দেশের সব প্রান্তেই মঙ্গল বা শুভ প্রতীক বলেই বিবেচিত হয়। এই ফুল নিয়ে বিতর্ক অনুচিত। আল্পনা বা রঙ্গলিতে বিভিন্ন কল্কা বা ‘মোটিফ’ ব্যবহার করা হয়। শিল্পীরা অবচেতন মনেই তা করে থাকেন। সেই ‘মোটিফ’ যদি কোনো উদ্দেশ্য বা ‘মোটিভ’ থেকে করা হয় তা অনাকাঙ্ক্ষিত।
সুযোগ পেয়ে পদ্ম-বিতর্কে টিপ্পনি কেটেছেন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তন নেতা এবং মালদহ কলেজের আরেক প্রাক্তনী অজয় গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, পদ্মকে যাঁরা বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকের বাইরে অন্য কিছু ভাবতে পারেন না, তাঁদের দর্শনেই সমস্যা রয়েছে। আর রাজনৈতিক দলের প্রতীক বলেই যদি পদ্মটি মুছে প্রদীপ আঁকা হয় তাহলেও মুশকিল। কারণ যে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীক পদ্ম, তাদের পূর্বসূরিরা নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে প্রদীপই ব্যবহার করতেন।
মালদহ কলেজ অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ বাগচী অবশ্য বলেন, পদ্ম নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজন ছিল না। যাঁরা রঙ্গলি এঁকেছেন তাঁরা নিজেদের মতো করেই এঁকেছিলেন। অনেক ছবির মধ্যে পদ্মফুলও ছিল। সেটি থাকলেও কিছু ক্ষতি ছিল না। না থাকলেই বা কী? জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রসূন রায় বলেন, ছাত্রছাত্রীরা যা এঁকেছেন তা নিজেদের ইচ্ছাতেই। এনিয়ে বিতর্ক অনাবশ্যক।