খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
লকডাউন কী
এটি একটি জরুরিকালীন ব্যবস্থা বা প্রোটোকল। প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থা আংশিক অথবা সম্পূর্ণ রূপে প্রয়োগ করা হয়।
সম্পূর্ণ লকডাউনের অর্থ, যে ব্যক্তি সরকারি ঘোষণার সময় ঠিক যেখানে রয়েছেন, সেখানেই তাঁর থাকাটা বাধ্যতামূলক। সেখান থেকে বেরনো বা অন্য কোথাও প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ।
ভারতে ২১ দিনের লকডাউন
দেশের অধিকাংশ জায়গায় ৩১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন চলার কথা ছিল। গতকাল রাত ৮টায় নরেন্দ্র মোদির ভাষণের আগে কেউই বুঝতে পারেননি যে, তার মেয়াদ আরও দু’সপ্তাহ বাড়তে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, যাই ঘটে যাক, বাড়ির বাইরে পা রাখবেন না। লকডাউনের আদর্শ সংজ্ঞা এটাই।
লকডাউন ও কার্ফুর পার্থক্য
প্রধানমন্ত্রীর মতে, এটি এক ধরনের কার্ফু। যদিও, কার্ফু বিষয়টি লকডাউনের থেকে অনেকটাই আলাদা। প্রথমত, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই কার্ফু জারি করা হয়। সেদিক থেকে দেখলে এই লকডাউনকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা বলা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে বাড়িতে বন্দি রাখা। এক জায়গা থেকে অন্যত্র যেতে না দেওয়া। যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়। তবে, বাজার, ওষুধ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান এই সময় খোলা থাকে। যাতে মানুষ প্রয়োজনে তা কিনতে পারেন। কিন্তু কার্ফুর ক্ষেত্রে কখনই নাগরিকদের রাস্তায় বেরনোর অনুমতি দেওয়া হয় না। কার্ফু সাধারণত অল্প সময়ের জন্য বলবত্ করা হয়। প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলেই তা শিথিল বা প্রত্যাহার করে নেয়। লকডাউনের ক্ষেত্রে সময় আগেই বেঁধে দেওয়া হয়। লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় মানুষের ভিড় দেখেই সম্ভবত এটিকে কার্ফুর সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে মানুষকে রাস্তা বেরনো থেকে নিরস্ত করা যায়।
এই লকডাউন কেন গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্বের ১৩৬টি দেশের পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে ভারতেও। সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশ এখনও সংক্রমণের দ্বিতীয় স্টেজে রয়েছে। যেখানে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা সবে ৫০০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ তৃতীয় স্টেজে পৌঁছলেই বিপদ। সেক্ষেত্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা বিদেশ সফর না করা বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না এসেও করোনার শিকার হবেন মানুষ। তাহলে আর ভাইরাসের সংক্রমণ কোনওভাবে আটকানো যাবে না।
এখনও পর্যন্ত সামাজিক দূরত্বই এই মারণ ভাইরাসকে রোখার অন্যতম সেরা রাস্তা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণেই মানুষকে ঘরবন্দি রাখার প্রয়াস।
লকডাউন না মানলে কী শাস্তি
* দেশবাসীর স্বার্থে এই লকডাউন সকলে মানতে বাধ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গাইডলাইন নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।
* লকডাউন না মানলে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা জরিমানা বা এক মাস থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড কিংবা দুটোই হতে পারে। তা নির্ভর করবে অভিযুক্ত কতটা অবাধ্য তার উপর।
* বিপর্যয় মোকাবিলা আইন: লকডাউনের নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ‘বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০১৫’-এর ৫১ থেকে ৬০ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা ও অপরাধ প্রমাণে শস্তি হতে পারে। সরকারি আধিকারিক ও কর্মীদের কাজে বাধা, সরকারি নির্দেশ অমান্য, ভুয়ো দাবি বা গুজব ছড়ানো বা বিপর্যয় মোকাবিলার সামগ্রীর অপচয় ইত্যাদি অপরাধে এই ধারাগুলি প্রযোজ্য। এই ধারাগুলিতে অপরাধ প্রমাণে এক থেকে দু’বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। দিতে হতে পারে মোটা জরিমানাও। সরকারি দপ্তর এবং সংস্থাগুলির উপরেই এই আইন প্রযোজ্য।
* ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা: সরকারি আধিকারিকের নির্দেশ না মানলে এবং তার জন্য কারও ক্ষতি হলে এই ধারায় জরিমানা বা কারাদণ্ড হতে পারে। আইনে এই অপরাধে সর্বোচ্চ ছমাস কারাদণ্ড ও এক হাজার জরিমানার সংস্থান রয়েছে।
লকডাউনেও আওতার বাইরে থাকা পরিষেবা
প্রথমেই বলা হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবা লকডাউনেও চালু থাকবে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে,
১) রেশন দোকান, মুদিখানা, ফল ও সব্জি বাজার, ডেয়ারি, মাথ-মাংস ও পশুখাদ্যের দোকান খোলা থাকবে।
২) খোলা থাকবে পেট্রল পাম্প, রান্নার গ্যাস (এলপিজি), পেট্রলিয়াম এবং খুচরো গ্যাসের জোগান অব্যাহত থাকবে।
৪) মুদ্রণ ও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমও কাজ করবে।
৫) টেলিকম, ইন্টারনেট পরিষেবা, কেবল সম্প্রচার, তথ্য-প্রযুক্তি পরিষেবা চালু থাকবে। তবে অধিকাংশ কর্মীকেই বাড়ি থেকে কাজের কথা বলা হয়েছে।
৬) খাবার, ওষুধ, চিকিত্সা সরঞ্জামের অনলাইন ডেলিভারি চালু থাকবে।
৭) বিদ্যুৎ উত্পাদন ও সরবরাহ পরিষবা, মূলধনী এবং ঋণের বাজার খোলা থাকবে। তবে, তা সেবি অনুমোদিত হতে হবে।