—তুমি তো দেখছি বাসনটাও মাজতে পার না ভালো করে!
হাসতে হাসতে ইংরেজিতে বলেছিল ক্যাথারিন। ইতালির মেয়ে। কলকাতায় এসেছিল গবেষণা করতে কালীপুজো নিয়ে। অমৃতের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে যাওয়াটা বেশ আচমকা একটা বিষয়। অমৃত পেশায় সাংবাদিক। মাস্টার ডিগ্রিটা করেই ঢুকে গিয়েছে কাগজে। পিএইচডি আর সংসারের অভাবে করা হয়নি। তাদের ব্যুরো চিফ উৎপলদার মেয়ের বন্ধু ক্যাথারিন। মেয়ে থাকে ইতালিতে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে। উৎপলদার সঙ্গে সেই সূত্রে যোগাযোগ। উৎপলদা তাকে বলেছিল, ‘ওকে ক’দিন সময় দিতে হবে তোমাকে। মস্তানদের পুজোর জায়গাগুলো দেখাবে। কথা বলাবে।’
—অফিস?
—তুমিও লিখবে এই নিয়ে। বিটেও থাকবে, ওকেও হেল্প করে দেবে।
সেই শুরু। তখন কলকাতায় সবে নতুন শতক এসেছে। বিশ লিখতে অনেকেই উনিশ লিখে ফেলছে তখনও। ক্যাথারিন তার মধ্যে এল। তার সারাক্ষণের সঙ্গী একটা ভিডিও ক্যামেরা আর ল্যাপটপ। অমৃতের কম্পিউটারে বসলে ভয় করে। নিতান্ত মেল করার জন্যও সাইবার কাফেতে গিয়ে ছেলেবেলার বন্ধু বাণীকে ডাকে। বাণী প্রাইভেট কলেজ থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু চাকরি জোটেনি বলে সাইবার কাফেতে কাজ করত। সে এসে প্রত্যেকবার আইডি আর পাসওয়ার্ড দিয়ে মেল খুলে দিলে অমৃত সন্তর্পণে টাইপ করত। বাংলা মাধ্যমের ছেলে, ইংরেজিটা খুব যে ভালো জানে তাও নয়। কোনক্রমে ইজ, ওয়াজ, আর, ওয়্যেরের দিকে কড়া নজর রেখে মেল করত। সেই ছেলেকে ক্যাথারিনের সঙ্গে ইংরেজিতে সারাক্ষণ কথা বলতে হবে!
প্রথমদিন ভাবনাটাই ঘামিয়ে দিয়েছিল। ক্যাথারিন ছয় ফুটের দিকে, সে পাঁচ ফুট সাড়ে পাঁচ। তার মুখচোখে মিশে আছে মঙ্গোলয়েড থেকে ভূমধ্যসাগরীয় মানবগোষ্ঠীর অবদান। ক্যাথারিন দৃশ্যতই নর্ডিক। অন্তত তার তাই মনে হতো ওই নীল চোখ দেখে। বেশিক্ষণ তাকাতেও পারেনি অস্বস্তিতে। কিন্তু উপরওলার আদেশ। ট্যাঁকে করে ক্যাথারিনকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে।
একবার গিয়েছে ক্রিক রো-তে। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের একদা ডন ভানু বোসের পাড়া। ডন কথাটা বলতেই ক্যাথারিন বলে ওঠে,
—মাফিয়া?
—না, মাফিয়া তোমাদের দেশে। আমাদের এখানে ডনই বলে।
—ডন তো তোমাদের দেশের ভাষা নয়। তাহলে বল কেন?
বোঝো ঠ্যালা। সে সাংবাদিক বলে ‘ডন’ কবে থেকে এসে এদেশে জুড়ে বসল তাও জানবে? তার উপরে তার ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করবে? অবশ্য ক্যাথারিনও অমনই ইংরেজি বলে। তবুও ডন কেন তাদের ভাষায়, এ নিয়ে মাথা চুলকিয়েও সে বের করতে পারল না উত্তর। পর্তুগিজ না স্প্যানিশ শব্দ তাও বলতে পারল না। শেষে বলল, ‘আসলে আমরা বলি মাস্তান।’
—ম্যাসট্যান? এ কোন ভাষার শব্দ? বেঙ্গলি?
অমৃত দেখল বিপদ বাড়ছে। সোজা কাজের কথায় চলে এল। জানাল, পরে এগুলোর উত্তর দেবে।
ক্রিক রো-র এক পুরনো বাসিন্দাকে ধরেছিল অমৃত। সে ভানু বোসের কালীপুজোর কাহিনি বলবে, আর ক্যাথারিন রেকর্ড করবে। প্রশ্ন কিছু থাকলে সে ক্যাথারিনের ভাঙা ইংরেজির বাংলা করে দেবে। বাসিন্দাটি ইংরেজিতে বলতে পারবেন না। বাংলাতেই বলবেন। শুনে ক্যাথারিন তাকে বলেছিল তাহলে যেন সে ট্রান্সস্ক্রিপ্টটা করে দেয়। তার জন্য সে টাকা দেবে আলাদা করে। একটু হতভম্ব হয়েছিল অমৃত। টাকার কথা তার মাথাতেও আসেনি। টাকা লাগবে না সে জানিয়ে দিল। উৎপলদা টাকার বিষয় থাকলে বলত। তাঁর অনুমতি ছাড়া এ নিয়ে সে কথা বললে তিনি কী ভাববেন কে জানে!
—এইখানে ছিল ভানু বোসের গ্যারাজ।
বলে একটি জায়গা দেখিয়ে দিল লোকটি।
—আর ওইখানে ছাড়া থাকত ওর অ্যালসেশিয়ানটা।
তোড়ের মতো বলে চলেছিল লোকটি। চারপাশে একটু একটু করে ভিড় জমছে।
—ভানু বোস, যখন অ্যামবাস্যাডর ছোটাত সে যেন এরোপ্লেনকে পাল্লা দিয়ে। আবার সেই ভানু বোসই দুহাতে স্টেনগান চালাত। ঢ্যার ঢ্যার ঢ্যার ঢ্যার ঢাঁই। বাপরে। কে টক্কর নেবে! গোটা বাংলাতে তখন ভানু বোসের দল ছড়িয়ে। যাবতীয় অস্ত্র-চোরাচালানে যুক্ত তারা। মস্তানি, ডাকাতি, খুন তো আছেই। অস্ত্র আসত আর জমা হতো ক্রিক রো-তে। যেখানে যেখানে অস্ত্র পোঁতা থাকত তার ধারেপাশেই ঘুরত অ্যালশেসিয়ানটা। কাছে কাউকে দেখলেই দাঁত দেখাত গরগর করে। ভানু রণ-পা চড়তেও দড় ছিল। ছাদের উপর দিয়ে রণ-পা চড়ে চলে গিয়েছে কতবার পুলিস কিংবা অন্য গুন্ডাদের হাত এড়িয়ে।
আর পুজো? সে এক পুজো বটে। জলসা করত বটে ভানু বোস। যত নামকরা গায়ক-গায়িকারা তো আসতই, মাঝরাতে আসতেন উত্তমকুমার। গুরু গুরু। ধর্মেন্দ্র, রাজেশ খান্নাকেও এনে দেখিয়ে দিয়েছে ভানু বোস। কিন্তু তারপরও গুরু হল গিয়ে গুরু। উত্তমকুমার। এক থেকে দশ।
এতবার উত্তমকুমার নামটা শুনে রেকর্ডিং বন্ধ করে হাতের ক্যামেরাটা নীচের দিকে করে ক্যাথারিন তাকাল।
—উটট্যামখুমা? আরেকজন ডন?
অমৃতকে প্রশ্নটা করল। যে লোকটি বলছিল সে একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চারপাশে হাসির হুল্লোড় উঠল। অমৃত কোনওক্রমে ধামাচাপা দেবার জন্য বলেছিল, ‘আগে সব রেকর্ড করে নাও, পরে বুঝিয়ে দেব।’
তারপরে অতিকষ্টে লোকটার হুঁশ ফিরিয়ে রেকর্ডিং আবার চালু হয়েছিল। সে রাত্রে বাড়িতে খেতে বসেও নিজের মনে হা হা করে হেসে উঠেছিল অমৃত। উত্তমকুমার হলেন ডন। মা তাকে বলেছিল,
—খেতে খেতে পাগলরা হাসে।
হেসেছিল ক্যাথারিনও। দু’দিন পরে নিউ আলিপুরে ক্যাথারিনের আস্তানায় গেছিল সে। সেটা এক খেলার মাঠের কর্মকর্তার বাড়ি। উৎপলদা আস্তানাটা কেমন করে জোগাড় করে দিয়েছিল অমৃত জানে না। তবে সাংবাদিকদের কারও কারও অনেক ক্ষমতা হয় তা জানে। সেখানে গিয়ে ক্যাথারিনকে বুঝিয়েছিল উত্তমকুমার তাদের দেশের মারচেল্লো মাস্ত্রোইয়ান্নির মতো একজন বিরাট স্টার। তার আগে অবশ্য নামটার ইতালীয় উচ্চারণ জেনে নিয়ে গিয়েছিল তাদের কালচারাল বিটের বিমলেশদার কাছে। বিমলেশদা, এ সব সংবাদে বিশেষজ্ঞ। আর সে একবার মাত্র একটা সিনেমাতে মারচেল্লোকে দেখেছে। সেই বিদ্যা নিয়েই তাকে বোঝাতে হয় উত্তমকুমার আর মারচেল্লোর ইক্যুয়েশন।
উত্তমকুমার যে আসলে একজন ফিল্মস্টার, শুনে খাটের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হেসে গড়িয়ে গিয়েছিল ক্যাথারিন। তার সোনালি চুলের ঝর্ণাও গড়াচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সোনালি নদী বুঝি কোনও। খাটের কাছের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতেই অমৃতের হঠাৎ ভয় করে। মনে হয় যেন সে এক জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটছিল। চারদিকে কুয়াশা আর ঘন পাইন, ফারের সারি। ছোট্ট একটা মাটির পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে তার মধ্যে দিয়ে আপন আনন্দে। সে তন্ময় হয়েছিল। আচমকাই যেন ঘোর কাটে। হোঁচট খায়। তারপরে চারদিকে তাকাতে থাকে। কোথায় সে? কতদূর চলে এল? কোন পথে ফেরা? অমনই এক বিপন্নতা অমৃতের মনে বাসা বাঁধে হঠাৎই। ক্যাথারিনের গম রঙা কাঁধটা অনেকটা উন্মুক্ত। হাফপ্যান্টে লম্বাটে কমনীয় পা। আর সবচেয়ে বেশি করে সুতোর মতো ফিতে দেওয়া জামার মধ্যে থেকে ক্যাথারিনের হাত দুটো চোখে পড়ছে। নগ্ন নির্জন হাত। জীবনানন্দের কথা মনে পড়ছিল।
ঠিক হচ্ছে না কাজটা!
তাড়াতাড়ি নিজেকে সামাল দিতেই যেন ক্যাথারিনের কাছ থেকে ক্যামকর্ডারটা চেয়ে নিয়েছিল। চালিয়ে শুনবে আর ট্রান্সস্ক্রিপ্ট করবে। নিয়ে চলে গেল বসার ঘরে। অজুহাত, টেবিলে রেখে লিখবে। অনেকক্ষণ, প্রায় সোয়া একঘণ্টা চেষ্টার পরে সে ইংরেজিতে লোকটার বক্তব্যটা মোটামুটি দাঁড় করাল। এতক্ষণ ক্যাথারিন আর কোনও কথা বলেনি। শোয়ার ঘরে বসে কিছু লিখেছে। তারপরে চলে এসেছে বাইরের ঘরে। সেখানে জানলার পাশে কিছুক্ষণ বসে ল্যাপটপটা খুলে কাজ করছিল। লিখতে লিখতেই একবার দেখে নিয়েছিল অমৃত। ক্যাথারিন কলকাতার এবং ক্রিক রো-র আশপাশের যে সব জায়গা আগের দিন শ্যুট করেছে সেই সব ফুটেজ দেখছে। যে ফুটেজটা সে ক্যামেরাতে চালিয়ে দেখছে তাও নিশ্চয়ই আছে ল্যাপটপে। কিন্ত অমৃত ল্যাপটপ ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছিল বলেই ক্যামেরাটা চেয়েছে। সোজা বলেই দিয়েছে তার কম্পিউটারে অভ্যাস নেই একদম।
প্রায় সোয়া একঘণ্টার পর তার কাজ যখন শেষ হয়েছিল তখন জানান দিয়েছিল ক্যাথারিনকে। ক্যাথারিন তার খাতাটা তুলে পড়তে শুরু করেছিল। একটু পড়েই বলল, ‘হাতের লেখাটা সবটা পড়তে পারছি না। তুমি টাইপ জান? করে দিতে পারবে?’
অমৃত তখন ভাবছিল সে ওখান থেকে বেরিয়ে আবার অফিসে যাবে। কপিটা লিখবে। কিন্তু টাইপ করতে বসলে তো - ! আবার হাতের লেখা না পড়তে পারলেও মুশকিল। ফোন করেছিল উৎপলদাকে। উৎপলদা টাইপটা করেই দিয়ে আসতে বলল যখন সে খানিক আশ্বস্ত হল। বস বলে দিলে আর চিন্তা থাকে না। বসে গেল টাইপ করতে। এক এক আঙুলে টাইপ করছে। অভ্যাস নেই বলে। করতে করতে কতক্ষণ গিয়েছে সময় খেয়াল করেনি। ঘরের আলো জ্বলে গেছে। সন্ধে হয়ে গেছে বুঝেছিল। কিন্তু ক্যাথারিন যখন তার সামনে একটা প্লেট নামিয়ে রাখল, হালকা খাবার ভর্তি, তখন মনে হল সন্ধেটা ভালোই হয়েছে তাহলে।
—তুমি রাতে এখানেই খেয়ে যেও!
আবার উৎপলদাকে ফোন। তাঁর আশ্বাস পেতে সে রাজি হয়ে গেল। ক্যাথারিন বেশিদিন এখানে থাকবেও না। কাজেই কাজ গুছোনো দরকার। খানিকটা টাইপ হতে ক্যাথারিন তাকে বলল খাবার আনতে হবে। উঠল লেখা রেখে। দোতলার ফ্ল্যাট। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে চলল স্টেশনের কাছাকাছি চীনা এক রেস্তরাঁর দিকে। ওইটাই চেনে অমৃত এদিকে। খাবার নিয়ে তারা রেস্তরাঁর ফুটে পা দিয়েছে আর একটি অল্প বয়সি ছেলে ক্যাথারিনের হাতের ব্যাগটা টান মেরে নিয়ে দৌড়তে যাচ্ছিল। অমৃত ছিল ক্যাথারিনের সামনে বাঁপাশে। ডানপাশে ছেলেটা টান মেরে দৌড় দিয়েছে। অমনি পা-টা বাড়িয়ে দিল অমৃত। ছেলেটা আছাড় খেয়ে পড়ল। ফুটবল ভালোই খেলত অমৃত। রিফ্লেক্সটা কাজে এল ক্যাথারিনের আর্ত-চিৎকারে। যথারীতি ভিড়। যথারীতি মারার জন্য উদগ্র মানুষ। কাছেই থানা। অমৃত, ক্যাথারিনকে নিয়ে থানাতেই গেল। লোকজন ধরে নিয়ে এল ছেলেটিকে। সম্ভবত ড্রাগের নেশাক্রান্ত। নইলে ওই এলাকায় অমন ভরসন্ধেতে কেউ ছিনতাই করতে চাইত না। থানাতে সব লিখিয়ে তারা যখন ফিরছে ক্যাথারিনের ঘরের দিকে, সে তার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
—ম্যাসট্যান।
ফিরেছিল আস্তানায়। কথা হচ্ছিল প্রথমে। ক্যাথারিনের মা নেই। বাবা আমেরিকাতে। সে থাকত তার দিদিমার কাছে। দিদিমাও গত হয়েছেন। তার ইতালিতে বড় একলা লাগে। হয় সে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে চাকরি নিয়ে সেটল করবে, নয় বেরবে অন্য অন্য দেশ ঘুরতে। কী করবে এখনও জানে না। অমৃতের মা ছাড়া কেউ নেই। তার আপশোস পিএইচডি-টা করে নিলে হয়তো পড়ানোর কাজ পেত। কথার মধ্যেই তারা একটু করে পানীয় নিল। একটুটা বেড়ে যাচ্ছে দেখে খাবার কথা বলল অমৃত। খেয়ে ক্যাথারিন তাকে বলল গা ধুয়ে আসবে। অমৃতের মনে হল তখন বাসন মাজার কথা। ক্যাথারিনের তো তাদের মতো আলাদা করে কাজের লোক নেই। বাসন মাজছিল সে বেসিনে রেখে। ততক্ষণে গা ধোয়া হয়ে গেছে ক্যাথারিনের। রাত্রের পোশাকে তাকে আরও উদ্ভাসিত লাগছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আবার বাসনে মন দিয়েছিল অমৃত। তখনই শুনল ক্যাথারিন বলছে সে বাসন মাজতে পারে না। জানতে চাইছে সব ইন্ডিয়ান বয়েজরাই এমন নাকি! উত্তর দিতে ঘাড় ঘোরাল আবার অমৃত। একেবারে মুখোমুখি তারা। অস্বস্তিতে অমৃত বলল, ‘তোমার নীল চোখের দিকে আমি তাকিয়ে থাকতে পারি না।’
—কেন?
—গভীর সমুদ্রের মতো লাগে। হাতছানিও দেয়, আবার ডুবিয়ে মারবার ভয়ও দেখায়।
ক্যাথারিন তার একেবারে সামনে এসে চোখ দুটো চোখে রেখে বলেছিল, ‘কিস মি!’
চারমাস চলে গিয়েছে তারপর। ক্যাথারিনের কথা ভোলার উপায় নেই। অফিসে চোখের সামনে উৎপলদাকে দেখলেই মনে পড়ে। ভাবে, উৎপলদা কিছু জেনেছে কি না কে জানে! জানলে নিশ্চয়ই বলত। বাড়ি ফেরার পথে যেত একবার করে সাইবার কাফেতে। মেল এল ক্যাথারিনের? একটা এসেছিল। সাধারণ কথা লেখা। সে রাত্রের ঘটনার উল্লেখও নেই। সেও অস্বস্তিতে আর মনে করায়নি উত্তরে। তারপর তার যাওয়াটা নিছকই হতো। মেল আসে না আর। সেও মেল করত না। যাওয়াও বন্ধ করল।
হঠাৎ একদিন উৎপলদা ধরলেন।
—আজকেই মেল চেক করবে। মেয়ে বলল, ক্যাথারিন কিছু মেল করেছে, এক সপ্তাহ হয়ে গেল তুমি রিপ্লাই-ই দাওনি!
কেমন একটা ধুকধুকে উত্তেজনা নিয়ে সাইবার কাফেতে গিয়ে বসেছিল সে। বাণীর সাহায্য নেয়নি। নিজে নিজেই মেল খুলেছিল। কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি খোলার মতো উত্তেজনা অনুভব করছিল সে। খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিশ্চয়ই। মেলটা খুলল। একটা ছবি। সমুদ্রের ধারে ক্যাথারিন। বিকিনিতে। হাসছে উচ্ছ্বাসে। সঙ্গে একটি ছেলে। জড়িয়ে আছে তাকে। ক্যাথারিন মেলে লিখেছে, তার বয়ফ্রেন্ড।
অঙ্কন: সুব্রত মাজী