টালির চালার ফুটো দিয়ে রোদগুলি ঘুলঘুলি হয়ে পড়ছে যে ডাপখানায়, বাঁশের তৈরি সে ডাপখানাতেই রাখা আছে হাঁড়িটা। একদিকের কানা বসানো। আরেক দিকের কানার কিছুটা ভাঙা। ঢাউস পেটের কয়েক জায়গা টুস্কা। তাছাড়াও সমস্ত ভাঁজ-বাঁকে কালো হয়ে আছে মরচের দাগ। আরতিবালার চার কুড়ি এক পাঁচ বয়সের থুত্থুরে গালখানা আর এই টুস্কাপড়া হাঁড়িখানার গা-গতর একই। ঘোলা চোখগুলোও হাঁড়ির টুস্কাপড়া ছোপ ছোপ কালো দাগের মতো ঘুলঘুলে। অথচ এই দু’খানা চোখ দিয়ে আরতিবালা যে দুনিয়া দেখেছে, তা এই পৃথিবীর খুব কম জনই দেখেছে! সে দুনিয়াও এই হাঁড়িটার মতো কখনও তুবড়ানো কখনও টুস্কাপড়া অথবা কখনও কানা ভাঙা আনাকানি! আরতিবালা মনে করে, এই ভাঙাচোরা তুবড়ানো-থ্যাবড়ানো টুস্কাপড়া জীবনখানা কোনও মানুষ নিতে চায়নি, হালাভোলা সাদাসিধে মানুষ দেখে তাকেই অর্পণ করেছিলেন ভগবান। পৃথিবীতে পাঠানোর আগে যদি ভগবান একবারও তাকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি কি এই জীবনখানা নিতে চাও আরতিবালা? আরতিবালা তৎক্ষণাৎ বলে দিত, কক্ষনওই নয়। এ তো পোকামাকড়ের জীবন? আমি কেন নিতে যাব? অথচ ভাগ্যের পরিহাস, সে হাঁড়ি ঠেলা জীবনখানাই আরতিবালার জন্য বরাদ্দ করেছিলেন ভগবান! পায়ের গিঁটে আর খুলির হাড়ে সে জীবনের হিসেবগুলেন লেখা আছে। মরণের পর ভগবান যদি সেই কাঙাল জীবনখানার হিসেব চান তখন ওই পায়ের গিঁট আর মাথার খুলির দাগগুলোর সে হিসেব দেবে। আর তার রোদপোড়া তামাটে মুখখানা ভগবানকে বলবে, ‘হিসেব তো আমারই তোমার কাছে নেওয়ার কথা, ভগবান? কী দরকার ছিল কোলে তিন-তিনটে বাচ্চা রেখে দিয়ে আমার একমাত্র রোজগেরে স্বামীটাকে ছিনিয়ে নেওয়া? ওই একখানা প্রাণ না নিলে কি তোমার হতো না? আমার খাটুনির ঘাম রাখার জায়গা কি তোমার দেবলোকে আছে? সব পাত্র উপচে পড়বে তবুও ঘাম ফুরোবে না।’
মাঝেমধ্যে আরতিবালা হাঁড়িটার দিকে তাকায়, হাঁড়িটাও তার দিকে মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। আরতিবালা তখন মনে মনে ভাবে, তোর যেদিন যমের ডাক আসবে আমারও সেদিন যমের ডাক আসবে। তারপর হাঁড়িটার কাছে যায় সে। জড়ানো চামড়ার আঙুলগুলো হাঁড়িটাকে ছোঁয়। আর ফিসফিস করে বলে, খুব কষ্ট করেছিস। এখন আরাম কর। তুই ছিলি বলেই আমার সন্তানগুলোর পেটে চাড্ডে ভাত গেছে। কথাগুলো বলতে বলতে ফুঁপিয়ে ওঠে আরতিবালা। তার ছানিপড়া চোখগুলো ছলছল করে ওঠে। একটা অশ্রুবিন্দু হাঁড়িটার গায়ে ঝরে পড়লে সে বলে ওঠে, চোখের জলটুকু ছাড়া তো তোকে আর কিছু দিতে পারলাম না। পরকালে তুই আমার পেটের সন্তান হয়ে জন্মাস। তারপর হাঁড়িটাকে ডাপের ফাঁক থেকে তুলে কোলে নেয় আরতিবালা। বুকে জড়িয়ে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদে। আরতিবালা তখন বুকে আঁকড়ে থাকা হাঁড়িটার মিনমিন কথাগুলোও শুনতে পায়, হাঁড়িটা যেন তাকে বলছে, এখন কাঁদার সময় নয় আরতিবালা। এখন সুখের সময়। কাঁদার সময় চলে গেছে। এখন দাওয়ায় দু’পা ছড়িয়ে এক খিলি সুখের পান চিবোনোর সময়।
অতটা সুখ কপালে না জুটলেও হাড়ের গিঁটে বাতের ব্যামু আর বুকের কলজেয় ধুকানি-খুকানি তিন পেয়ে জীবনখানায় দু’বেলা দু’মুঠো সুখের ভাত জুটছে। আর জুটেছে নাতি-নাতনির কোলেপিঠে ওঠার আদর-আহ্লাদ। অথচ নিতাই হালদার যখন মারা যায় তখন আরতিবালার কাছে পৃথিবীটা ধু ধু শ্মশান হয়ে উঠেছিল। সে চোখে ভাত দেখতে পেত না, দেখতে পেত শ্মশানের চিতা! সবসময় গনগন করে জ্বলছে! পাশের গাঁয়ের গেরস্ত মনছুর মিয়াঁর বউ নুরছিয়া বিবি বলত, মাছওয়ালি আরতিবালার জীবদ্দশাতেই দাফন-কাফন হয়ে যাচ্ছে! আরতিবালা দেখত, ভরা শ্রাবণে গ্রামের কাদা রাস্তায় যখন তার মাছের হাঁড়ি মাথায় থাকা পা দু’খানা ভ্যাদভেদে কাদায় হাঁটু অবধি পুঁতে যেত তখন পা নয় আসলে তার ভাগ্যখানা মাটিতে পুঁতে গেছে! তখন আরতিবালা ভগবানকে দুষত, পা দু’খানা কেন আস্ত দেহটাকেই পুঁতে দাও। কষ্ট থেকে সারাজীবনের মতো মুক্তি পেয়ে যাই। ভগবান তার সে কথা যেন শুনতে পেতেন না। আরতিবালা আধখানা-পুনখানা বেলা মাছ বিক্রি করে যখন বাড়ি ফিরত তখন ছেলেমেয়েগুলোর মুখের দিকে তাকাতে পারত না। তার ছেঁড়া-পোড়া জানখানা ডুকরে উঠত। মনে হতো, এমন জোরে কাঁদি, সে কান্না শুনে যেন জগতের সব মানুষ কালা-বোবা হয়ে যায়!
....
কথাটা কি এমনিই বলল মেজবউ? না বলতে হয় তাই বলল? অথচ কথাটা আরতিবালার কাছে আর পাঁচটা শব্দ-বাক্য নয়। কথার কথাও নয়। একটা গোখরো সাপের ছোবল! আরতিবালা এই একখানা কথাই এ জীবনে না শুনতে চেয়েছিল। ‘পাপ-পুণ্যের বিচারে তুমি নরকবাসী হলে আরতিবালা’ ভগবানের বলা এমন কথার চেয়েও সন্ধ্যার বলা কথাটা কষ্টের। অথচ কথাটা আহামরি তেমন কিছুই নয়। একেবারেই সাদাসিধে। সন্ধ্যা আরতিবালার ছোটছেলের বউ না হয়ে অন্য কোনও শাশুড়ির ছোটছেলের ছোটবউ হলেও কথাটা বলত। আরও অনেক আগে কথাটা বললেও মন্দ কিছু হতো না সন্ধ্যার। সে কোনও বড়সড় অপারাধের অংশীদারও হতো না। এ আর এমন কী? সব পুরনো জিনিসকেই তো একদিন নতুনে বদলে যেতে হয়। আরতিবালাও বাড়ির পুরনো কত কিছুকে ভাঙরির দরে বিক্রি করে দিয়ে সে টাকায় নতুন কত কিছু কিনেছে। বিনিময়প্রথা তো জগতে আজ নতুন নয়? কিন্তু আরতিবালার কাছে সেই জিনিসটাই বুকের হাড় ছাড়িয়ে নেওয়ার শামিল! তাও আবার এক-আধখানা হাড় নয় বুকের সব ক-খানা হাড়! অথচ অত কিছু ভেবে কথাটা বলল না সন্ধ্যা। রান্নার কড়াইখানা কিনতে গিয়ে কিছু টাকা কমতি পড়াই কথাটা বলল। প্রথমে বাসনওয়ালা লোকটিই বলল, ‘ঘরে পুরনো বাতিল কোনও বাসনকোসন নেই? থাকলে দেন, কিনে নিচ্ছি।’ আর অমনি সন্ধ্যার মাথায় এল শাশুড়ির ঘরে পড়ে থাকা পুরনো মাছের হাঁড়িটা! বাসনওয়ালা লোকটিকে সন্ধ্যা বলল, ‘থামেন, শাশুড়িমার ঘরে একখানা অনেক দিনের পুরনো টুস্কা পড়া হাঁড়ি আছে। নিয়ে আসচি।’ কথা বলতে গেলে এই ক’টা শব্দই। আর তাতেই ধড়াক করে উঠল আরতিবালা। চিৎকার করে বলে উঠল, ‘খবরদার। না, ওই হাঁড়িতে কেউ হাত দিবা না।’ শাশুড়ির এমন আচরণ দেখে অবাক হল সন্ধ্যা। কথাটা যেন আরতিবালা বলল না, কেউ তার ঠোঁটে কথাটা ধরে বসেছিলেন, তিনিই বললেন! আরতিবালার চোখমুখও মুহূর্তে কেমন বদলে গেল! সংসারে এত অভাব গেছে অনটন গেছে তবুও শাশুড়িকে এমন রূপে দেখেনি সন্ধ্যা। যেন স্বয়ং যমরাজ তাঁর বাহন মহিষ থেকে নেমে আরতিবালার বুকের ওপর গেঁড়ে বসেছেন তাঁর আত্মাখানা হরণ করতে! যমরাজের কালদণ্ডের আঘাত আর পাশ দ্বারা ক্ষতবিক্ষত রূপ আরতিবালার চোখেমুখে! আর পাঁচটা শাশুড়ির ছেলের বউরা যেমনভাবে বলে ঠিক তেমনভাবেই বলল সন্ধ্যা, ‘হাঁড়িটার তো আর কুনু কাজ নাই, মা। খামোখা জায়গা দখল করে আছে।’
‘খামোখা জায়গা দখল করে আছে! ওইটুকুন জায়গার লেগি তুমাদের হিংসে হচ্চে? ঠিক আছে, আজ থেকি আমি যে জায়গাটুকুতে শুই সেই জায়গাটুকুতে হাঁড়িখানাও থাকবে। বাকি গুটা ঘর তুমরা লিয়ি লাও গা।’ জলজ্যান্ত শিঙ্গি মাছের কাঁটা কেটে দেওয়ার পর ছেড়ে দিলে যেমনভাবে লাফায় আরতিবালাও তেমনভাবে লাফাল। তার থড়বড়ে হাড়ের ভারে পায়ের তলার মাটিও কেঁপে উঠল। একমাত্র জমিনের এই মাটিই আরতিবালার শরীরের হাড় আর কলকব্জার কম্পন টের পায়। এই মাটি পূর্বে আরতিবালার কষ্টে কতবার কেঁদেছে তার ইয়াত্তা নেই! যখন তার মাথার ওপর থেকে আকাশটা সরে গেছিল, হাতের কাছের শক্ত খুঁটিটা ভেঙে গেছিল তখন তাকে আঁকড়ে ধরেছিল পায়ের তলার এই মাটিটা আর বুক ভরে নেওয়া হাওয়াগুলো। হাওয়াও মাঝেমধ্যে উলুথুলু হয়ে যেত। কিন্তু মাটি? মাটি কখনওই আরতিবালাকে ছেড়ে যায়নি। এই সদানন্দপুর গ্রাম আর তার আশপাশের দশ গাঁয়ের এমন কোনও রাস্তা নেই, যে রাস্তার মাটি আরতিবালার পায়ে লাগেনি! জুতোহীন সে পায়ের তালু হেঁটে হেঁটে মাটির শক্ত ঢিল হয়ে গেছিল! আরতিবালা বলত, গাছের কাঁটা তো দূরের কথা লোহার ছুঁচ-পেরেকও ঢুকবে না এ পায়ে। কেউ যদি তাকে বলত, ‘তুমি তো হেঁটে আর ঘেঁটেই মরে যাবে!’ আরতিবালা তখন তাকে বলত, ‘হেঁটে হেঁটে আমার পায়ের তালু এমন শক্ত হয়েছে তাতে কোনও ছুঁচ-কাঁটা হাঙবে না আবার মাছের হাঁড়ি বয়ে বয়ে মাথার খুলিটা এমন শক্ত হয়েছে যমের কোনও কালদণ্ডেও ঘা লাগবে না, আমাকে মারবে কেডা?’ আরতিবালার চোখের জলও যেন ফুরিয়ে যাওয়ার মুখে। জীবনে কম তো কাঁদেনি সে! ঈশ্বর একজন মানুষের জন্য যতটা পরিমাণ অশ্রু বরাদ্দ করেন, তার প্রায় সবটুকুই শেষ হয়ে গিয়েছে আরতিবালার। সেজন্য আরতিবালা এখন কাঁদলে চোখ দিয়ে অতটা অশ্রু বের হয় না, যতটা তার বুকখানা হাউমাউ করে ওঠে।
সন্ধ্যা বলল, ‘জায়গা দখলের কথা আমি বুলিনি মা। আমি বুলতে চাইছিলাম, ও হাঁড়িটা তো আর কুনু কাজের নয়, তাই ভাংড়ির দরে বেচে দেওয়ার কথা বুলছিলাম। চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা দর পালে নতুন কড়াইটার বকেয়া দামটুকু মিটে যাতোক। ধার-দেনা রাখতে আমার ভালো লাগে না।’ সন্ধ্যার কথায় আরতিবালা কিছুটা দম মেরে থাকল। মনের মধ্যে উলুথুলু হতে লাগল ‘হাঁড়িটা তো আর কুনু কাজের নয়’ সন্ধ্যার বলা কথাটা। আরতিবালা কী করে বোঝাবে, এই হাঁড়িটা ছিল বলেই তার ইহকালের জগৎখানা বেচে আছে! চারখানা পেট এখনও দুনিয়ার ভাত চোখে দেখতে পাচ্ছে! মানুষটা মরে যাওয়ার সময় কিছুই দিয়ে যেতে পারেনি আরতিবালাকে, এই একখানা মাছের হাঁড়ি ছাড়া। নিতাই জন্ম থেকেই দরিদ্র ছিল। সেই মাছ বেচে চাল কিনে খাওয়া সংসারের লোক। না ছিল জমিজমা, না ছিল আড়তদারি। কিন্তু বউ আরতিবালার প্রতি ভালোবাসার অভাব ছিল না। নিতাই মাছ বিক্রি করে যখন বাড়ি ফিরত তখন কারও জন্য কিছু না নিয়ে আনতে পারলেও আরতিবালার জন্য লিচিনপুরের হাট থেকে টিপের পাতা আর আলতার শিশি নিয়ে আসত। আরতিবালা সে টিপ কপালে দিয়ে আর আলতা পায়ে যখন রাতের বিছানায় বসে থাকত নিতাইয়ের ভেতরটা তখন উফল মাছের মতো খলবল করে উঠত। এই খলবল শব্দখানি আরতিবালার পরবর্তী হাভাতে জীবনখানাকেও ভাসানের নদীর মতো গতিময় রেখেছিল। আরতিবালা যখন হাঁড়িতে মাছ নিয়ে খেতালে যেত, তখন এই খলবল শব্দখানিই শুনতে চাইত। হাঁড়ির ভেতর থেকে মাছ নড়ার খলবল শব্দ শুনলে আরতিবালা ঠাহর করত, মাছগুলো তাজা আছে! তখন তার ভেতরের আনন্দটুকু দ্বিগুণ হয়ে যেত। আর মাছ বেচে যখন বাড়ি ফিরত সে তখন তার নাবালক শিশুগুলো ছুটে আসত হাঁড়িটার কাছে। হাঁড়িটা তখন তাদের কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে আনন্দের বস্তু। তারা উদগ্রীব হয়ে উঠত, মা হাঁড়ি থেকে আজ তাদের জন্য কী মজার খাবারই না বের করে! এক-আধদিন চাল কেনা না হলেও শিশুগুলোর জন্য পাউরুটি-গজা কিন্তু কিনে আনতে ভুল করত না আরতিবালা। মুখখানা ভার করে আরতিবালা হঠাৎ ঘরের দিকে ছুটল। কিছুক্ষণ পর ‘হড়াম’ করে দরজা লাগার শব্দ কানে এল! সন্ধ্যা ভয় পেল! অভিমানের বশে শাশুড়িমা খারাপ কিছু ঘটিয়ে বসল না তো! পাশ থেকে বড়বউ মালতি বলল, ‘মায়ের হাঁড়িটাকে বেচার কথা বুলা তোর ঠিক হয়নি, ছোট। শাশুড়িমার কাছে ওটা শ্বশুরমশাইয়ের সবচেয়ে বড় স্মৃতি।’ সন্ধ্যা বলল, ‘আমি কি অত কিছু ভেবে বুলিচি?’ মালতি তাও কিছুদিন শাশুড়ি আরতিবালার মাছের হাঁড়িটাকে সম্বল করে নুন কিনতে পান্তা ফুরোনোর জীবনটাকে দেখেছে। কিন্তু হালের বউ সন্ধ্যা তার কিছুই দেখেনি। দুই বউয়ে ধড়ফড় করে শাশুড়ি আরতিবালার ঘরের দিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় ‘খট’ করে দরজা খুলল আরতিবালা! কাঁখে সেই পুরনো টুস্কা পড়া হাঁড়িটা! সন্ধ্যা, মালতি আকাশ থেকে পড়ল! আরতিবালা থপথপ করে হেঁটে উঠোনে নেমে এল। তারপর মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘ক’টাকা বাকি?’ সন্ধ্যা আলগোছে বলল, ‘আটত্রিশ টাকা।’ আরতিবালা পেয়ারা গাছের শুকনো ছালের মতো তার জড়ানো চামড়ার হাতটা হাঁড়ির ভেতরে ঢোকাল। ঠিক যেভাবে খদ্দেরকে মাছ বিক্রির সময় হাঁড়িটায় হাত ঢোকাত সেভাবে। ফারাক বলতে গেলে খলবল করে জীবন্ত মাছ নড়ার শব্দটার বদলে ঝনঝন শব্দ হল। সবাই চোখ বড় করে দেখল, আরতিবালা হাঁড়িটার ভেতর থেকে নোট-খচ্চা মিলে কিছু টাকা বের করল। তারপর সন্ধ্যাকে বলল, ‘এখেন থেকি গুনতি করি আটত্রিশ টাকা বাসনওয়ালাকে দিয়ি দাও।’