গল্পের পাতা

গুপ্ত রাজধানী: দেবী যোগমায়া মন্দির
সমৃদ্ধ দত্ত

দ্বিতীয় আকবর শাহের দুর্ভাগ্য যে, পুত্র মির্জা জাহাঙ্গিরকে কিছুতেই বশে আনতে পারলেন না। মাথা ঠান্ডা রাখা যে, সাম্রাজ্য চালানোর সবথেকে বড় শর্ত, এটা সকলে বুঝতে পারে না। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে গিয়ে সর্বস্ব হারাতে হয়েছে, এই ইতিহাস মুঘল বংশে বহু দেখা যায়। এমনিতেই সম্রাট আকবর শাহ নিজের বড় পুত্র বাহাদুর শাহকে পছন্দ করেন না। তিনি তাই মনে মনে স্থির করেছেন যে পরবর্তী সন্তান মির্জা জাহাঙ্গিরকেই তখতে বসাবেন। তাঁর উত্তরাধিকারী হবে মির্জা। সমস্যা দুটো। প্রথমত মির্জা এই কৈশোর বয়স থেকেই যতরকম লাম্পট্য আর বিলাসিতা অর্জন করা সম্ভব, সবই করেছে। অতএব তাকে কতজন উজির অথবা সুবেদাররা মেনে নেবে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আর দ্বিতীয় সঙ্কট হল, ইংরেজরা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে যে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট দিল্লিতে এখন রয়েছেন, সেই আর্চিবল্ড সিটন এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। কারণ কী? কারণ এই ব্রিটিশ রেসিডেন্ট জানেন যে, যাকে মুঘল সম্রাট আকবর শাহ নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করতে চান, সেই মির্জা জাহাঙ্গির ওই পদে বসার যোগ্যই নয়। যথেচ্ছাচারী এক দুবির্নীত তরুণ। আকবর শাহ শেষবার ব্রিটিশ রেসিডেন্টকে একবার বোঝাবেন। সেই কারণে তাঁকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে লালকেল্লায়। ১৮১২। আলোচনা হচ্ছে নানাবিধ বিষয়ে। সবশেষে আবার সেই সিংহাসনের দাবিদার প্রসঙ্গ। আকবর শাহ জানিয়ে দিলেন যে, তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা মির্জা জাহাঙ্গিরকেই সিংহাসনে বসানোর। ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বললেন, আপনাকে আমি তো আগেই বলেছি যে, এ ব্যাপারে কোম্পানি ঩ভিন্ন মত পোষণ করে। আপনারা এই সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। যা নিয়ম, সেটাই পালন করতে হবে। বড় ছেলেকে সিংহাসনে বসান। অথবা অন্য কাউকে। কিন্তু মির্জা অনুপযুক্ত।   দ্বিতীয় আকবর শাহ নি঩জেও জানেন যে, এই ব্রিটিশ কোম্পানির শক্তি তাঁর সেনাবাহিনীর থেকে বেশিই। যখন তখন হুমকি দেয় এরা। অতএব কী আর করার আছে! আকবর শাহ মেনে নিলেন। তবে শঙ্কিত তিনি। কারণ, এই যে অগ্রজ বাহাদুর শাহকে উত্তরাধিকারী না করে অনুজকে পরবর্তী সম্রাট করার পিছনেও অনেকটা রয়েছে বেগম মমতাজ মহলের প্ররোচনা। আকবর শাহের বেগমদের মধ্যে এই মমতাজ মহলের দাপট সবথেকে বেশি। তাই তিনি সাফ জানিয়েছেন যে, তাঁর পুত্র মির্জা জাহাঙ্গিরকেই সম্রাট করতে হবে। আকবর শাহ রাজি হয়েছিলেন। কারণ একদিকে যেমন এই ছোট ছেলে মির্জা বিলাসিতায় মত্ত, আবার অন্যদিকে বড় ছেলে বাহাদুর শাহ কবিতা লেখা, ছবি আঁকা এসব অদ্ভুত অদ্ভুত কাজে ব্যস্ত। তাঁর দাপট নেই। হাঁকডাক নেই। শের শায়েরি করে আর ওইসব শায়েরদের সঙ্গে সময় কাটায়। এরকম কাউকে সিংহাসনে বসানো বিপজ্জনক। কিন্তু আকবর শাহের আর উপায় নেই। স্বয়ং কোম্পানি বাহাদুর বলে যাচ্ছে যে, তাদের মির্জাকে অপছন্দ। 
কিন্তু  পিতা মেনে নিলেও মির্জা কেন মেনে নেবে? সে  লালকেল্লার ছাদে চলে গেল। ব্রিটিশ রেসিডেন্ট আর্চিবল্ড সিটন যখন ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁকে লক্ষ্য করে মির্জা গুলি করল। প্রতিহিংসায় তার মাথা জ্বলছে। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হল সেই গুলি। আর্চিবল্ড দেখলেন তাঁর শরীরে না লাগলেও তাঁর দেহরক্ষী মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তৎক্ষণাৎ ঘোড়া ঘুরিয়ে আর্চিবল্ড লালকেল্লায় ফিরলেন। আর সম্রাটকে আদেশ দিলেন, আপনার ছেলেকে বলুন করজোড়ে ক্ষমা চা‌঩ইতে। আমাকে গুলি করার সাহস পায় কীভাবে? আকবর শাহ ছেলেকে বললেও মির্জা অনড়। সে বলল, প্রাণ থাকতে ক্ষমা চাইব না। আর্চিবল্ড ফিরে গিয়ে আবার এলেন  বিরাট বাহিনী নিয়ে। আর আকবর শাহের লালকেল্লা অবরোধ করে বললেন, মির্জাকে দিল্লিতেই রাখা চলবে না। আমরা ওকে নির্বাসনের নির্দেশ দিলাম। এলাহাবাদে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এই বিরাট বাহিনীর সামনে আকবর শাহ কিংবা মির্জার পক্ষে সত্যিই আর কিছু বাড়াবাড়ি করতে যাওয়া মানেই আত্মহত্যা। অতএব মির্জাকে নির্বাসনে যেতেই হল। 
দিন যায়। মাস যায়। বছর যায়। ছেলে কি আর ফিরবে না? কেমন আছে সে? ব্রিটিশদের জেলে? মমতাজ মহল প্রাণপণে ঈশ্বরকে ডাকছেন। পরপর দু’দিন আশ্চর্য ঘটনা। রাতে স্বপ্নে এলেন এক দেবী। এবং খাজা বখতিয়ার কাকী। এই দেবী কে? যোগমায়া। দিল্লির দক্ষিণ প্রান্তে ঩দেবীর মন্দির। আবার কাছেই রয়েছে সেই খাজা বখতিয়ারের দরগা। তাঁদের স্বপ্নে পেয়ে বেগম মমতাজ মহল স্থির করলেন, তাঁর পুত্র আবার নিরাপদে ফিরে এলে তিনি এই দু’জনকেই পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। 
পাল্টে গেল নাকি মির্জা? সে নাকি ভালো ব্যবহার করেছে নির্বাসনকালে। তাই তাকে মুক্ত করে দিল্লিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। অতএব মহাধুমধাম দিল্লিতে। মমতাজ মহলের নির্দেশে শহরকে সাজানো হল নতুন দুলহানের মতো। শুরু হল উৎসব।  কী হবে উৎসবে? সম্রাট, বেগম ও মির্জা তিনজন মিলে যাওয়া হল দিল্লির মেহরৌলি অঞ্চলে। সেখানে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে ফুলওয়ালিরা। তাদের থেকে নেওয়া হল একটি ফুলের চাদর। একটি ফুলের পাখা। প্রথমটি দেওয়া হল খাজা বখতিয়ারের দরগায়। আর ফুলের পাখা দিয়ে পুজো দিলেন তাঁরা দেবী যোগমায়া মন্দিরে। সেই উৎসব আজও সমানভাবে ভাস্বর। ফুলওয়ালা উৎসব। কখনও বন্ধ হয়েছে। আবার চালু হয়েছে। 
দিল্লিকে ধারণ এবং রক্ষা করে আছে কারা? ১২ জন সুফি এবং দুই দেবী। দেবী কালকা ও দেবী যোগমায়া। কে যোগামায়া? শ্রীকৃষ্ণের বোন। ১২০৬ থেকে ১২৯০ সাল পর্যন্ত সময়সীমায় দাস বংশের  সুলতানি আমলে অন্তত ২৭টি মন্দির ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু অলৌকিকভাবে কিছুতেই কেউ এই যোগমায়া দেবী মন্দির ধ্বংস করতে পারেনি। কবে তৈরি হল এই মন্দির? সেই ইতিহাসের থেকে মিথ বেশি। সঠিক তথ্য নেই। ১৪ বছর বয়সি সম্রাট আকবরের বাহিনীকে পরাস্ত করেছিলেন এক হিন্দু সম্রাট। বিক্রমাদিত্য হিমু। যদিও প্রথম যুদ্ধে আকবর নিজে ছিলেন না। পরে তিনি বিরাট বাহিনী নিয়ে আসেন আগ্রা থেকে। কিন্তু আকবরের নাকের ডগায় হিমু শাসনও করেছিলেন আজকের পুরনো কেল্লা দখল করে! একমাসের মধ্যেই সেই হিন্দু রাজা হিমু যোগমায়া মন্দিরকে সংস্কার করেছিলেন। আওরঙ্গজেব চেষ্টা করেছিলেন আবার এই মন্দির ধ্বংস করতে। পারেননি! দিল্লির মিথ, যোগমায়া দেবী মন্দিরকে ধ্বংস করা যায় না! 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা