নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার এসইউসির ডাকা ১২ ঘণ্টা বনধে তেমন প্রভাব পড়ল না। বিজেপির তরফেও দুপুর দু’টো থেকে চারটে পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিসের ধস্তাধস্তির ঘটনা ও রাস্তা অবরুদ্ধ থাকায় ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় পথ চলতি মানুষকে। তবে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনায় দোকানপাট সরকারি অফিস থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ সবই চলেছে স্বাভাবিক ছন্দে।
বেহালা, গড়িয়া সহ কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় সকাল থেকেই রাস্তায় নামেন এসইউসি কর্মীরা। পথ অবরোধ করতে চাওয়ায় পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে তাঁদের। অন্যদিকে, শহরের কিছু জায়গায় পথ অবরোধ করে বিজেপি। শ্যামবাজার মেট্রোর এক নম্বর গেটের কাছে বিজেপির ধর্না মঞ্চ ভেঙে দেওয়ায় দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, জয়ন্ত রায় সহ একাধিক নেতা-নেত্রীরা। বিকেলে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে পাঁচ মাথার মোড় অবরোধ করে বিজেপি। বিজেপির মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী বনতি শ্রীনিবাসনের নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের হাজরা মোড়েই আটকে দেয় পুলিস।
হাওড়া ব্রিজের কাছে গোলমোহর এলাকায় বিজেপি কর্মীরা পথ অবরোধ করেন। হাওড়া গ্রামীণ জেলাতেও বনধেন প্রভাব পড়েনি। বাগনান, উলুবেড়িয়া শহরে মিছিল করার পাশাপাশি প্রতীকী পথ অবরোধ করেন এসইউসি কর্মী-সমর্থকরা। বিকেলে উলুবেড়িয়া, গোরুহাটা মোড়, আমতা, শ্যামপুরে, রানিহাটিতে পথ অবরোধ করে বিজেপি। হাওড়া থেকে সব ট্রেন ছেড়েছে নির্ধারিত সময়েই। হাওড়া, সাঁতরাগাছি, শালিমার স্টেশনের বাইরেও বাস ও ট্যাক্সি পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল। হুগলিতেও কার্যত বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি। তবে হুগলির চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, পোলবা-দাদপুর সহ একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ, মিছিল, পথ অবরোধ করে বিজেপি। তাঁরা প্রতীকী রাস্তা অবরোধ করেন কল্যাণী আইটিআই মোড়, গয়েশপুর চেকপোস্ট ও ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের জাগুলি, বিরহী ও চাকদহ মোড়েও। রাতে শ্রীরামপুরে সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধরের উপস্থিতিতে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মশাল মিছিল হয়।
এদিকে, জয়নগর, দক্ষিণ বারাসত, রায়দিঘিতে, কুলতলি, বহরুতে পথ অবরোধ করে এসইউসি, মিছিল বের হয় জয়নগর ও রায়দিঘিতে। জয়নগরের দক্ষিণ বারাসতে পুলিসের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় এসইউসি কর্মীদের। গোসাবায় এসইউসি কর্মীদের মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জয়নগর স্টেশনের কাছে ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়ায় লক্ষ্মীকান্তপুর শাখায় ভোরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়, একই ঘটনা হয় ডায়মন্ডহারবার শাখার ধামুয়াতেও।
দুপুরে টানা প্রায় দু’ঘণ্টা রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে কুলপি থানার করঞ্জলি বাজারে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বিকেলে অবরোধ হয় কাকদ্বীপের চৌরাস্তা মোড়ও। উত্তর ২৪ পরগনায় বারাসতে যশোর রোডে অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। আইনজীবীরা মিছিল করেন বারাসত আদালত থেকে থানা মোড় হয়ে চাঁপাডালি পর্যন্ত। হেলমেট পরে বাস চালাতে দেখা গিয়েছে সরকারি বাস চালককে। টিটাগড় বাজার, বারাকপুর নীলগঞ্জ মোড়, দেবপুকুর, নৈহাটি রামকৃষ্ণ মোড়, সাহেব কলোনি মোড়, কাঁচরাপাড়ার বাগমোড়ে, গান্ধী মোড়, বনগাঁ বাটার মোড়ও অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। তবে বনগাঁ-শিয়ালদহ ও বনগাঁ-রানাঘাট শাখায় ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।