রাজ্য

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য 
(১ মার্চ ১৯৪৪-৮ আগস্ট ২০২৪)

বাম রাজনীতির একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ের অবসান। দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলনের পর ১৯৭৭ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এল বামফ্রন্ট। গঠিত হল মানুষের হাজারো স্বপ্ন পূরণের প্রথম মন্ত্রিসভা। কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হলেন সিপিএমের তুখোড় যুবনেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পার্টি নিবেদিত প্রাণ। তবুও নিজেকে একজন স্বতন্ত্র বাম নেতা ও প্রশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ দেখিয়ে গিয়েছেন বারবার। কবি সুকান্তের সঙ্গে নাড়ির যোগ বলে হয়তো ব্যতিক্রমী ভাবনা ছিল তাঁর সবসময়। যেমন প্রশাসন পরিচালনায়, তেমনই রাজনীতির ময়দানে। বুদ্ধদেবের এই অনন্য ইমেজের আত্মপ্রকাশ নয়ের দশকে। সালটা ১৯৯৩। বামেদের রাজত্ব তখন মধ্যগগনে। তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের বাড়তি দায়িত্বে। আচমকা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ। উত্তাল হয়ে উঠল বাংলার রাজনীতি। কেন ছাড়লেন মন্ত্রিত্ব? চারদিকে তুমুল চর্চা—‘চোরেদের মন্ত্রিসভায় থাকা যায় না’ বলে পদত্যাগ করেছেন বুদ্ধ। এ নিয়ে তিনি অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও প্রতিবাদ জানাননি। নীরব ছিলেন আলিমুদ্দিনের কর্তারাও। অতঃপর, গণ-শিলমোহর পড়ে যায় বুদ্ধের সেই কথায়। 
১৯৯৯ সাল। রাইটার্সের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব সামলে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হলেন বুদ্ধদেব। জ্যোতি বসু বিদেশ সফরে গেলে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ সামলাচ্ছেন তিনি। একেবারে নিজস্ব স্টাইলে প্রশাসনিক কাজে দক্ষতার ছাপ রাখছেন। তখন স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর। বিরোধীদের তখন পোয়াবারো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পালে প্রবল হাওয়া। সামনেই বিধানসভা ভোট। দীর্ঘ ২৪ বছরের বাম শাসন অনিবার্য পতনের ইঙ্গিত। আর তখনই ‘মাস্টারস্ট্রোক’ অনিল-বিমান জুটির। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর আলিমুদ্দিনের ম্যানেজাররা ঘোষণা করলেন—জ্যোতি বসুর উত্তরসূরি হচ্ছেন বুদ্ধ। ব্যাস! এই একটা সিদ্ধান্তেই নড়বড়ে বিরোধীরা। ভোটের ময়দানে নেমে প্যাডল ভ্যানেই প্রচার... অসহায়, নিপীড়িত মানুষের দরবারে পৌঁছে গেলেন বুদ্ধদেব। একান্তভাবে নিজের ঘরানায় তৈরি করলেন জনসংযোগ। জ্যোতিবাবুর ‘অহং’ মেজাজের ধারেকাছেও ঘেঁষলেন না তিনি। আর তাতেই বাজিমাৎ। ষষ্ঠবারের জন্য ক্ষমতায় এল বামফ্রন্ট। 
প্রত্যাশামতো পূর্ণ মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন বুদ্ধদেব। আর প্রথমেই ভাঙতে চাইলেন দীর্ঘ শাসনকালের স্থবিরতাকে। ভাঙতে চাইলেন বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে। আসলে, বুদ্ধদেব বরাবরই ভেবে এসেছেন, স্থবির প্রশাসনকে সঙ্গী করে রাজ্যবাসীর হিতসাধন সম্ভব নয়। যা কিছু করতে হবে, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। চটজলদি খুলতে হবে লাল ফিতের ফাঁস। স্লোগান তুললেন বুদ্ধদেব— ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত্’। তাঁর ‘ডু ইট নাও’ প্রত্যয়  কাঁপুনি ধরিয়ে দিল মহাকরণ, নব মহাকরণ, সল্টলেকের অফিসপাড়া থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে। তাঁর এই স্লোগান সরকারি কাজকে কতটা গতিশীল করতে পেরেছিল, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু, প্রশাসনের অন্দরে, জনমননে গভীর দাগ কাটতে পেরেছিল ‘বুদ্ধ-বার্তা’। সর্বত্র সবার মুখে তখন একটাই কথা, ‘ডু-ইট-নাও।’ তার প্রভাব পড়ল ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটে। বুদ্ধদেব নিশ্চিত করলেন ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০’। এরপর বুদ্ধদেবের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল শুধুই আত্মতুষ্টি। বিরোধীদের তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা। সেটাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বড় ভুল। পরে নিজেও স্বীকার করেছিলেন।  
রাজ্যের শিল্পায়নেও স্বকীয়তার ছাপ রেখেছিলেন বুদ্ধদেব। এক্ষেত্রেও সবকিছু দ্রুত চেয়েছিলেন তিনি। কথায় কথায় শিল্প-কারখানায় ধর্মঘট, বন্‌ধের সংস্কৃতির অবলুপ্তি চেয়েছিলেন। শেষ করতে চেয়েছিলেন জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলনকে। বণিক মহলকে আশ্বস্ত করে বলতেন, ভরসা রাখুন এসব আর চলতে পারে না। বন্ধ করে দেব। সকা঩লে ঘুম থেকে উঠেই যাঁরা ধর্মঘট, বন্‌ধ ডেকে বসেন তাঁদের দিন শেষ। জোর দিয়েছিলেন কর্মমুখর শিল্পায়নে। বুদ্ধে আস্থা রেখেছিলেন শিল্পপতিরাও। 
মুখ্যমন্ত্রীর পদে পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম পাঁচ বছর বহু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ করেন বুদ্ধদেব। তার মধ্যে অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শিল্প। সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানা এবং নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব গড়ার ঘোষণা তাঁর আমলেই হয়। জমি দখলকে ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম। সঙ্গে মৃত্যু মিছিল। কংগ্রেস, তৃণমূল এমনকী সিপিএমের শরিকদলগুলিও সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়। নিন্দায় মুখর হয় সুশীল সমাজ। ২০১১ সালে ৩৪ বছরের নিরবচ্ছিন্ন বাম শাসনের পতন। 
উত্তর কলকাতায় জন্ম বুদ্ধদেবের। সালটা ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ। ডাকনাম ছিল বাচ্চু। শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা। পরে বাংলা সাহিত্য নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক।  তখন থেকেই রাজনীতিতে যোগ। ১৯৬৬ সালে সিপিএমের সদস্যপদ লাভ করেন। সেই শুরু পথচলা। সাতের দশকের উত্তাল সময়ে গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক হন। রাজনীতির বাইরে সাহিত্য চর্চা ছিল তাঁর সাধনক্ষেত্র। গাব্রিয়েল মার্কেজ সহ বহু কবি-সাহিত্যিকের রচনা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বই পড়া, সিনেমা, নাটকসহ বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন বুদ্ধদেববাবু। আজীবন সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করেছেন। এমনকী, ২০২২ সালে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পদ্মভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।
বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার ছোট দু’কামরার ফ্ল্যাটই ছিল তাঁর শেষ ঠিকানা। 
সেই ঠিকানা থেকে গেল বাম রাজনীতির ইতিহাসের উঠোন হয়ে। চিরতরে শুধু হারিয়ে গেল ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’ যুগ।
1Month ago
কলকাতা
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বিদ্যায় অগ্রগতি ও নামী প্রতিষ্ঠানে বিদ্যা লাভের সুযোগ পেতে পারেন। ব্যবসায় শুভ ও আয় বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮২.৬৮ টাকা৮৪.৪২ টাকা
পাউন্ড১০৯.৫৩ টাকা১১৩.১১ টাকা
ইউরো৯১.৭৫ টাকা৯৪.৯৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
21st     September,   2024
দিন পঞ্জিকা