বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য

 প্রথমবার জিমে যাচ্ছেন? এসব নিয়ম মাস্ট!

পরামর্শে গুরু’স ড্রিম জিম-এর কর্ণধার, ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
 

স্বামী বিবেকানন্দ চুপচাপ বসে না থেকে ফুটবল খেলার কথা বারবার বলেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন খেলাধুলো করলে ব্রেনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মনঃসংযোগ করা যায় সহজে। এরপর যে কোনও দর্শন, সাহিত্য পড়া যায় গড়গড়িয়ে। অন্তর্নিহিত অর্থও বোঝা যায় দ্রুত। তিনি একশো বছরেরও আগে একথা জানিয়েছেন। আর আমরা এখন প্রায় সকলেই জানি, শরীরচর্চা করলে শরীরের স্ট্রেস হর্মোন বা কর্টিজলের মাত্রা কমে এবং হ্যাপি হর্মোন বা এন্ডোর্ফিনের মাত্রা বাড়ে। এই হর্মোন একজন ব্যক্তির মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। মুশকিল হল এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, বোধকরি শুধু জিমে গেলে তবেই শরীরচর্চা হয়। না হলে এক্সারসাইজ করার আর কোনও জায়গা থাকে না। এই ধারণা সর্বৈব ভুল।
 হনহন করে হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার, ফুটবল, ক্রিকেট সবই অতি উচ্চমানের ব্যায়াম। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে ছুঁতে পারবে না কোলেস্টেরল, সুগারের সমস্যা। বাড়বে না রক্তচাপ। এমনকী কারও এই ধরনের অসুস্থতা শুরু হওয়ার পরে নিয়মিত এক্সারসাইজ শুরু করলে সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারবে না।
এছাড়া আমাদের মধ্যে অনেকেই স্থূলত্বের সমস্যায় ভোগেন। নিয়মিত শরীরচর্চায় অতিরিক্ত চর্বি শরীর থেকে ঝরে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, এখন একটু হলেও ‘ওজন নিয়ে এক্সারসাইজ’ বা ওয়েট ট্রেনিং করা দরকার। তাতে হাড় শক্ত হয়। ওজনও দ্রুত কমানো যায়। এছাড়া মাসল টোনিংও হয়।

বয়স ও এক্সারসাইজ সেট আপ
তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এক্সারসাইজ করে চেহারা ভালো করার প্রবণতা থাকা স্বাভাবিক। তবে বয়স্কদের কাছে ব্যায়ামের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে প্রয়োজনের ব্যাপার। তবে যিনি যে বয়সেই এক্সারসাইজ শুরু করুন না কেন, সবটাই হওয়া উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে। 
কারণ একজন কমবয়সি ছেলে বা মেয়ের ব্যায়ামের যে সেট আপ বা তাঁরা যেসব বায়াম করতে পারবেন, তা বয়স্ক লোকের শরীরচর্চার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মিলবে না।

করণীয় কী?
ইয়ং জেনারেশন, যদি তার মধ্যে কোনও শারীরিক অসুস্থতা না থাকে, তাহলে তাঁরা ব্যায়াম শুরু করতে পারেন উপযুক্ত শিক্ষকের অধীনে।  
তারপরও বলি, খুব ভালো হয় যদি প্রত্যেকেই ব্যায়াম করার আগে ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন। হ্যাঁ, একজন ব্যক্তি কমবয়সি হলেও তার এই কাজ করা দরকার। কারণ আজকাল আমরা দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি জিম করতে গিয়ে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। সুতরাং কার শরীরে আগে থেকেই কোন সমস্যা আছে, আর কোন সমস্যা নেই, তা একজন চিকিৎসকই বলতে পারবেন। 
আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই জিমে যাওয়ার আগে একবার ইসিজি করিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে দেখে নেওয়া উচিত লিপিড প্রোফাইলও। কারণ ট্রাইগ্লিসারাইডস, এলডিএল বেশি থাকার অর্থ হল ওই ব্যক্তির হার্টে হয়তো প্লাকও জমেছে। এমন ব্যক্তিকে একটু ভারী এক্সারসাইজ করতে দিলে তাঁর শরীরে কু’প্রভাব পড়তে পারে। অত্যধিক হাইপ্রেশার থাকলেও জিম করতে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে। এই রিপোর্টগুলি দেখে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর জিম ইনস্ট্রাক্টর বা ব্যায়াম বিশারদ ওই ব্যক্তির জন্য কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম প্রেসক্রাইব করবেন। মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তি যখন প্রথম জিমে যান, তখন তিনি সম্পূর্ণভাবে সাধারণ মানুষ। তিনি যদি কোনও দিকনির্দেশ না পান, তাহলে অযাচিত সমস্যা তৈরি হতে পারে। তা কেমন? ধরা যাক একজন দৌড়াবেন। তিনি প্রথমেই ১৫-২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ট্রেডমিল চালিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন। করতে করতে তিনি একসময় কাহিল হয়ে পড়লেন, পড়ে গেলেন ও অজ্ঞান হয়ে গেলেন! আমরা আকছার এমন ঘটনা ঘটতে দেখি। এই কারণে যে কোনও ব্যায়ামাগারে উপযুক্ত ব্যায়াম শিক্ষক আছেন কি না তা দেখা দরকার।

চল্লিশ বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ
চল্লিশ বছরের একজন ব্যক্তিকে যুবক বলেই ধরা হয়। তাই বলে তাঁর শরীর আর কুড়ি বছর বয়সি ব্যক্তির শরীর এক নয়। আগে কোনওভাবেই শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত না থাকলে ধরেই নিতে হয়, চল্লিশ বছরে শরীরের ভিতরে ঘটে গিয়েছে একাধিক পরিবর্তন। চল্লিশ বছর বয়সে এসে অনেকেরই হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে। কারও ধরা পড়ে সুগার, ব্লাড প্রেশার। ওদিকে চল্লিশ বছর বয়সি ব্যক্তি নিজেও মানতে পারেন না যে তাঁর বয়স হয়েছে। ফলে তিনিও দ্রুত এমন কিছু এক্সারসাইজ করতে চান, যা কমবয়সিরা করছে। তাতেই ঘটে যেতে পারে বিপদ। তাই সবসময় জিম ইনস্ট্রাক্টর বা ব্যায়াম বিশারদের পরামর্শ ছাড়া কোনও এক্সারসাইজ করাই যাবে না। এমনিতে ২০-৩০ মিনিট আরাম করে হাঁটা যেতে পারে। তাতে সমস্যা নেই। তবে যদি এক্সারসাইজ করার ব্যাপার থাকে তাহলে সাবধানতা দরকার। 

ডায়েট
আমাদের সাধারণ ধারণা অনুসারে, শরীর গঠনই হোক বা ওজন ঝরানো— দু’টি ক্ষেত্রেই ৭০ শতাংশ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে ডায়েটে বা খাদ্যাভ্যাসে।  বাকি ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকে এক্সারসাইজের। লোকে ভাবে শুধু ব্যায়াম করলেই পেশি ফুটে বেরিয়ে আসবে। তা নয় মোটেই। লাইফস্টাইল এবং ডায়েট হল প্রধান। 
বহু স্থূলকায় একটু বয়স্ক ব্যক্তিকেই দেখা যায়, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দ্রুত পায়ে হাঁটছেন। ঘামে ভিজে গিয়েছে ঢলঢলে টি শার্ট! রোজ এমনভাবে হাঁটার পরেও তাঁদের চেহারা আর ঝরে না।
এমন হওয়ার পিছনে মূল কারণ হল,  দেখা যায় তাঁরা আধ ঘণ্টা হাঁটার পর মোড়ের তেলেভাজার দোকানে গিয়ে গোগ্রাসে খান রসে ডোবানো জিলিপি, খান দশেক পুরি-সব্জি। মাপলে দেখা যাবে ছয় মাস হাঁটাহাঁটির আগে হয়তো তাঁর ওজন ছিল ১০০। এখন ১০৫!
সুতরাং শুধু হাঁটলেই হবে না, তার সঙ্গে ডায়েট কন্ট্রোল অত্যন্ত জরুরি একটা বিষয়।
আবার কমবয়সিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়— সকালবেলা তাঁরা জিম করেন। এরপর তাঁরা সারাদিনে হয়তো সেভাবে কোনও নিয়ম ভাঙেন না। তবে বিকেল হলেই খুব খিদে পায় ও তখন তাঁরা নিজেকে আটকাতে না পেরে খেয়ে ফেলেন প্রচুর জাঙ্ক ফুড। ফলে কিছুতেই আকাঙ্ক্ষা মতো শরীর তৈরি হয় না। 
অর্থাৎ নিয়ম একটাই, যে প্রফেশনেই থাকুন না কেন, ব্যায়াম করলে লাইফস্টাইল অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে। নাহলে কাজের কাজ কিছু হবে না।

সাপ্লিমেন্ট জরুরি?
বয়স্করা তো সেভাবে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেন না। কমবয়সিরাই সাধারণত শরীর তৈরির জন্য সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের ব্যাপারে ভাবে।
কমবয়সিদের জন্য বলব— প্রকৃতি আমাদের অনেক খাবার দিয়েছে শরীর ভালো করার জন্য। আলাদা করে কিছু দরকার পড়ে না। ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আমি মনোহর আইচের ছাত্র। ৯০-৯১ বছর বয়সেও তাঁকে রোজ এক্সারসাইজ করতে দেখেছি। এরপর কমল ভাণ্ডারীর কাছেও নাড়া বেঁধেছিলাম। তাঁদের আমি সাধারণ খাবার খেয়েই ভারতজোড়া নাম করতে দেখেছি। লড়েছেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাও। সাধারণ খাবার মানে ডাল, ছাতুর কথাই বলা হচ্ছে। এমনকী ভাতও খেতেন তাঁরা। বাঙালিরা তো ছোটবেলা থেকে ভাত খেয়ে অভ্যস্ত। ভাত বাদ দিলে চলবে কেন! হ্যাঁ প্রোটিন অবশ্যই খেতে হবে। তা সেই প্রোটিন নিশ্চিন্তে মিলতে পারে ডাল থেকে। মুসুর ডালে প্রোটিনের পরিমাণ অনেকখানি। এছাড়া আছে রাজমা, অঙ্কুরিত ছোলা। কাঁচা চিনেবাদামও খাওয়া যায় পরিমাণমতো। আবার পেশির গঠনে খনিজের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যাবে না। তাই পাতে অবশ্যই রাখতে হবে একাধিক শাকসব্জি। অনেকেই ভাবছেন কেন মাছ-মাংস খাওয়ার কথা বলছি না? দেখুন, মাছ-মাংস রোজ খাওয়া বাংলার প্রতিটি পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। দরকারও নেই। তাছাড়া সাধ্যের মধ্যেই আছে বিকল্প এবং পুষ্টিকর খাদ্য! অতএব আলাদা করে সাপ্লিমেন্টের জন্য খরচের প্রয়োজন নেই। ভাবুন দেখি একবার, বাবা হয়তো পান ৩০ হাজার টাকা মাইনে। এদিকে ছেলে শরীর গড়তে পাঁচ হাজার টাকার প্রোটিন পাউডার খেয়ে ফেলছে। তাতে সংসার চলবে? তার চাইতে বরং একবার অল্প খরচ করে ডায়েটিশিয়ানের কাছে গিয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য সংবলিত ডায়েট চার্ট বানিয়ে আনাই বাঞ্ছনীয়। 
তাছাড়া শরীরেরও নেওয়ার একটা ক্ষমতা থাকে। কেউ যদি নিজের থেকে হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেতে থাকেন, তাহলে তার হজমের সমস্যা যেমন হবে, তেমনই তাঁর কিডনির গvd[গোলও দেখা যেতে পারে। মোট কথা, যে কোনও সাপ্লিমেন্ট স্পোর্টস মেডিসিনের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।

শরীর গঠনের আপ্তবাক্য
অতএব আলোচনার আপ্তবাক্য হল—
‘রোম একদিনে তৈরি হয়নি।’ শরীরও খুব দ্রুত তৈরি হতে পারে না। একটানা লেগে থাকতে হয়। ধৈর্য ধরে গড়া সৌষ্ঠব সহজে ঝরে না। অন্যদিকে ‘ডাব্বা’ খেয়ে শরীর তৈরি করলে হয়তো তা তিনমাস টানটান রাখে, তবে চারমাসের বেলায় সামান্য শরীর খারাপেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কী করে বাড়াব? 
শরীরে মন চনমনে থাকতে সাহায্য করে টেস্টোস্টেরন হর্মোন। অনেকেই দ্রুত পেশির পরিবর্তনের জন্য টেস্টোস্টেরন হর্মোন নেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, প্রকৃতিকভাবে শরীরে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির প্রচুর খাদ্য রয়েছে। সেগুলি খাওয়া যেতে পারে নিশ্চিন্তে। তাতেই কাজ হবে।

জিমে ঢুকেই যা করবেন না—
ভূমিষ্ঠ হয়েই কেউ দৌড়াতে শুরু করেন না। তাই প্রথমবার জিমে ঢুকেই কেউ লোহা তুলতে গেলে চোট লাগবেই। তাই প্রথমে করুন ফ্রি হ্যান্ড। এরপর নিজের শরীরের ওজনকেই নানাভাবে কাজে লাগিয়ে করতে হবে ব্যায়াম। মুভমেন্টের মধ্যে রয়েছে বার ধরে ঝোলাঝুলি ইত্যাদি। আর লোহা তুলতে হলে আগে রড ধরে তোলার অভ্যেস করুন। এরপর জিম ইনস্ট্রাকটরের কথামতো লোহা তোলা যেতে পারে। আপ্তবাক্যটি হল— ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি উইনস দ্য রেস’।
অনুলিখন: সুপ্রিয় নায়েক
25d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৬৮ টাকা৮৭.৪২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৮৯ টাকা১০৯.৬২ টাকা
ইউরো৮৮.৬৬ টাকা৯২.০৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা