বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

সাধারণতন্ত্র  ৭৫

সমৃদ্ধ দত্ত: একমাস আগে, ২৫ জুন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ২২ জুলাই পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সামনে বসে থাকা বিরোধীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনারা এতকাল আমাকে আক্রমণ করে বলতেন আমি নাকি ডিক্টেটর। স্বৈরাচারী। অথচ আমি মোটেই স্বৈরাচারী ছিলাম না।’ একটু থেমে তাকালেন  সকলের দিকে। তারপর বললেন, ‘হ্যাঁ। এখন আমি ডিক্টেটর!’ শুধু মুখে নয়, কাজে করে দেখালেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজের মুখে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘আমি স্বৈরাচারী!’ এর থেকে বড় খবর হয় নাকি? অতএব সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) ৩০ মিনিট পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ রিলিজ করল। গোটা দেশের সংবাদমাধ্যম জেনে গেল প্রাইম মিনিস্টার সংসদে দাঁড়িয়ে ঠিক কী বলেছেন! স্বাভাবিকভাবে সব সংবাদপত্রই পুলকিত। কারণ, এই বক্তব্যকে তো সংবাদের পরিভাষায় বলা হয় ‘ব্যানার হেডলাইন’! অর্থাৎ সবথেকে বড় খবর হিসেবে ছাপা হবে আগামী কালের  সংবাদপত্রে। কিন্তু সেই আশায় জল! পাঁচ মিনিটের মধ্যে পিটিআই আবার জানাল, আগের নিউজটা নষ্ট করে দিতে হবে। ওটা ব্যবহার করা যাবে না। কেন? তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ওই নিউজ সেন্সার করা হল! অর্থাৎ ওই খবর কোনও সংবাদপত্র ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদপপত্র বন্ধ করা হবে। প্রেস সেন্সরশিপ ইতিমধ্যেই চালু!  
২৫ সেপ্টেম্বর জরুরি অবস্থা জারি করেই ক্ষান্ত হননি ইন্দিরা গান্ধী। সংবিধানে একঝাঁক সংশোধন করেছিলেন। সেগুলিকে পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধন নয়, বলা হয়েছে ‘মিনি সংবিধান’। কারণ, সংবিধানকেই বহুলাংশে বদলে দেওয়া হয়েছে নতুন নতুন সংশোধন এনে। আচার্য জে বি কৃপালনী অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি। তখন এই খবর জানতে পেরে বলেছিলেন, ‘আমার কোনও সংবিধানই তো রইল না!’ 
ইন্দিরা গান্ধী যে যে সংশোধনী এনেছিলেন সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল,  জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতের কোনও ভূমিকা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর অধিকারকে আদালতের এক্তিয়ারের বাইরে আনা হল। আদালতের অধিকার ও রায় শেষ কথা নয়। নতুন এক বিচারব্যবস্থার আপীল  উপস্থিত হল। ট্রাইব্যুনাল। অর্থাৎ হাইকোর্টের অধিকার কমিয়ে দেওয়া হল। সংবিধানের ১৯ নং ধারায় থাকা মৌলিক অধিকার স্থগিত করে দেওয়া হল অনির্দিষ্টকালের জন্য। ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধনে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন ইন্দিরা। সংবিধানের প্রস্তাবনাই পাল্টে দিলেন। যুক্ত হল নতুন শব্দ—সোশ্যালিস্ট, সেকুলার এবং ইন্টিগ্রিটি। অর্থাৎ সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিকের মাঝখানে যোগ করা হল সমাজতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষ। আর ‘ইউনিটি অব দ্য নেশন’ পাল্টে করা হল ‘ইউনিটি অ্যান্ড ইন্টিগ্রিটি অব দ্য নেশন’। যদিও ইন্দিরা গান্ধীর স্বঘোষিত এই স্বৈরাচারের আয়ু যেমন ছিল স্বল্পকালীন, ওই সব সংশোধনও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতাসীন হয় জনতা দলের সরকার। ১৯৭৮ সালে তারা ৪৪তম সংশোধনী এনে সিংহভাগ বদলকে বাতিল করে দেয়। 
ভারতের সংবিধান রচনার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে। বহু চাপানউতোর, বিতর্ক, মতান্তর, বয়কটের পথ পেরিয়ে আসে সংবিধান কমিটি। অবশেষে ১৯৪৯ সালের ২৫ নভেম্বর চুড়ান্ত সংবিধানের খসড়া পেশ করা হয় সংবিধান সভায়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, ভারত পর্যবসিত হয় ভারতীয় সাধারণতন্ত্রে। ভারতীয়রা কি নিজেদের সংবিধান নিজেরা নির্মাণ করতে পারবে? এই সংশয় ও তাচ্ছিল্য বহুবার প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সরকার। ১৯২৮ সালেই মতিলাল নেহরুর তত্ত্বাবধানে একটি সংবিধান সম রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল। তার নাম, ‘নেহরু রিপোর্ট’। এরপর লর্ড ওয়াভেলের মধ্যস্থতায় ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাবও যখন ব্যর্থ হল, তখন স্থির হয় জাতীয় সরকার গঠনের পাশাপাশি সংবিধান রচনার কাজও শুরু করা দরকার। সেই শুরু। ভীমরাও আম্বেদকর ছিলেন সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটির সদস্য ছিলেন ভারতের একঝাঁক শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সেই সংবিধানের ৭৫তম বর্ষ পূর্ণ হল ২০২৫ সালে। ভারতের সংবিধানের শক্তি যে কতটা, সেটা প্রমাণিত হয় আজ ভারতীয় উপমহাদেশের বাকি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির দিকে নজর দিলে। অখণ্ড ভারত থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া কোনও দেশ জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় স্থিতিশীল থাকতে পারল না। সামরিক শাসন, গৃহযুদ্ধ, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া, গণতন্ত্রের অবসান, ধর্মীয় উন্মাদনায় নিমজ্জিত হয়েছে তারা। একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত। ১৯৫১ সাল থেকে লাগাতার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হয়ে চলেছে।
সেই গণতন্ত্রের শক্তি এমনই যে, সংবিধানের অপব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে মৌলিক স্বাধীনতা হরণ করার ঠিক পরেই ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী পরাস্ত হন। আবার তাঁকে সরিয়ে যে জনতা সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছিল, তাদের অযোগ্যতায় বিরক্ত হয়ে ঠিক সেই একই ভোটারকুল ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধীকেই ফিরিয়ে আনে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেই গর্বে তিনি নিজেই ঘোষণা করে দিলেন, চারশোর বেশি আসন পাবেন ২০২৪ সালে। তখন মোদিকে পাহাড়চূড়ায় স্থাপন করা ওই একই ভোটারকুল সব দর্প ও দম্ভকে ধ্বংস করে তাঁর দলকে গরিষ্ঠতাই স্পর্শ করতে দিল না। যে ভোটে তিনি এই অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খেলেন, সেই নির্বাচনে বিরোধীদের প্রধান অস্ত্র কী ছিল? সংবিধান! সংবিধানের কাছে নত হলেন মোদি। হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীও।  
ভারতের এই ম্যাজিকাল যাত্রাপথে সংবিধানকে বারবার সংশোধন করা হয়েছে। কোন কোন সংবিধান সংশোধন ভারতের চরিত্রকে বদলে দিয়েছে? অসংখ্য। তবু তার মধ্যে কিছু বেছে নেওয়া যেতে পারে, যেগুলি ভারতবাসীর জীবনযাপন ও দেশের অগ্রগতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই পাল্টে দিয়েছে। 
প্রথম সংশোধন এসেছিল সংবিধান চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই। সেটাও আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে। ২৬ জানুয়ারি সংবিধান  কার্যকর হওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, বাক স্বাধীনতা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমা কী? কতটা পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য? মাদ্রাজের  সালেম সেন্ট্রাল জেলে ২২ জন কমিউনিস্ট বন্দিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ‘ক্রস রোডস’ নামক ম্যাগাজিনে মাদ্রাজ সরকারের চরম সমালোচনা করে কড়া ভাষায় নিবন্ধ প্রকাশ করা হল। সরকার ক্ষিপ্ত। ‘মাদ্রাজ মেইনটেন্যান্স  অব পাবলিক অর্ডার’ আইন প্রয়োগ করে সেই ম্যাগাজিনের প্রকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিল মাদ্রাজ সরকার। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সেই পত্রিকা। আবার ‘অর্গানাইজার’ পত্রিকায় ভারত সরকারের নরম পাকিস্তান নীতিকে বিদ্ধ করে লাগাতার আক্রমণ করা হচ্ছিল।  
ভারত সরকার ‘ইস্ট পাঞ্জাব পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট’ জারি করে ঘোষণা করল, পাকিস্তান অথবা দাঙ্গা সংক্রান্ত যে কোনও সংবাদ প্রকাশের  আগে সরকারের থেকে অনুমোদন নিতে হবে। সরকারকে দেখাতে হবে কী প্রকাশ হচ্ছে। অর্থাৎ প্রেস সেন্সরশিপ। অর্গানাইজার সুপ্রিম কোর্টে যায়। প্রবল উদ্বাস্তু প্রবেশ করছে পশ্চিমবঙ্গে পূর্ববঙ্গ থেকে। সরকার কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। সাহায্যও করছে না। এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নিত্যদিন আক্রমণ করা হচ্ছে ভারত সরকারকে। সরকার রুষ্ট। আরও ক্রোধের কারণ সব ক্ষেত্রেই সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুতরাং স্থায়ীভাবে কিছু ব্যবস্থা করা দরকার।
জওহরলাল নেহরু সরকার ১৯৫১ সালে আনল সংবিধান সংশোধনী বিল। প্রথমবার সংবিধানে এল একঝাঁক সংশোধন। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার’ রুখতে সরকারের হাতে দেওয়া হল বিশেষ ক্ষমতা। সুতরাং, গণতন্ত্রে প্রদান করা বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যে অন্তহীন এবং সীমাহীন নয়, সেই পর্ব প্রতিষ্ঠা হল প্রথম সংশোধনী থেকে। একইসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ভূমি সংস্কার, সাম্যের অধিকার, বাণিজ্যের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আরও একঝাঁক পরির্তন। সেবছর ১৮ জুন প্রথম সংবিধান সংশোধন হল।
১৯২৮ সালে স্ত্রী এবং সন্তানের মৃত্যুতে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির এক স্যানিটারি ইঞ্জিনিয়ারের জীবন কার্যত ধ্বংস হয়ে যায়। চাকরি করে আর কী হবে? গান্ধীজির ডাকে ১৯৩০ সালে যোগ দিলেন লবণ সত্যাগ্রহে। তাঁর নাম পট্টি শ্রীরামালু। দাবি পূরণে অনশন করা শিক্ষা পেলেন গুরু গান্ধীজির কাছে।
১৯৪৬ সালে প্রথমবার অনশন করলেন শ্রীরামালু। দাবি, মাদ্রাজ প্রদেশের সব মন্দিরে অস্পৃশ্যদের প্রবেশ করতে দিতে হবে। শেষপর্যন্ত গান্ধীজির অনুরোধে তিনি সেই অনশন প্রত্যাহার করেন । কিন্তু ১৯৫২ সালে তো গান্ধীজি নেই! এবার শ্রীরামালু অনশনে বসলেন। আমরণ। দাবি, তেলুগুভাষীদের জন্য পৃথক রাজ্য চাই। প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি ভারত সরকার। রাজ্য সরকারও। অথচ অন্ধ্র রা঩জ্যের দাবিতে তেলুগু এলাকা ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে। নৈরাজ্য চলছে। ট্রেন বন্ধ। আগুন জ্বলছে। সিদ্ধান্তহীনতায় আরও ক্ষতি হল। ৫৮ দিন অনশন করার পর পট্টি শ্রীরামালু আর পারলেন না। ১৫ ডিসেম্বর মৃত্যু হল তাঁর। কিন্তু আগুন নিভল না। কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হল নতুন রাজ্য গঠন করতে। ১৯৫৩ সালের পয়লা অক্টোবর তৈরি হল নতুন রাজ্য, অন্ধ্রপ্রদেশ। 
তবে সেটা সমস্যার সমাপন নয়, সূত্রপাত! তেলুগুভাষীরা পেলে আমরা কেন পাব না? এই সওয়াল করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের ভিন্ন ভাষাভাষীরা দাবি তুলল পৃথক রাজ্যের। আর তারই পরিণতি রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন। ১৯৫৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে রাজ্য পুনর্গঠন আইন সংসদে পাশ হল। তৈরি হল একঝাঁক নতুন রাজ্য। বিভিন্ন রাজ্যের সীমানা পুনর্নিধারণ হল। অর্থাৎ, ভারতের প্রাদেশিক মানচিত্রের বড়সড় পরিবর্তন শুরু হল। সেই প্রথা আজও বিদ্যমান। নতুন ভারতের অন্যতম দিশারী ওই রাজ্য পুনর্গঠন আসলে সংবিধান সংশোধনী আইনই। 
বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ মণ্ডলকে বলা হল অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের সভাপতিত্ব করতে। তিনি নিজে অনগ্রসর শ্রেণির। এবং অনগ্রসর বনাম উচ্চবর্ণের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত। মুখ্যমন্ত্রী থাকায় প্রশাসনও বোঝেন। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশন। বলা হয়েছিল, দ্রুত রিপোর্ট দিতে। কীভাবে অনগ্রসরদের উন্নতি হওয়া সম্ভব সেটা জানিয়ে। সভাপতির পদবি অনুযায়ী ক্রমেই সেই কমিশনের নাম হয়ে গেল মণ্ডল কমিশন। বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ দ্রুত রিপোর্ট দিলেন বটে। কিন্তু যখন তা জমা পড়ল সেই ১৯৮০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মসনদে মোরারজি দেশাই আর নেই। আবার ফিরেছেন ইন্দিরা গান্ধী। রিপোর্ট সংসদে পেশ হল। কিন্তু কার্যকর আর হয় না। হলও না। 
১৯৮৯ সালে বোফর্স কাঁটায় ভোটে পরাস্ত হলেন রাজীব গান্ধী। নতুন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। ১৯৮৯ সালের ৬ আগস্ট তিনি সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এসে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বি জি দেশমুখকে বললেন, ‘ক্যাবিনেট মিটিংয়ের এজেন্ডা ঠিক করুন। আমি দেখে দেব।’ তবে ক্যাবিনেট অর্থাৎ মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে চেয়ারে বসে সেই এজেন্ডা পেপারের দিকে না তাকিয়েই বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের বললেন, ‘আমরা সবার আগে যে কাজটি করব, সেটি হল মণ্ডল কমিশন কার্যকর করা।’ সকলে চমকে উঠল। ৯ বছরে সবাই ভুলেও গিয়েছে ওই কমিশনের কথা। সবথেকে অবাক বি জি দেশমুখ এবং ক্যাবিনেট সচিব বিনোদ পান্ডে। তাঁরা জানতেনই না এই এজেন্ডা আসবে। যেন যুদ্ধকালীন তৎপরতা। পরদিনই সংসদে ভি. পি সিং জানালেন এই সিদ্ধান্ত। দেশজুড়ে আলোড়ন। আন্দোলন। আত্মহত্যা। আগুন। কিন্তু ভি পি সিং অনড়। সংসদে অনুমাদিত হল সংবিধান সংশোধনী বিল। কী ছিল সেই সংশোধনীতে? উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ, যা ভারতের রাজনীতিতে নিয়ে এল নতুন বাঁক। ঠিক পরের বছর লালকৃষ্ণ আদবানি সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত একটি রথযাত্রা করলেন। রাম রথযাত্রা। সেই রথযাত্রা রুট এবং পরিকল্পনা করেছিলেন প্রধানত দু’জন। প্রমোদ মহাজন এবং নরেন্দ্র মোদি। ১৯৯০ সালে ভারতীয় রাজনীতিতে শুরু হল নতুন অধ্যায়। মণ্ডল বনাম কমণ্ডলু রাজনীতি। অর্থাৎ ধর্ম বনাম জাতিগত আইডেন্টিটি! একদিকে উত্থান হল বিজেপির, অন্যদিকে একঝাঁক নতুন  নেতা ও দলের। মুলায়ম সিং যাদব, লালুপ্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমার, কাঁসিরাম। কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক হাইজ্যাক হতে শুরু করল। 
রাজনীতিতে কম কথা বললে চলে না। বিশেষ করে ভারতীয় রাজনীতিতে বেশি বেশি অর্থাৎ ওভারস্টেটমেন্ট যেন স্বাভাবিক। কিন্তু নয়ের দশকে একটি জুটি এসেছিল। তাঁরা দু’জনেই কম কথা বলা মানুষ। প্রকাশ্যে হাসতেও কম দেখা গিয়েছে তাঁদের। অগাধ পাণ্ডিত্য দু’জনেরই। কিন্তু কোনও ক্যারিশমা, গ্ল্যামার কিংবা জনপ্রিয়তা ভোটের ময়দানে ছিল না। অথচ এই জুটি দেশকে শুধু বদলে দেয়নি, আধুনিক ভারতের জন্ম দিয়েছে। সেই প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এবং অর্থমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের সাফল্য, অবদান এবং কৃতিত্ব সাধারণত আলোচিত হয় আর্থিক উদারীকরণ নিয়ে। তাঁরা বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতার যোগ্য করেছেন দেশকে। আজকের ভারত তাঁদের দান। কিন্তু সকলের অলক্ষ্যে রয়ে গিয়েছে তাঁদের মহাশক্তিশালী আরও এক মেগা সিদ্ধান্ত। সংবিধানে ৭৩তম সংশোধন করে এই জুটির সরকার সংসদে পাশ করিয়ে নিয়েছিলেন ভারত নির্মাণের এক পাহাড়প্রতীম আইন—পঞ্চায়েতি রাজ। ১৯৯৩ সালের ২৪ এপ্রিল অনুমোদিত হয়েছিল পঞ্চায়েতি রাজ আ‌ইন। ত্রিস্তরীয় গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসা হয়েছিল এই আইনে। ভারতের রাষ্ট্র পরিচালনার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছিল সেই আইনের মাধ্যমে। সেই পদক্ষেপের ফল কী হয়েছে? গ্রাম স্বরাজ। গ্রামের মানুষ গ্রামের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। 
সংবিধান সংশোধনের তালিকায় আরও একঝাঁক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বল্প পরিসরে সব সংশোধনী আলোচনা করা সম্ভব নয়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার থেকে অতি সম্প্রতি মহিলা সংরক্ষণ আইন পাশ হওয়ার যার মধ্যে অন্যতম। অনেকেই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই আইন পাশ করাতে সফল হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। 
কিন্তু একজনের কথা বলা হল না। মাত্র পাঁচ বছর যিনি প্রধানমন্ত্রী থেকেছিলেন! তাঁর আমলে কিছুই কি গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধন হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। তিনি ছিলেন যুবশক্তির পরিচায়ক। মাত্র ৪২ বছর বয়সের প্রধানমন্ত্রী। দেশের যুবসমাজ দেশগঠনে যুক্ত হবে, এই ছিল তাঁর স্বপ্ন। সেই মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই যেন ১৯৮৮ সালে যুবস্বাধীনতার জয়গান গেয়ে গিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। সংবিধান সংশোধন করে ভোট দেওয়ার বয়স ২১ থেকে কমিয়ে করেছিলেন ১৮ বছর! চেয়েছিলেন, ‘এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে’!
 
 গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল
 সহযোগিতায় : বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী
1d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

আকস্মিক মাথার যন্ত্রণায় বিব্রত হতে পারেন। কাজকর্মে অপেক্ষাকৃত শুভ। সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা