বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

ফাঁসি হল না কেন?
তন্ময় মল্লিক

অভয়া কি জাস্টিস পেলেন, নাকি বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদল? আর জি কর কাণ্ডের মামলার তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তিতর্কের লড়াই শেষে বিচারক যে রায় দিয়েছেন তা লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আর তাতেই উঠেছে প্রশ্ন, ফাঁসি ও আমৃত্যু কারাবাসের মধ্যে যে দুস্তর ব্যবধান তৈরি হল, তারজন্য দায়ী কে? ঘাটতি কোথায়? অভয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাজা ঘোষণার পর এটাই রাজ্যের সর্বাধিক চর্চিত বিষয়। আদালতের রায়কে ঘিরে তোলপাড় চলছে। কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক, নাকি পরিকল্পিত বিভ্রান্তি সৃষ্টিই ফাঁসি না হওয়ার জন্য দায়ী? বিতর্ক সরিয়ে একটা কথা বলাই যায়, খুনি এক না একাধিক, তা নিয়ে হাওয়া গরম করায় রাজনীতির জল কিঞ্চিৎ ঘোলা হলেও অ্যাডভান্টেজ পেয়ে গিয়েছে অপরাধীই।
অভয়ার ধর্ষণ ও খুন কাণ্ডের রায় দিতে গিয়ে বিচারক জানিয়েছেন, এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়। তাই তিনি সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করলেও ফাঁসির সাজার বদলে দিয়েছেন আমৃত্যু কারাদণ্ড। বিচারক মনে করেছেন, সিবিআই যে তথ্যপ্রমাণ দাখিল করেছে তাতে সঞ্জয়ই একমাত্র অপরাধী। কিন্তু তার অপরাধের মাত্রা সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মোতাবেক বিরলের মধ্যে বিরলতমের পর্যায়ে পড়ে না। তাতেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। খোদ নির্যাতিতার বাবা, মা সিবিআই তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। মা বলেছেন, ‘আমার মেয়েটা বিচার পেল না। সিবিআইয়ের ব্যর্থতায় ন্যায়বিচার পেলাম না। ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। আর কিছু বলার নেই।’
এই হতাশা শুধু অভয়ার বাবা, মায়ের নয়। সিবিআইয়ের ব্যর্থতা নিয়ে ক্ষোভ প্রায় সর্বস্তরেই। তার কারণও আছে। আর জি করের ঘটনার পর এ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, 
মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর এবং হুগলি জেলার গুড়াপে তিনটি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে। রাজ্যের পুলিস তদন্ত করেছে। তিনটির তদন্ত এবং বিচার শেষ হয়েছে আড়াই মাসের মধ্যে। প্রতিটি ঘটনার মূল আসামিরই ফাঁসির সাজা হয়েছে। সেই তুলনায় আর জি করের ঘটনা অনেক বেশি মানুষকে আলোড়িত করেছিল। তারপরেও সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে এমন অভিযোগ উঠছে কেন?
এর আগেও বহুবার সিবিআইয়ের তদন্ত ও পদক্ষেপ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত নিয়ে দেশের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বারবার প্রশ্ন তুলেছে। এমনকী, সিবিআইকে ‘খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি’ বলে কটাক্ষ করে সুপ্রিম কোর্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি নিরপেক্ষ নয়। সিবিআই তদেন্তর উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। মানুষ সন্দেহ করছে, আর জি করের তদন্ত নিয়েও কি তাহলে তেমনই কিছু ঘটেছে?
আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী দাবি করেছেন, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সঞ্জয় রায়। তাকে ফাঁসি দেওয়া হোক। তারপরেও কেন সিবিআইয়ের দিকেই আঙুল উঠছে? আর জি কর কাণ্ডের রায় কারও পছন্দ না হতেই পারে। 
কিন্তু যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিচারক অপরাধীকে ফাঁসি দেননি, এমন অভিযোগ কেউ তোলেননি। সেই জায়গাও নেই। কারণ মামলার ফয়সালা হয় তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষীর উপর ভিত্তি করেই। ফলে ফাঁসি দিতে না পারার দায় গিয়ে চেপেছে সিবিআইয়ের উপরেই।
সিবিআই তদন্তে রাজনৈতিক অভিসন্ধির গন্ধ অনেকেই পান। কিন্তু অফিসারদের দক্ষতা নিয়ে কারও কোনও সংশয় নেই। তারপরেও এমন একটা স্পর্শকাতর ঘটনার তদন্ত নিয়ে সিবিআইকে কেন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে?
এবার একটা রাজনৈতিক অঙ্ক কষা যাক। সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ ফাঁসি হলে কী হতো? আর জি কর আর রাজনৈতিক ইস্যু থাকত না। তখন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সঞ্জয়ের সঙ্গে ধনঞ্জয়ের অপরাধের তুলনা টেনে নানা আলোচনা হতো। ধনঞ্জয়কে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা ফের মাথাচাড়া দিত। কাউকে চরম শাস্তি দিলে তার পক্ষে কিছু মানুষের সহানুভূতি তৈরি হয়। তখন সঞ্জয় কী করছে, কী খাচ্ছে, কী বলছে, তার পরিবারের লোকজন কী বলছেন, সেসব নিয়েই হতো আলোচনা। 
কিন্তু এখন কী নিয়ে চর্চা হচ্ছে? ফের ঘুরে ঘিরে আসছে তথ্যপ্রমাণ লোপাট, সেটিং তত্ত্ব। নতুন করে দেওয়া হচ্ছে লড়াইয়ের ডাক। চিকিৎসকরা ন্যায় বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামছেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অভয়ার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করছেন। পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। পুলিস তথ্য নষ্ট করে দেওয়ার জন্যই সিবিআই ঠিকমতো তদন্ত করতে পারল না, এমনটাও বোঝানো হচ্ছে। অভয়ার জাস্টিসের দাবিতে ঘোষিত হচ্ছে নানান কর্মসূচি। কেউ কেউ আবার রাত দখল, ভোর দখলের মতো আন্দোলন করার স্বপ্নও দেখছেন। সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজা হলে এসব কিছুই হতো না। তাই কি ছাব্বিশ পর্যন্ত আর জি কর ইস্যুকে জিইয়ে রাখার এটাও কোনও কৌশল? প্রশ্নটা তোলা থাকল।
তবে, সঞ্জয়ের অপরাধ বিরলের মধ্যে বিরলতম প্রমাণের ব্যর্থতার পিছনে আরও একটি কারণ উঠে আসছে। সেটা হল, ধর্ষণ এবং খুন নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি। ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু সূত্র ঘুরে বেরিয়েছে, যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে ঘেঁটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ‘এই আমি সোমা বলছি’ অডিও ভাইরাল হয়েছিল। ওই মহিলা এমনভাবে চাপা গলায় বাংলার চিকিৎসক-কন্যার ধর্ষণ এবং খুনের বিবরণ দিয়েছিলেন, যা 
একমাত্র ‘আই উইটনেসে’র পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। নিজের নাম বলার পর এমন নাটক করেছিলেন, যেন তিনি আবেগতাড়িত হয়ে সব বলে ফেলেছেন। বিষয়টি পাঁচকান হলে তাঁর ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে যাবে, এমন আশঙ্কাও করেছিলেন। এখন বোঝা যাচ্ছে, সবটাই ‘স্ক্রিপ্টেড’।
সেই ‘সোমা’র সন্ধান রাজ্য পুলিস তো বটেই, সিবিআইও পায়নি। তবে একথা হলফ করে বলা যায়, সোমাদেবীর সন্ধান পেলে সিবিআইয়ের তদন্ত কিছুতেই ১৬৫দিন গড়াত না। আর জি করের মর্মান্তিক ও পৈশাচিক ঘটনার সঙ্গে এভাবেই রং ও মশলা মেশানো হয়েছে। উদ্দেশ্য? যে কোনও মূল্যে মাথায় পৌঁছতে হবে। তাই এমন সব গল্প ফাঁদা হয়েছিল, যাতে চিকিৎসককে খুনের সঙ্গে লতায়পাতায় মুখ্যমন্ত্রীর একটা যোগসূত্র তৈরি করা যায়। মুখ্যমন্ত্রী না হলেও নিদেন পক্ষে সিএমও-র।
এ রাজ্যে কিছু ঘটলেই বিরোধীরা ‘মাথা’ পর্যন্ত পৌঁছতে হবে বলে চিৎকার জুড়ে দেয়। তাই আর জি কর কাণ্ডে স্লোগান তোলা হয়েছিল, ‘দফা এক দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।’ বিরোধীরা বুঝে গিয়েছে, এ রাজ্যের ‘মাথা’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাদের মাথাব্যথার কারণ। যে কোনও কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দক্ষতা তাঁর মজ্জাগত। খাদের কিনারা থেকেও দল এবং সরকারকে তুলে ধরার ক্ষমতা তাঁর আছে। আর সেটা পরীক্ষিত। তাই রাজ্যে খারাপ কিছু ঘটলেই চেষ্টা হয় তাঁকে জড়িয়ে দেওয়ার।
অনেকে মনে করেন, এ রাজ্যে বিরোধীদের খেলতে হচ্ছে মেসির বিরুদ্ধে। ‘ম্যান মার্কিং’ করেও ‘গোল’ আটকাতে পারছে না। তাই খেলে নয়, ‘মেসি’কে জখম করে ম্যাচ জিততে চাইছে। সেই কারণে ফুটবলের দখল নয়, মেসির পায়ে আঘাত করাই তাদের লক্ষ্য। আর জি করের ঘটনাতেও তারা একই ভুল করেছে। অভয়ার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতকে চিহ্নিত করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেয়ে ‘মাথা’কে জড়াতেই মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তারজন্য তারা নানান বিভ্রান্তিমূলক তথ্যও প্রচার করেছে। তার প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা কি গোয়েন্দাদেরও ছিল না? তাঁরাও কি ‘মাথা’ খুঁজতে গিয়ে কানাগলিতে ঘুরে সময় নষ্ট করেছেন? সেই কারণেই কি পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এবং সিসি টিভির ফুটেজ হাতে থাকা সত্ত্বেও সিবিআই আর জি করের ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ প্রমাণে ব্যর্থ হল?
সিবিআইয়ের ‘ব্যর্থতা’র কারণ নিয়ে আরও চর্চা হবে। চুলচেরা বিশ্লেষণে হয়তো অনেক তথ্য উঠে আসবে। রাজনীতির ময়দান সরগরম হবে। রাজনীতির কারবারিরা হয়তো তাদের অস্ত্রে নতুন করে শান দিতে পারবে, কিন্তু সন্তান হারানোর যন্ত্রণা তাতে একটুও কমবে না। এই মুহূর্তে অভয়ার বাবা-মায়ের বুকের জ্বালা মেটানোর ক্ষমতা একমাত্র আছে সিবিআইয়ের। সেই দায়িত্ব নিতে হবে তাদেরই।
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

আকস্মিক মাথার যন্ত্রণায় বিব্রত হতে পারেন। কাজকর্মে অপেক্ষাকৃত শুভ। সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা