বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে প্রসূতি মৃত্যু কাণ্ডের জেরে স্বাস্থ্যদপ্তরের অস্বস্তির মধ্যেই জানা গেল একটি ইতিবাচক খবর। সেটি হল- মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে রাজ্যে। দপ্তরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ ৯ মাসে রাজ্যে মাতৃমৃত্যুর হার কমে হয়েছে ৭৯।
রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষে এই হার ছিল ৯৩। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ছিল ৯৪। সেদিক থেকে বলাই বাহুল্য মাতৃমৃত্যু কমানোর দিক থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলায়।
দপ্তর সূত্রের খবর, সামগ্রিকভাবে মাতৃমৃত্যুর হারে উন্নতি হলেও রাজ্যকে কিন্তু যথেষ্ট চিন্তায় রেখে দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতি পুরুলিয়া, হাওড়া এবং জলপাইগুড়ির। এই তিন জেলার এমএমআর যথাক্রমে ১৪৯, ১৪২ এবং ১২৫। খারাপ পারফরমেন্স করা পরবর্তী সাত জেলা হল পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, রামপুরহাট ও বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলা। এইসব জেলার মাতৃমৃত্যুর হার যথাক্রমে ১১৪, ১০৪, ১০৪, ৯৯, ৯৭, ৯১ এবং ৮৯।
একদিকে যখন এই পরিস্থিতি এই গুরুত্বপূর্ণ সূচকে রাজ্যকে তুলনামূলক স্বস্তিতে রেখেছে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা। রাজ্যের সবচেয়ে কম মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে যে ১০ টি জেলায় সেগুলি হল কালিম্পং, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং এবং মালদহ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সর্বনিম্ন মাতৃমৃত্যুর হার থাকা কালিম্পং জেলায় শেষ ৯ মাসে একটিও মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। যদিও পাশাপাশি এটাও ঘটনা, সে জেলায় গত ৯ মাসে মাত্র ৯৮৯ টি প্রসব হয়েছিল! সেখানে সর্বোচ্চ মাতৃমৃত্যুর হার থাকা পুরুলিয়ায় ডেলিভারি হয়েছিল ৩৩৪৫৭টি! আর মাতৃমৃত্যুর শোচনীয় হারের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ৯ মাসে প্রসব হয়েছিল এক লক্ষ ১৬ হাজার ৭৯টি! তাই খুব সরল কোনও সমীকরণে আসা মোটেই সহজ হবে না। এমনই বলছেন পোড় খাওয়া স্বাস্থ্যকর্তারা।
এখন যে কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, মাতৃমৃত্যুর হার তো জানায় এসআরএস বুলেটিন যা জাতীয় পরিসংখ্যান ক্ষেত্রে বিখ্যাত 'স্যাম্পেল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম' হিসেবে। এসআরএস-এর তথ্য তো অন্য কথা বলছে।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে শেষ এসআরএস বুলেটিন প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে প্রতি এক লক্ষ প্রসবে দেশে গড় মাতৃমৃত্যু বা মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৯৭। বাংলার মাতৃমৃত্যুর হার ছিল জাতীয় গড়ের থেকেও খারাপ-১০৩।
বরাবরই এই বুলেটিন দু'বছর আগের পরিসংখ্যান তুলে ধরে। যেমন ২০২২ সালে প্রকাশিত এসআরএস ২০১৮ থেকে ২০২০ এর পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিল। সময় হয়ে গেলেও পরবর্তী এসআরএস এখনও প্রকাশিত হয়নি। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক কর্তা বলেন, "সেই এসএমএস শীঘ্রই প্রকাশিত হলেও তা দিয়ে আমরা আজকের পরিস্থিতি বুঝতে পারব না। তা আমাদের কাছে তুলে ধরবে কোভিডের সময়কার (২০২০-২২) সারাদেশের গড় এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মাতৃমৃত্যুর পরিসংখ্যান বা এমএমআর।"
ওই কর্তা বলেন, "ঠিক যেভাবে, যে যে বিষয়গুলো মাথায় রেখে এসআরএস তৈরি করা হয়, সেগুলিকে গুরুত্ব দিয়েই আমরা প্রতিবছরের হিসেব তৈরি রাখি। যাতে নিজেদের পরিস্থিতিটা বুঝতে পারি। জেলাগুলিকেও সজাগ করা যায়। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করা যায়। আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন বছরে বাংলার মাতৃমৃত্যুর হারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতির প্রচুর অবকাশ আছে।"