বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

বাজেটের আগে অর্থনীতির হাল কেমন
পি চিদম্বরম

বর্তমান সরকারের একটি যুক্তিসঙ্গত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক দর্শন থাকলে আসন্ন বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করা যেত, যেখানে চমকের প্যাকেজের কোনও জায়গা থাকত না। দুর্ভাগ্যবশত, তা হবে না। অতীতে পুঁজিবাদ থেকে স্বজনপ্রীতি (ক্যাপিটালিজম টু ক্রোনিইজম), উদারীকরণ থেকে জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য (লিবারালিজম টু মার্কেনটাইলিজম), প্রতিযোগিতা থেকে অলিগোপলি (কম্পিটিশন টু অলিগোপলিজম), রেউড়ি কটাক্ষ থেকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য এবং আইনত বাধ্যতামূলক 
এমএসপির (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) বিরোধিতায় কিষান সম্মানের ‘সুইং’ হতে দেখেছি আমরা। বর্তমান সমস্যাগুলির মোকাবিলার জন্য ২০২৫-২৬ বাজেট যথেষ্ট হবে কি না, সেটাই এখন দেখার।
দেশের নানা জায়গায় ভ্রমণ করার সময় বিভিন্ন 
স্তরের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে সমৃদ্ধির কিছু প্রমাণ অবশ্যই পাই। ১৯৫০-১৯৮০ সালের সঙ্গে তুলনা করলে, গত তিন দশকের প্রতিটিতেই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন 
প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। কারণ উদারীকরণ অসংখ্য মানুষের সামনে পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদনের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। পাশাপাশি এনে দিয়েছে সেগুলি কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক সুযোগ। তার ফলে ভারতে কোনও সরকার না-থাকলেও এই গতিপথে দেশের অর্থনীতি বছরে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারত! সরকারগুলির নীতি এবং কর্মকাণ্ডের দ্বারা প্রভাবিত হয় বৃদ্ধির হার—তা ‘ভালো’ অথবা ‘খারাপ’ হয়।
বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী
বর্তমান পরিস্থিতির এটাই বাস্তব যে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে হাঁপাচ্ছি আমরা এবং একইসঙ্গে অহঙ্কার করছি যে, ভারত পৃথিবীর দ্রুততম বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি—এটা সত্যও বটে। অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতিগুলি বৃদ্ধি পাচ্ছে ধীর গতিতে। যেমন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২.৭ শতাংশ এবং চীন ৪.৯ শতাংশ। তবে, আমরা মনে রাখি না যে গতবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপিতে (বর্তমান মূল্যে) ৭৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত হয়েছে। একই সময়ে অর্থনীতি বা জিডিপিতে ৮৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হয়েছে প্রতিবেশী চীনের ক্ষেত্রে! অথচ ওই সময়কালে দ্রুত বৃদ্ধির হার ভারতের জিডিপিতে যোগ করেছে মাত্র ২৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায়)। আরও পরিতাপের বিষয় হল, তার জন্য ২০২৪ সালে চীন ও ভারতের আর্থিক সমৃদ্ধির মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে। এই ছবিটা আমাদের জন্য এই শিক্ষাই রেখে দেয় যে, ভারতীয় অর্থনীতিকে বৃদ্ধি পেতে হবে দ্রুত হারে এবং ধারাবাহিকভাবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো দুই বৃহৎ অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্যই ভারতের এই সমৃদ্ধি জরুরি।
বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। কারণ বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তিগুলি হল—ভোগ, সরকারি বিনিয়োগ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ। এগুলির ভিতরে বেসরকারি ভোগ হ্রাসের ব্যাপারটা চোখেও পড়ছে। জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম অংশকে নিয়ে যে অত্যন্ত ধনিক শ্রেণি, তাদের ‘অশ্লীল’ রকমের ভোগ বা কেনাকাটা অর্থনীতির ক্রমোন্নতি সম্পর্কে বিভ্রম ছড়াচ্ছে।  জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত। এর নীচে রয়েছে দরিদ্র শ্রেণির ৬৯ শতাংশ মানুষ। এই দুই শ্রেণির মানুষ তাদের ভোগ বা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। কম গিয়েছে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যয়। ছোট শহর এবং গ্রামাঞ্চলে এটা বেশ স্পষ্ট। পূর্ববর্তী তিনটি ত্রৈমাসিকে স্থির মূল্যে ব্যক্তিগত চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়ের (পিএফসিই) পরিমাণ—২২ লক্ষ ৮২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, ২৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা এবং ২৪ লক্ষ ৮২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। সরকারি চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়ের (জিএফসিই) ছবিটাও তেমন ভালো নয়। উপর্যুক্ত তিনটি ত্রৈমাসিকের পরিসংখ্যান নিম্নরূপ—৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা এবং ৪ লক্ষ ৬৯৮ কোটি টাকা। 
ভোগ ও বিনিয়োগ
ভোগ বা কেনাকাটার বহর কমে যাওয়ার প্রধান কারণ দুটি: (১) মুদ্রাস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। (২) মজুরির নিম্ন হার এবং তা প্রায় থমকে রয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ছ’বছরে পুরুষ কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক প্রকৃত মজুরি ১৩৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে মাত্র ১৫৮ টাকা। একই মজুরি মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০ টাকা কম! পুরুষ নির্মাণ শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৭৬ টাকা থেকে বেড়ে ২০৫ টাকা হয়েছে। সেটা মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪৫ টাকা কম! লক্ষ লক্ষ মানুষ যে জীবিকা নির্বাহের জন্য লড়াই করছেন, দৈনিক মজুরির এই করুণ ছবিটা আমাদের সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়।
গত দশ বছরে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বা সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির (বর্তমান মূল্যে) ৬.৭ থেকে ৭.০ শতাংশের মধ্যে আটকে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগগুলির মূলধনী ব্যয় জিডিপির (২০১৯-২০) ৪.৭ শতাংশ থেকে ৩.৮ শতাংশে (২০২৩-২৪) নেমে এসেছে। বেসরকারি বিনিয়োগ রয়ে গিয়েছে জিডিপির ২১ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যে। সংখ্যাগুলি দিয়ে একটি গ্রাফ আঁকলে সেটি প্রায় সরলরেখার চেহারা নেবে। 
মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও বিভিন্ন কর
মুদ্রাস্ফীতি হল একটি মাইল ফলক। ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ৬.১৮ শতাংশ। 
স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণের ব্যয়ভার বছরে ১৪ শতাংশ হারে বেড়ে গিয়েছে। শিক্ষায় মুদ্রাস্ফীতির হার ১১ শতাংশের 
মতো। সিএমআইই’র হিসেবে, গত ডিসেম্বরে বেকারত্বের সর্বভারতীয় হার ছিল ৮.১ শতাংশ। বয়স, শিক্ষা বা 
লিঙ্গ অনুসারে সংখ্যাটিকে ভাঙলে যে ছবি ফুটে উঠবে তা আরও হতাশাজনক।
বাজেট-পূর্ব বিতর্কে নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি সরব আয়করদাতাদের স্বস্তির ব্যাপার নিয়ে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৮ কোটি ৯ লক্ষ ৩ হাজার ৩১৫ জন নাগরিক বা জনসংখ্যার ৬.৬৮ শতাংশ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। তাঁদের মধ্যে ৪ কোটি ৯০ লক্ষ ছিল ‘শূন্য কর’ বা জিরো ট্যাক্স রিটার্ন! করদাতাদের জন্য স্বস্তির মতোই দিনমজুর বা ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ নাগরিকদের আয়-উন্নতির ব্যাপারটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী অন্য বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে—পীড়নমূলক কর কাঠামো, বিশেষ করে জিএসটি আদায়ের জটিল ব্যবস্থা। এর জন্য গরিবসহ সকল মানুষকেই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। 
সরকার কর্পোরেট-পন্থী এবং ক্রোনি-পন্থী হয়ে 
ওঠার তকমা পেয়েছে। যে কর্পোরেট মুনাফার পরিমাণ ২০২২-২৩ সালে ছিল ১০ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকা, সেটি মাত্র একবছরে বা ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে ১৪ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে! তফসিলভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি দু’বছরে বিভিন্ন কর্পোরেটের যে বিপুল পরিমাণ ঋণ মকুব (রাইট অফ) করেছে সেই অঙ্কটি যথাক্রমে—২ লক্ষ ৯ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা এবং ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
সম্পদ ও সমৃদ্ধি লুকিয়ে যে দুটি জিনিসের মধ্যে তা হল—রাজকোষ ঘাটতি (ফিসকাল ডেফিসিট) এবং রাজস্ব ঘাটতি (রেভিনিউ ডেফিসিট)।
সরকার এই সমস্যাগুলির মোকাবিলা কীভাবে করে, দেশবাসী তা দেখছেন। অর্থমন্ত্রী এবং তাঁর উপদেষ্টাদের 
কাছে এই সমস্যাবলির সমাধান থাকতে পারে। তবে দিল্লিতে ‘ওয়ার্স্ট কেপ্ট সিক্রেট’ এটাই যে, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব 
দিতেই পারেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হলেন সেই কর্তা যিনি তা খারিজ করে দেবেন! 
লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। 
মতামত ব্যক্তিগত
1d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

আকস্মিক মাথার যন্ত্রণায় বিব্রত হতে পারেন। কাজকর্মে অপেক্ষাকৃত শুভ। সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা