বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য

ডিপ্রেশন কাটানোর দাওয়াই

সাধারণ মন খারাপ ও অবসাদের মধ্যে ফারাক বিরাট। অবসাদ কাটাতে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। চিনবেন কীভাবে কোনটা মন খারাপ আর কোনটা অবসাদ? পরামর্শে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবাঞ্জন পান
 
শরীরের যেমন অসুখ করে, মনেরও তেমন অসুখ হয়। এই বাক্যবন্ধ গত কয়েক বছরে নানাভাবে প্রচারিত। তবুও মনের অসুখ নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো পরিণত মানসিকতা এখনও আমাদের সমাজ দেখাতে পারে না। তাই আজও ‘ডিপ্রেশন’ মানে শুধুই ‘বড়লোকের অসুখ’, ‘বানানো অসুখ’, ‘আমাদের তো ভাতের চিন্তা আছে, তাই অত ডিপ্রেশন এল কি না ভাবার সময় নেই’, ‘বড়লোকি অসুখবিলাস’। ইদানীং যে ধরনের ব্যস্ত জীবনে আমরা অভ্যস্ত, যে পরিমাণ চাপ ঘরে-বাইরে আসে, তাতে সাধারণ মনখারাপ ও ডিপ্রেশনের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক আছে। কেমন ফারাক সেসব? সাধারণ মনখারাপ একটা সময়ের পর প্রকৃতিগতভাবেই কমে যাবে। ডিপ্রেশন কিন্তু তেমনটা নয়। এটি কমে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনও সময় হয় না। রীতিমতো ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা কিংবা কাউন্সেলিং প্রয়োজন হয়।
ডিপ্রেশনের লক্ষণ
ডিপ্রেশন বেশ স্থায়ী সমস্যা। হলে প্রথমে মানুষ নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে নিতে চায়। আগে যেসব জিনিস ভালো লাগত, তা থেকেও উৎসাহ উধাও হয়ে যায়। সবকিছুতেই রোগীর অনীহা তৈরি হয়। একে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ‘অ্যানহেডোনিয়া’। বেশিরভাগ মানুষই চুপচাপ হয়ে যায়।  খিদে ও ঘুমের সমস্যা থাকে।  খিদের কোনও অনুভূতি থাকে না। তবে অ্যাটিপিক্যাল ডিপ্রেশনে ঘুম ও খিদে রোগীর বেড়ে যেতে পারে। এই সমস্যাগুলোর কয়েকটি দেখা দিলে রোগীর মনোযোগে ঘাটতি দেখা দেয়, স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটা সময় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই এই রোগ সীমাবদ্ধ ছিল। তবে আজকাল শিশুদেরও ডিপ্রেশন হয়।
শিশুদের লক্ষণ
শিশুদের ক্ষেত্রে একনাগাড়ে ঘ্যানঘ্যান, কান্নাকাটি, শরীরে নানা স্থানে ব্যথা-বেদনা, ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায় হয়তো পড়াশোনা বা খেলাধুলা কিংবা অন্যান্য কোনও বিষয়ে শিশুটি বেশ ভালো ছিল, কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই হঠাৎই সে খারাপ ফল করতে শুরু করেছে। এককথায় তার যেন কোনও কিছুই ‘ভালো লাগছে না।’ সাধারণত এমন কোনও সমস্যা এলে শিশুর নানা শারীরিক পরীক্ষার পরেও যদি কোনও রোগের আভাস না পাওয়া যায়, তাহলে ধরে নেওয়া হয় শিশুটি ‘ডিপ্রেশনের’ শিকার। 
কেন হয় ডিপ্রেশন
এই অসুখ  নিয়ে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বহু গবেষণা চলছে।  সাধারণত ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন হওয়ার নেপথ্যে মস্তিষ্কের মধ্যে নানা নিউরোট্রান্সমিটারের যেমন, সেরাটোনিন, নরএপিনেফ্রিন ও ডোপামিনের তারতম্য ঘটে। সেরাটোনিনের অভাব হলে ঘুম, খিদে যৌন ইচ্ছা সবকিছুতেই প্রভাব পড়ে। এগুলির প্রতি অনীহা দেখা দেয়। খিদে ও ঘুমের অনুভূতিও থাকে না। ডোপামিনের অভাব হলে রোগীর আনন্দ অনুভূতি একেবারে কমে যাবে।  আবার নরএপিনেফ্রিন ক্ষরণে সমস্যা তৈরি হলে শরীরের নানা স্থানে ব্যথা-বেদনা হবে। মনোযোগের অভাব দেখা দেবে।  
চিকিৎসা
• এই রোগ একটি সিনড্রোম সদৃশ। তাই এই রোগের চিকিৎসা শুরু করার আগে বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। প্রথমেই দেখে নিতে হয় রোগীর কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কি না। যেমন: অ্যানিমিয়া, থাইরয়েড, ভিটামিন ডি-এর অভাব ইত্যাদি। রোগজনিত কারণে ডিপ্রেশন দেখা দিলে মনোরোগের চিকিৎসার সঙ্গে মূল রোগগুলির চিকিৎসা শুরু করতে হবে। 
• এরপর দেখতে হবে রোগীর কোনও সামাজিক বা ব্যক্তিগত জীবনে এমন কিছু সমস্যা আছে কি না যেখান থেকে ডিপ্রেশন আসতে পারে। সেই কারণটি খুঁজে বের করতে নানারকম থেরাপি মনোবিজ্ঞানে আছে। যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি), অ্যাকসেপট্যান্স অ্যান্ড কমিটমেন্ট থেরাপি (এসিটি) ইত্যাদি। 
• এই এসিটি থেরাপিটি তখনই প্রয়োগ করা হয়, যখন রোগীর ডিপ্রেশনের তেমন কোনও অতীত কারণ খুঁজে পাওয়া সম্ভবপর নয়। এই থেরাপির মাধ্যমে নানা পদ্ধতি ও ব্যায়ামে রোগীর মনকে বর্তমানে রাখার চেষ্টা করা হয়। রোগী যে মুহূর্তে আছেন, সেই মুহূর্তটি নিয়ে তাঁকে বাঁচতে শেখানো হয়। অতীতে মন থাকলে অতীতের নানা ব্যর্থতা, অপারগতা, অতৃপ্তি বা কষ্ট মনে হতাশার জন্ম দেবে। মন ভবিষ্যতে গেলে নানারকম আশঙ্কার জন্ম হবে। তাই মনকে বর্তমানে রাখার চেষ্টা করা হয়।  
• ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগী মূল সমস্যাকে অনেক বড় করে দেখেন। এটা অনেকটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে পৃথিবীকে দেখার মতো। সিবিটি-তে এই সমস্যাটি প্রতিরোধ শেখানো হয়। রোগী যাতে মূল সমস্যাকে অহেতুক বড় করে না দেখেন, সেই পাঠ শেখানো হয় এই থেরাপিতে। 
• সবরকম থেরাপির সঙ্গে শারীরিক কসরত ডিপ্রেশনের রোগীকে সুস্থ করে তোলার আর এক উপায়। এমনিতেই শারীরিকভাবে ক্লান্তি ঘিরে থাকে বলে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগী একেবারেই কোনওরকম ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করতে চান না। তাই চিকিৎসক ও পরিজনদের প্রাথমিক কাজ হল তাঁকে প্রতিদিন কিছু হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির মধ্যে রাখা। এতে মস্তিষ্ক থেকে সেরাটোনিন ও ডোপামিন ক্ষরণ হবে। যা ‘ফিল গুড’ হরমোন। এর প্রভাবে মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ও মন ভালো হবে। 
• এই সবকিছুর সঙ্গে ডিপ্রেশন কাটিয়ে ভালো হওয়ার পথে সঙ্গী হবে কিছু ওষুধ। সময়মতো ও নিয়মমতো সেই ওষুধগুলো নিয়মিত খেতে হবে রোগীকে। অ্যাকিউট ডিপ্রেশনে আক্রান্ত অনেকেই ওষুধ খেতে চান না। লোকচক্ষুর আড়ালে ওষুধ ফেলে দেন। এসব ক্ষেত্রে রোগীর পরিজনদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। 
• রোগীর সঙ্গে নিয়ত সংযোগ রেখে চলতে হবে পরিজনদের। অবসাদগ্রস্ত মস্তিষ্ক যেহেতু সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাই অনেক সময় দেখা যায়, অতিরিক্ত অবসাদ কোনও কোনও ব্যক্তিকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়। তাই রোগীর মনের তল পেতে, সে কী ভাবছে তা বুঝতে তাঁর সঙ্গে স্বাভাবিক গল্প করতে হবে। তাঁকে নজরে রাখতে হবে। তাঁকেও এমন কোনও দায়িত্ব দিতে হবে যাতে তিনি বোঝেন তিনিও পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্ব দিলে হয়তো তিনি ঠিকভাবে তা পালন করতে অসমর্থ হলেন, তখন নিজে সেই কাজটি সুষ্ঠুভাবে করে দিন কিন্তু ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষটি যেন কখনও তাঁর এই অক্ষমতা জানতে না পারেন, বরং তিনি যেটুকু করলেন তাতেই তাঁকে উৎসাহ দিন। 
মিথ ভাঙুন 
ডিপ্রেশনের রোগীকে অনেকেই তাঁর নিজের শখের গোড়ায় জল দেওয়ার পরামর্শ দেন। অনেকেই ভাবেন এই সময় গান শুনলে, পছন্দের কাজ করলে মন ভালো থাকবে। আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞান মানলে এই ভাবনার গোড়াতেই গলদ রয়েছে। আসলে ডিপ্রেশন আসার আগে এই কাজগুলি মনকে ভালো রাখে ঠিকই, তবে ডিপ্রেশন এলে কোনওভাবেই আর পুরনো শখ বা সাধের দিকে মন যায় না। ভালো বই পড়া. গান শোনার মতো ইতিবাচক অবসরযাপনেও রোগী কোনও মনোযোগ দিতে পারেন না। এই অমনোযোগী হওয়া বা আগের সব শখ ও ইচ্ছেয় মন না বসাই এই রোগের বৈশিষ্ট্য। তাই জোর করে তাঁকে দিয়ে কিছু না করানোই ভালো। বরং ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য সময়মতো তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। 
কীভাবে প্রতিরোধ
এই ইঁদুর দৌড়ের সময় ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে সকলের আগে খেয়াল রাখুন কয়েকটা বিশেষ দিকে।
পর্যাপ্ত ঘুম: আজকাল অনেককেই দেখা যায়, রাত জেগে ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা দেখছেন বা কোনও কাজ করছেন। বাধ্য হচ্ছেন অল্প ঘুমিয়েই সকালে উঠে অফিস চলে আসতে। ফলে ঘুমের ঘরে রোজই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। দিনের পর দিন একই রুটিন চলতে চলতে একসময় মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয় ও ডিপ্রেশন থাবা বসায়।
সূর্যালোক: সারাদিন অফিসে বা বা঩ড়ির এসি ঘরে বসে কাজ, দিন গড়িয়ে সন্ধেয় ছুটি। ফলে দিনের বেশিরভাগ সময়ই ঘরবন্দি থাকার কারণে সূর্যের আলোর সঙ্গে আড়ি। মস্তিষ্কে ‘গুড হরমোন’-এর ক্ষরণ কমে যাওয়ার এটিও একটি কারণ। তাই দিনের যে কোনও একটি সময় গায়ে রোদ লাগান। দরকারে মাঝে মাঝেই ভিটামিন ডি পরীক্ষা করে দেখে নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
শারীরিক কসরত: মস্তিষ্কের পুষ্টিতে শরীরচর্চার ভূমিকা অসীম। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিজের জন্য রবাদ্দ করুন। একটানা হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার বা ছোটাছুটি করে খেলাধুলো— এগুলোর মধ্যে যে কোনও একটি নিত্য রুটিনে রাখুন।
সামাজিক হন: আজকাল সামাজিকতা বলতে আমরা ডিজিটাল কিছু বিষয় বুঝি। সমাজমাধ্যমের পেজে যোগাযোগ রাখতেই আমরা অভ্যস্ত। দেখা যায়, নানা সমাজমাধ্যমের পাতায় সক্রিয় থাকা ব্যক্তিটিই হয়তো সবচেয়ে বেশি অবসাদের শিকার। আসলে ডিজিটাল মাধ্যমে আড্ডা বা যোগাযোগের বেলায় মস্তিষ্ক থেকে জরুরি হরমোনগুলি ক্ষরণ হয় না। বরং গবেষণায় প্রমাণিত বাস্তবে মুখোমুখি আড্ডা, গল্প, সামাজিকতায় এই হরমোনগুলি বেশি পরিমাণে ক্ষরিত হয়। তাই ডিপ্রেশন ঠেকাতে ডিজিটাল দুনিয়ায় সময় কম দিয়ে বরং প্রিয় বন্ধু ও পরিজনদের সঙ্গে বাস্তবিক দেখাসাক্ষাৎ বাড়ান। ডিপ্রেশন আসার আগেই রুখে দিতে পারবেন সহজে। 
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

দীর্ঘদিনের আটকে থাকা  কর্মে সফলতা। ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগের প্রচেষ্টায় সফলতা। ভ্রমণ যোগ আছে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৫৩ টাকা৮৭.২৭ টাকা
পাউন্ড১০৫.৭৫ টাকা১০৯.৪৯ টাকা
ইউরো৮৮.৭৯ টাকা৯২.১৭ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা