বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য

ফ্রোজেন শোল্ডারের সেরা দাওয়াই

পরামর্শে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ কিরণকুমার মুখোপাধ্যায়

ফ্রোজেন শোল্ডার কথাটির সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। ইদানিং এই অসুখ অতিপরিচিত হয়ে উঠেছে। 
এতে কাঁধ শক্ত হয়ে যায়। রোজকার কাজকর্ম করতে সমস্যা হয়। মাথার উপরে হাত তোলা, মাথার পিছনদিকে হাত নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। মেয়েরা বলেন, তাঁরা মাথার চুল বাঁধতে পারছেন না, পরতে পারছেন না শাড়ি! অথচ অসুখটি অত্যন্ত সাধারণ। 

কখন বাড়ে জটিলতা?
এখন একটা ছোট্ট জটিলতা সকলেরই জেনে নেওয়া দরকার। তা হল, কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলি থাকলে ফ্রোজেন শোল্ডার অনেক বেশি হয়। এই অসুখের মধ্যে প্রথমেই থাকবে ডায়াবেটিস মেলিটাস। এছাড়া হাইপারলিপিডিমিয়া বা মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরলের সমস্যা, থাইরয়েডের মাত্রা বেশি থাকা ইত্যাদিতেও সমস্যা বাড়ে। 

ফ্রোজেন শোল্ডার কী?
ফ্রোজেন শোল্ডার অসুখটি শুরু হয় কাঁধে ব্যথা দিয়ে। এরপর কাঁধ ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যায়। একসময় হাত নাড়ানোই অসম্ভব হয়ে যায়। তবে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নিজের থেকেই কাঁধ নমনীয় হয়ে যায়।

একইরকমের অন্য অসুখ
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া মানেই তা ফ্রোজেন শোল্ডার নয়। তাই কাঁধের অস্থিসন্ধির অনমনীয় হয়ে পড়া মানেই তাকে আমরা ফ্রোজেন শোল্ডার বলে চিহ্নিত করতে পারি না। এই অসুখ চিহ্নিত করতে হয় উপসর্গ বুঝেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ এক্ষেত্রে অত্যন্ত কম। তাই ফ্রোজেন শোল্ডারের মতোই উপসর্গ নিয়ে কোনও রোগী হাজির হলে নির্দিষ্ট কতকগুলি বিষয় সম্পর্কে আগে নিশ্চিত হতে হবে।
প্রথমেই দেখতে হবে কাঁধে কোনও সংক্রমণ আছে কি না। কারণ অস্থিসন্ধিতে সংক্রমণ হলে বেশি মাত্রায় জ্বর থাকে। তার সঙ্গে থাকে তীব্র ব্যথা। হঠাত্ করেই এই সমস্যা শুরু হবে। ফ্রোজেন শোল্ডারে হঠাত্‍ করে এমন জটিলতা শুরু হয় না। আর জ্বরও থাকে না। আরও এক ধরনের সমস্যাকে আপাতভাবে ফ্রোজেন শোল্ডার বলে ভুল করেন অনেকে।
কোনওভাবে চোট লাগার কারণে হাতে প্লাস্টার করা ও সেই কারণে দীর্ঘদিন হাতের নড়াচড়া না করতে পারার কারণেও হাত শক্ত হয়ে যায়। হাতের প্লাস্টার কাটার পর এভাবে হাত নড়াচড়া করতে না পারা কোনওভাবেই ফ্রোজেন শোল্ডার নয়।
ফ্রোজেন শোল্ডার এবং অন্যান্য অসুখের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, অসুখটি ধীরে ধীরে শুরু হয় ও ক্রমশ বাড়তে থাকে। আবার নিজের থেকেই ব্যথা সহ অনমনীয় ভাব ধীরে ধীরে কমে যায়। তবে কমতে অনেকখানি সময় নেয়। অন্যদিকে প্লাস্টার কাটার পরবর্তী সময়ে যে স্টিফনেস বা অনমনীয় ভাব থাকে, তা ক্রমশ হাত ও পায়ের সঞ্চালনের সঙ্গে কমতে থাকে।

অসুখের সূত্রপাত
ফ্রোজেন শোল্ডার অনেকক্ষেত্রেই শুরু হয় খুব সামান্য একটা আঘাত থেকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রোগী হয়তো একদিন হঠাত্ পড়ে গেলেন মাটিতে! উঠে দাঁড়িয়ে ফের রোজকার কাজে যোগ দিলেন। ১০-১৫ দিন পরে দেখা গেল, কাঁধ ধীরে ধীরে শক্ত হতে শুরু করেছে। 

আরও কিছু উপসর্গ
এই অসুখ চিনে নেওয়ার আরও কিছু উপায় আছে।
১. উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ব্যথা। আর ধীরে ধীরে উপসর্গ বাড়তে থাকে। 
২. হাতের মুভমেন্ট বা সঞ্চালনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। 
৩. চিকিত্‍সা শুরুর পরেও উন্নতি না হলে তখন দেখা হয় রোগীর ডায়াবেটিস আছে কি না। কারণ ডায়াবেটিস থাকলে ফ্রোজেন শোল্ডার হবেও তাড়াতাড়ি আবার সারতেও দেরি হবে। এছাড়া চিকিত্‍সাগত দিক থেকেও কিছু সতর্কতা নিতে হবে। এই প্রসঙ্গেই জানিয়ে রাখা উচিত, কমবয়সি রোগী, দুই কাঁধেই ফ্রোজেন শোল্ডার হলে আগে পরীক্ষা করে দেখতে হয় তাঁর ডায়াবেটিস আছে কি না। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ডায়াবেটিস রোগটি কতখানি গণ্ডগোলের! অনেকের আবার ফ্রোজেন শোল্ডার হওয়ার পরই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
৪. আরও একটি উপসর্গ সম্পর্কে বলা উচিত। তা হল রাত্রিবেলায় ফ্রোজেন শোল্ডারের রোগীর কাঁধ ব্যথা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যে হাতে ব্যথা, সেই দিকে কাত হয়ে শুতে অত্যন্ত কষ্ট হয় রোগীর।

চিকিত্‍সা
ফ্রোজেন শোল্ডার হল অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বা কাঁধের জয়েন্ট যে ক্যাপসুলের মতো আবরণীর মধ্যে থাকে, সেই ক্যাপসুলের অনমনীয় হয়ে পড়ার সমস্যা। এই ক্যাপসুল এতখানিই শক্তভাবে হাড়ের সঙ্গে জুড়ে থাকে যে হাত নাড়ানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে প্রথমেই রোগীকে নিশ্চিন্ত করা হয় যে অসুখটি সেরে যাবে। চিকিত্‍সা না করালেও সাধারণত ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে অসুখটি সেরে যায়। তাই বারংবার রোগীকে বোঝানো হয় যে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার অন্য হাতের মতোই এই হাতও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই হল প্রথম কাজ।
পরের কাজ হল, রোগীর ব্যথা কমাতে কিছু ওষুধ দেওয়া। চিকিত্‍সার তৃতীয় ধাপে আসে এক্সারসাইজ। এই প্রসঙ্গেই জানিয়ে রাখি, এক্সারসাইজ শুরুর পর প্রথমদিকে ব্যথা অনেকখানি বেড়ে যায়। আবার অনেক রোগীই ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে বলে এক্সারসাইজ বন্ধ করে দেন। এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখুন। ব্যায়াম করলেই উপকার হবে। তাই ব্যথা সহ্য করেই ব্যায়াম করুন। দরকার হলে ব্যথার ওষুধ খেয়েও এক্সারসাইজ করে যেতে হবে। ব্যায়ামের পরে ব্যথা হলে বরফ সেকও দিতে পারেন।

ফিজিওথেরাপি
ফিজিওথেরাপি এবং বিশেষ ধরনের ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয় রোগীকে। তবে তা পরের ধাপ। ফিজিওথেরাপির মধ্যে আলট্রাসোনোথেরাপি নামে একটি চিকিত্‍সা দেওয়া হতে পারে। তবে শুধু ফিজিওথেরাপিস্টের উপরই সমস্ত ভার দিলে চলবে না। কারণ ফিজিওথেরাপিস্ট হয়তো দিনে এক বা দু’বার আসবেন। বাকি সময়টা রোগীকেই ব্যায়াম করতে হবে। দিনের মধ্যে পাঁচ-ছ’বার করতেই হবে ব্যায়াম। কারণ কোনও ফিজিওথেরাপিস্টই দিনের মধ্যে পাঁচ থেকে ছ’বার এক্সারসাইজ করাতে আসেন না। এরপরও সমস্যা না কমলে জয়েন্টের মধ্যে একটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।
ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া ওষুধ রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় না। স্থানীয় জায়গাতেই থাকে। ব্যথা কমায়। আক্রান্ত কাঁধের অংশটি নরম করে। তবে তারপরও এক্সারসাইজ করতেই হয়। 

ম্যানুপুলেশন আন্ডার অ্যানাস্থেশিয়া
এরপরও অনেকের ব্যথা কমে না। সেক্ষেত্রে একটি বিশেষ পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়। একে বলে ম্যানুপুলেশন আন্ডার অ্যানাস্থেশিয়া।
এক্ষেত্রে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে অজ্ঞান করে কাঁধের ও নির্দিষ্ট জয়েন্টটিকে নিয়ম মেনে সঞ্চালন করা হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিত্‍সকই কাজটি করেন। বয়স্ক মানুষ হলে এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ বয়স্কদের অস্টিওপোরোসিস থাকতে পারে। আর কাঁধের জয়েন্টে যে ক্যাপসুলের কথা বলা হচ্ছে, তা হাড়ের সঙ্গে এতখানিই শক্তভাবে লেগে থাকে যে জোর করতে গেল বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এছাড়া আরও একধরনের পদ্ধতি আছে। এই ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ২০০ এমএল স্যালাইন জল জয়েন্টের মধ্যে খুব চেপে প্রবেশ করানো হয়। এর ফলেও ফ্রোজেন শোল্ডারের সমস্যা কমতে থাকে।

কখন সার্জারি
অনেক রোগীই এসে প্রথমে প্রশ্ন করেন যে, সার্জারির দরকার আছে কি না। এক্ষেত্রে বলা যায় সার্জারি সকলের প্রয়োজন হয় না। খুব অল্প সংখ্যক মানুষের সার্জারির প্রয়োজন হয়।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক
 
15d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পেশাগত উচ্চশিক্ষায় দিনটি বিশেষ শুভ। ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন সাফল্য পাবেন। অর্থ ও...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা