পুজোর ছুটিতে ডায়াবেটিসের রোগীরাও ঘরবন্দি থাকবেন না। প্রশ্ন হল, বাইরে বেড়াতে গিয়ে কী খেলে সুগার চড়চড় করে বাড়বে না, আবার শরীরও থাকবে চনমনে? জানাচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান ববিতা হাজারিকা।
ডায়াবেটিসের রোগীদের খাওয়াদাওয়ার বিষয়টি একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। আর তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বেড়ে গেলে রক্তেও সুগারের মাত্রা বাড়ে। এইভাবে ক্রমাগত রক্তে সুগারের মাত্রা ওঠানামা করলে তা ডায়াবেটিসের রোগীর পক্ষে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রক্তে মাত্রাতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকলে তা দেহের নানা অঙ্গ যেমন কিডনি, চোখ, নার্ভের ক্ষতি করতে থাকে।
সমস্যা হল, বাড়ির মধ্যে থাকলে বা অফিস-বাড়ি এমন চেনা চৌহদ্দির মধ্যে ঘোরাফেরা করলে খাওয়ার ব্যাপারে নিয়ম মেনে চলা যায়। তবে চেনা রুটিনের বাইরে বেরলেই হয় মুশকিল। চেনা খাবার মেলে না, ঘড়ি ধরে খাবার খাওয়া হয় না। এখন কোনও ব্যক্তি বেড়াতে গিয়ে শুধু হোটেলের খাবারে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে তেমন অসুবিধা হবে না। অর্থাৎ হোটেলে আগে থেকে বলে দিলে সকালের ব্রেকফাস্টে রুটি, সব্জি, ডিমসেদ্ধ, দুপুরে একটু ভাত, হালকা করে বানানো মাছের ঝোল, সব্জি খেয়ে নেওয়া যায়। রাতেও খাওয়া যায় চিকেন, রুটি, সব্জি। তবে বাড়িতেও একই খাবার আবার বেড়াতে গিয়েও সেই চেনা খাবারের শৃঙ্খলে নিজেকে বেঁধে ফেলতে কে-ই বা চায়! তাহলে তো পুরো বেড়ানোটাই মাটি। অতএব বেড়াতে গিয়ে একজন ডায়াবেটিস রোগী পরিবারের আর পাঁচজনের সঙ্গে খেতেই পারেন আলু-পরোটা, চিকেন কাবাব, নান, বিরিয়ানি। তবে হ্যাঁ, পরিমিতি বোধ খুব গুরুত্বপূর্ণ। একবারে হামলে পড়ে যেমন খুশি খেয়ে নিলে চলবে না। কারণ ডায়াবেটিসে শুধুই যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যে বিধিনিষেধ থাকে, তা তো নয়, তার সঙ্গে সারাদিনে কতটা ক্যালোরি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করছেন, তাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সব খাবারই খান, তবে পরিমাণ মতো।
ডায়াবেটিসের রোগীর আর একটা সমস্যা হল হাইপোগ্লাইসেমিয়া। বেড়াতে গিয়ে একবার খাবার খাওয়ার পরে পরবর্তী খাবার কোথায় পাবেন, তা জানা না থাকলে বিপদ। রক্তে সুগারের মাত্রা নেমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বেড়াতে গিয়ে এমন বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে। হতেই পারে পরবর্তী গন্তব্য ঘণ্টা পাঁচেক দূরত্বে! তাহলে ঘণ্টা পাঁচেক ধরে পেটে দানাপানি কিছু না দিলে সমস্যা হতে পারে। তাই যেখানেই বেড়াতে যান না কেন, সঙ্গে অবশ্যই কিছু শুকনো খাবার রাখুন। ছোলা ভাজা যেমন খুব ভালো খাবার। খেতে পারেন পপকর্ন। নিয়ে যেতে পারেন ফল।
আবার ঘুরতে বেরনোর আগে হোটেল থেকেই বানিয়ে নিয়ে যেতে পারেন স্যান্ডুইচ, সেদ্ধ ডিম। গাড়িতে যেতে যেতেই নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। আর হ্যাঁ, মনে করে যথেষ্ট মাত্রায় জলপান জরুরি। নাহলে ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা এড়ানো যাবে না। ফলের রস, কোল্ডড্রিংকসের মতো পানীয় এড়িয়ে চলাই উচিত। নাহলে আবার রক্তে বাড়বে সুগারের মাত্রা।
সমুদ্রের ধারেও হাওয়া বদলে যান অনেকে। সৈকতে গিয়ে সামুদ্রিক মাছ ভাজা খেতেই পারেন অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলে! তবে খেয়াল রাখতে হবে মাছ যেন পুরনো তেলে ভাজা না হয়। দোকানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকেও একটু নজর দিলে ভালো হয়। সন্ধের সময় মাছ ভাজা, একটু স্যালাড সহযোগে খেলে মন্দ হবে না। আবার দুপুরবেলা ডাবের জল পান করতে পারেন নিশ্চিন্তে। বিশেষ করে গরমকালে সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে প্রচুর ঘাম হয়। ঘামের সঙ্গে ইলেকট্রোলাইটস বেরিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ডাবের জল সাহায্য করবে সুস্থ থাকতে। খেতে পারেন লস্যিও। অতএব বেড়াতে গিয়ে মনে দুশ্চিন্তা পুষে না রেখে শুধুই ঘোরাঘুরির দিকে মন দিন। তাতে মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। আর মন সজীব থাকলে শরীরও থাকবে ফিট।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক