শরীর ও স্বাস্থ্য

রাত জেগে ওয়েব সিরিজ দেখে
অনিদ্রায় ভুগছেন? 
রান্নাঘরেই রয়েছে ঘুমের ওষুধ

লিখেছেন প্রাক্তন আয়ূষ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ নারায়ণী চক্রবর্তী এবং ডায়েটিশিয়ান সোহিনী চট্টোপাধ্যায়

‘আয় ঘুম যায় ঘুম দত্ত পাড়া দিয়ে’ এই ছড়া শুনে আমরা সকলেই বড় হয়েছি। আজ এত ব্যস্ততার যুগে সত্যিই কি ‘আয় ঘুম’ শব্দটি আছে? নাকি ‘আয় ঘুম’ নিয়ে হাহাকার আছে। তবে আমার মনে হয় সমস্যা থাকলে কোথাও যেন সমাধানও আছে। তা ঘুম নিয়ে বিস্তারিত বলার আগে এই কথাটি আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে ঘুম শব্দটি কিন্তু কোনও বিলাসিতা নয়, আমরা হয়তো প্রায়শই বলে থাকি প্রিয়জনকে যে ‘সারাজীবন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দে’, ‘তুই ঘুমো তোর ভাগ্য ঘুমিয়ে থাকবে’, আমি এ কথার কোনও বিরোধিতা করছি না, তবে এটাই জেনে রাখতে হবে যে, আমাদের হার্ট, ব্রেন, কিডনি, লাংস, চোখ এই সব কিছুর ভালো রাখার জন্য ঘুম অপরিহার্য। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত যেমন, তেমনই ঘুমটা কতটা ভালো হল, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
তবে নিউট্রিশনাল গাইডেন্স নিলে অবশ্যই অনিদ্রার সমস্যা কাটানো সম্ভব, তথা ব্যবহারিক জীবনে কিছু আচারের পরিবর্তন আনতে হবে। ঘুমের ৪টি পর্যায় আছে, আর এই স্টেজগুলির আলাদা নাম তথা আলাদা কাজ আছে। প্রথমেই যে স্টেজ দিয়ে আমার স্লিপ সাইকেল শুরু হয়। তা হল নন র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট-এর পাঁচটি পর্যায় আছে।
পর্যায় ১: এটি হল ঘুমের প্রথম অধ্যায় যা কিছু মিনিটের জন্যই থাকে। এই সময় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে ধীরে কমে আসে। শরীরের নার্ভগুলো শিথিল হতে শুরু করে।
পর্যায় ২: এই পর্যায় প্রায় ২৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এই সময় কোনও আই মুভমেন্ট হয় না, ধীরে ধীরে আমাদের বডি টেম্পারেচার কমে আসে। হার্টবিট কমে যায়, শ্বাসপ্রশ্বাসও ধীরে ধীরে চলতে থাকে।
পর্যায় ৩: গভীর ঘুমের পর্যায়, এক্ষেত্রে হার্টবিট ও শ্বাসপ্রশ্বাস সবচেেয় কম হয়ে যায়। এই সময়ও কোনও আই মুভমেন্ট হয় না।
পর্যায় ৪: এই সময় ব্রেন নানা কাজ অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলে। শরীের চলে নানা েমরামতি।
পর্যায় ৫: এই হল র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট। সব থেকে েশষ পর্যায়। এই স্টেজ-এ মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই পর্যায় অ্যাকটিভ স্লিপ নামেও পরিচিত। এই সময় ব্রেন অ্যাকটিভিটি বাড়ে।
এই স্টেজগুলি আছে বলেই আমাদের তৃিপ্তদায়ক ঘুম হয়। তাই কথায় বলে, কোনও রাতের সুন্দর ঘুমের পর আমরা আবেগগত িদক থেকে সুস্থ থাকি। আমরা অেনক ভালো অনুভব করি। ভালো ঘুম না হলে ক্লািন্ত আসে। উত্‍সােহর অভাব হয়।

কার কতটা ঘুম প্রয়োজন—
সদ্যোজাত (০-২ মাস): ১২-১৮ ঘণ্টা শিশু (৩-১১ মাস): ১৪-১৫ ঘণ্টা
১-৩ বছরের বাচ্চা: ১২-১৪ ঘণ্টা 
৩-৫ বছরের: ১১-১৩ ঘণ্টা
স্কুলে পড়া বাচ্চা (৫-১০ বছর): ১০-১১ ঘণ্টা
বয়ঃসন্ধিতে (১১-১৭ বছর): ৮-৯ ঘণ্টা
প্রাপ্তবয়স্ক: ৭-৮ ঘণ্টা

এখন পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, যাদের পূর্ণ সময় ধরে ঘুম হয় প্রত্যেক রাতে, তাঁদের আয়ু বাড়ে। 
এরপর আমাদের যা মাথায় আসে সেটা হল ভালো ঘুমের জন্য আমাদের কী পন্থা নেওয়া উচিত। কী বিষয় মেনে চলা উচিত, আর কোন কোন অভ্যেস বর্জন করা উচিত।
বর্তমান ব্যস্ততম জীবনযাত্রায় রাত পর্যন্ত কাজ, দেরি করে খাওয়া ও ঘুমানো যতটা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হচ্ছে পাল্লা দিয়ে ঠিক সেভাবেই বেড়ে চলেছে অনিদ্রা নামক  সমস্যাটি। আয়ুর্বেদ দৃষ্টিকোণে অনিদ্রা অর্থাৎ নিদ্রাহীনতার বেশ কিছু কারণ থাকলেও মূলত এই নিদ্রা রোগটিকে দীর্ঘদিন উপেক্ষা করায় প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।
১.অনিদ্রার লক্ষণ: উদ্বেগ, অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ, দুশ্চিন্তা, খিটখিটে মেজাজ, সিদ্ধান্তহীনতা, একাগ্রতার অভাব, চেহারায় লাবণ্য ও জৌলুস কমে আসা, চোখের নীচে কালিমা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায়।
২.অনিদ্রার কারণসমূহ: শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা দায়ী থাকলেও মূলত অতিরিক্ত চা কফি, উত্তেজক নেশা দ্রব্য সেবন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা, অতিরিক্ত ভাবনায় আবদ্ধ থাকা, হতাশা, শোওয়ার আগে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহার। রাতে নিয়মিত অধিক রুক্ষ বা গুরুপাক খাদ্য গ্রহণের অভ্যেস। অধিক চিন্তা, ভয়, শোক এবং ক্রোধ সংবরণ করতে না পারা ইত্যাদি।

ভালো ঘুমের জন্য কী করবেন
১) ঘুমোতে যাওয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার একটা নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা উচিত।
২) ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটু রিল্যাক্স করা উচিত, প্রয়োজনে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্নান করে নেওয়া উচিত। শুনতে পারেন মৃদু ধরনের যন্ত্র সঙ্গীত।
৩) ঘুমানোর ২-৩ ঘণ্টা আগে ডিনার করে নেওয়া উচিত। 
৪) ভালো ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দরকার হয়। যেমন অন্ধকার ঘর, শান্ত পরিবেশ, ভালো ম্যাট্রেস ও বালিশ।
৫) প্রতিদিন ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে, কিন্তু রাতে ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা উচিত নয়।
৬) ঘুমাতে যাওয়ার আগে কফি, চা, সফট ড্রিংকস অথবা চকোলেট খাওয়া উচিত নয়।
৭) অ্যালকোহল খাওয়া যাবে না ঘুমাতে যাওয়ার আগে।
তবে আলস্য থেকে ঘুম পাওয়া, ডিপ্রেশন থেকে ঘুম পাওয়া আর শরীরের কতটা ঘুম প্রয়োজন এই দু’টি বিষয়কে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এছাড়া সাত ঘণ্টা ভেঙে ভেঙে ঘুম কখনওই কাম্য নয়।
ঘুম সহায়ক ডায়েট: ১০টি খাবারের নাম বলা যায় যা আমাদের সাহায্য করতে পারে বিভিন্ন উপায়ে, তার মধ্যে ভালো ঘুম একটি অন্যতম।
১) আমন্ড: এতে ম্যাগনেশিয়াম থাকে অনেক। যা ভালো ঘুমে সাহায্য করে।
২) ক্যামোমিল চা: এই প্রজাতির চা আমাদের গভীর ঘুম আসতে সাহায্য করে।
৩) মিসো স্যুপ ৪) কলা ৫) কিউই ফল ৬) ওটমিল ৭) হার্ড কুকড ডিম ৮) বিনস ৯) সিরিয়াল (কর্নফ্লেক্স) ১০) দুধ।
কফি নিয়ে সতর্ক থাকুন
কফি খেলেও ভালো ঘুম ব্যাহত হয়। কফি পানের ১৫ মিনিটের মধ্যে তা রক্তে মেশে ও শরীরকে উদ্দীপিত করার কাজ শুরু করে দেয়। কফি উত্তেজনা বাড়ায়। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা এবং ঘুমের ব্যাঘাত হয়। তাই ঘুমানোর আগে কফি খাওয়া ঠিক নয়। যাঁরা অধিক পরিমাণে কফি খান, তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কফি বাচ্চা এবং সন্তানসম্ভবা মায়েদের না খাওয়াই ভালো।

আয়ুর্বেদে অনিদ্রার সমাধান
নিদ্রাবেগ ধারণ জনিত সমস্যা সমূহ
চরক সংহিতা মতে যে সকল বেগ ধারণ সুস্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর। তার মধ্যে নিদ্রাবেগ ধারণ অর্থাৎ ঘুম পাওয়া সত্ত্বেও না ঘুমানোর অভ্যেস বা সময়ে পর্যাপ্ত না ঘুমানোকেই বিবিধ রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন জিম্ভা অর্থাৎ বারং বার হাই ওঠা, ঝিমুনি ভাব, মাথা যন্ত্রণা, অক্ষিগৌরব অর্থাৎ চোখে ভারবোধ, অঙ্গমর্দ ইত্যাদি।
অনিদ্রায় উপকারী পাঁচটি আয়ুর্বেদ ভেষজ:
আয়ুর্বেদ দ্রব্যগুণ মতে বেশ কিছু ভেষজের বর্ণনা রয়েছে যা নিদ্রাজনক, ক্লান্তিনাশক  এবং মেধ্য। এগুলির মধ্যে রয়েছে অশ্বগন্ধা, জটামাংসী, ব্রাহ্মী, শঙ্খপুষ্পী, থানকুনি উল্লেখ্যযোগ্য।
পঞ্চকর্মে অনিদ্রার চিকিৎসা
আয়ুর্বেদ চিকিৎসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভাগ হলো পঞ্চকর্ম অর্থাৎ পাঁচ প্রকারের বিশেষ চিকিৎসা যার দ্বারা শরীর শুদ্ধি করে রোগকে সমূলে উৎপাটিত করা হয়ে থাকে। 
এক্ষেত্রে শিরোধারা অর্থাৎ বিশেষ ভেষজ ঔষধি ক্বাথ বা তেল সহ মাথায় ধারা আকারে থেরাপি। শিরোঅভ্যঙ্গ অর্থাৎ মাথায় অনিদ্রা নাশক ঔষধি তেল মালিশ। এছাড়াও সর্বাঙ্গ স্নেহন ও বস্তি চিকিৎসা ফলপ্রসূ।

অনিদ্রা প্রতিরোধে কিছু মুষ্টিযোগ
• বঙ্গসেন সংহিতা মতে অশ্বগন্ধাচূর্ণ, চিনি ও গব্যঘৃত সহ সেবন করলে নিদ্রলভ হয় অর্থাৎ অনিদ্রা দূর হয়।
• জটামাংসী একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ যার ফান্ট অর্থাৎ গরম জলে এক থেকে দুই টুকরো ঘণ্টা দশেক ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেবন করলে অনিদ্রা, চিত্ত চাঞ্চল্য সমস্যায় উপকার দর্শে।
• ব্রাহ্মী শাক ঘিয়ে ভেজে নিয়মিত খেলে অনিদ্রা দূর হয়।
অনিদ্রায় দিনচর্যা:
দিনচর্যা অর্থ সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সারাদিনের বিজ্ঞানভিত্তিক একপ্রকার সংক্ষিপ্ত রুটিন যেখানে সূর্যোদয়ের পূর্বে বিছানা ত্যাগের অভ্যেস থেকে, প্রত্যহ মলত্যাগ, স্নান, ব্যায়াম ইত্যাদির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা রয়েছে। অনিদ্রা রোগী নিয়মিত এই দিনচর্যা মেনে চললে ওষুধ ছাড়াই উক্ত সমস্যা থেকে স্থায়ী মুক্তি পেতে পারেন এবং নিয়মিত স্নানও অনিদ্রা রোগীর পক্ষে বেশ উপকারী।
অনিদ্রায় পথ্য আহার:
মূলত যাবতীয় বাত নাশক ঔষধি গুণসম্পন্ন দ্রব্য অনিদ্রায় হিতকরী। এগুলোর মধ্যে মহিষ দুগ্ধ, গব্য ঘৃত, দই, গুড়, আঙুর, মুগ ডাল, ভেষজ সুরা ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।
অনিদ্রায় বর্জনীয়:
রাত্রি জাগরণ, শোওয়ার পূর্বে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনের ব্যবহার,অধিক ব্যায়াম,বাত বর্ধক আহার সেবন,দীর্ঘক্ষণ যানবাহনে ভ্রমণ ইত্যাদি বর্জনীয়।
অনিদ্রায় যোগাসনের উপকারিতা
ভুজঙ্গাসন, পবনমুক্তাসন, শবাসন, পদ্মাসন  ইত্যাদি যোগ ব্যায়াম অনিদ্রা রোগীর পক্ষে উপকারী।
5d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা