প্রয়াগরাজ, ২৯ জানুয়ারি: পূর্ণকুম্ভে মধ্যরাতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মৌনি অমাবস্যার তিথিতে ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন বহু ভক্ত। প্রশাসনের প্রত্যাশার তুলনায় পুণ্যার্থী সমাগম বেশি হতেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৩০ জনের। জখম আরও ৬০ জন। জানা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার মধ্যরাত ১টার পর ত্রিবেণী সঙ্গমঘাট থেকে ১ কিমি দূরে প্রবল ভিড়ের চাপে আচমকাই ভেঙে যায় ব্যারিকেড। পদপিষ্ট পরিস্থিতি তৈরি হতেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। জখম হন প্রায় ৬০ জন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। অন্যদিকে, নানা বেসরকারি সূত্রে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় শাহি স্নান।
যদিও প্রথমে মৃত্যুর খবরকে ‘গুজব’ বলতেই ব্যস্ত হয় যোগী প্রশাসন। অদ্ভূতভাবেই দুর্ঘটনার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেন, বহু পুণ্যার্থীর সমাগম হওয়াতে ভিড়ের চাপে বেশ কয়েকজন ভক্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রচুর সংখ্যক পুণ্যার্থী সঙ্গম ঘাটের উদ্দেশে আসতেই এই বিপত্তি বলেও দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দাবি, বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে এই ঘটনার পরই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। ফলে পরেরদিকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পদপিষ্টের ঘটনা মেনে নিতে বাধ্য হয় যোগী সরকার। জানাতে হয় হতাহতদের সংখ্যাও। ডিআইজি বৈভব কৃষ্ণা জানিয়েছেন, গতকাল রাত ১টা-২টোর মধ্যে ওই ঘটনাটি ঘটে। পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে আপাতত ২৫ জনের নাম-পরিচয় জানা গিয়েছে। তবে বাকি ৫ জনের পরিচয় জানা যায়নি। তা জানার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের নানা ছবি-ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। যা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গোটা দেশ।
সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একাধিকবার ফোন করে কথা বলেছেন আদিত্যনাথের সঙ্গে। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “প্রয়াগরাজে হওয়া ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই ঘটনায় যারা নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আহতদেরও দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। স্থানীয় প্রশাসন সবরকমভাবে আক্রান্তদের পাশে রয়েছে। আমি নিজে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে কথা বলেছি এবং ঘটনার দিকে নজর রাখছি।” মোদির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “কুম্ভমেলায় পদপিষ্টের ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর শুনে আমি মর্মাহত। নিহতদের শোকস্তব্ধ পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। গঙ্গাসাগর মেলা থেকে শিখেছি, এ ধরনের বিপুল জনসমাগমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার দরকার হয়। নিহতদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।”
পাশাপাশি, কুম্ভমেলার ঘটনায় সুর চড়িয়েছে বিরোধীরাও। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তোপ দেগে বলেছেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় ভিআইপি, ভিভিআইপিদের বেশি গুরুত্ব দেওয়ার ফলেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এছাড়া কুম্ভমেলার অব্যবস্থাপনা নিয়ে সরব হয়েছেন সপা প্রধান অখিলেশ যাদবও। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগরাজে (তৎকালীন নাম এলাহাবাদ) মৌনী অমাবস্যায় পুণ্যস্নানে আসা পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছিল। তথ্য অনুযায়ী সেটিই ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের প্রথম কুম্ভমেলা। তবে সেই মেলায় আচমকাই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। হুড়োহুড়ি, পদপিষ্টে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৮০০ জনের।