বিকিকিনি

এক সকালে হিড়িম্বা মন্দিরে
সফরনামা

পুরাণ ও প্রকৃতির বন্ধুত্ব হয়েছে মানালির হিড়িম্বা মন্দিরে। ঘুরে এসে বর্ণনা দিলেন প্রীতম সরকার।

কুলু থেকে সড়কপথে মানালি পৌঁছনোর দ্বিতীয় দিনে আমরা যখন বিখ্যাত হিড়িম্বা দেবীর মন্দিরে গেলাম, তার কয়েক দিন আগেই নবরাত্রি শেষ হয়ে গিয়েছে। যখন হিমাচলের ট্যুর প্রোগ্রাম করছিলাম, তখনই মানালির এই মন্দিরটির নাম তালিকায় রেখেছিলাম। বিপাশা নদীর ধারে মানালির হোটেল থেকে আমাদের গাড়ির ড্রাইভার যখন হিড়িম্বা মন্দিরের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন, সেসময় দেবদারু গাছের ঘন জঙ্গলের বড় বড় গাছের ফাঁক দিয়ে মন্দিরের কোনও অংশই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার বললেন, একটু হেঁটে এগিয়ে গেলেই নাকি আমরা হিড়িম্বা মন্দিরের এলাকায় ঢুকে যাব। আমরা মানে, সস্ত্রীক আমি এবং আমাদের একমাত্র মেয়ে। সামনেই দেখি, একটা বড় লোহার জাল দেওয়া গেট, তারপর রাস্তা ভিতরের দিকে চলে গিয়েছে। সেই রাস্তা ধরে সামান্য পথ হেঁটে যাওয়ার পরেই চোখে পড়ল বহুবার বইতে পড়া এবং ছবিতে দেখা সেই বিখ্যাত হিড়িম্বা মন্দির। দেবদারুর ঘন জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে আমাদের গায়ে সূর্যের তাপ এসে পড়ছে। হিমাচলের ঠান্ডায় সেই সূর্যের তাপে আরামই লাগছে। দেখলাম মন্দিরের ভিতরে ঢোকার জন্য বেশ বড় লাইন পড়ে গিয়েছে। মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে যে লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে, এমন ধারণা আমাদের ছিল না। 
লাইনে দাঁড়ানো সামনের কয়েকজন বাঙালি পর্যটককে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, মন্দিরের ভিতরের গর্ভগৃহটির দরজা অত্যন্ত ছোট এবং নিচু। আর গর্ভগৃহটির ভিতরেও বেশি জায়গা না থাকায় আগ্রহী পর্যটকদের ধাপে ধাপে ঢোকানোর সুবিধার জন্যই এই লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগত্যা, লাইনে দাঁড়িয়েই দেখতে থাকি প্রাচীন প্যাগোডা ধরনের মন্দিরের চারপাশ। মন্দিরের বাইরে বারান্দা গোছের জায়গা রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি বল্গা হরিণের শিং দেওয়ালের গায়ে আটকানো। মনে পড়ল, বইতে পড়েছিলাম, হিড়িম্বাদেবীর মন্দিরটি ১৫৫৩ সালে মহারাজা বাহাদুর সিং তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে,  মন্দিরটি একটি গুহার চারপাশে নির্মিত যেখানে দেবী হিড়িম্বা ধ্যান করেছিলেন।  রাক্ষস পরিবারের কন্যা  হিড়িম্বা  প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এমন একজনকে বিয়ে করবেন যিনি তাঁর ভাই হিড়িম্বকে মল্লযুদ্ধে হারাতে পারবেন। তাঁকে খুব সাহসী হতে হবে, ভয়ডর থাকলে চলবে না। পাণ্ডবদের নির্বাসনের সময়, যখন তাঁরা  মানালি  পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, তখন পঞ্চপাণ্ডবের দ্বিতীয় ভাই  ভীম  হিড়িম্বকে মল্লযুদ্ধে হারিয়েছিলেন। এরপর হিড়িম্বা ভীমকে বিয়ে করেন এবং তাদের সন্তান  ঘটোৎকচের  জন্ম হয়। 
অবশেষে আমাদের অপেক্ষার শেষ হল। আমরা তিনজন একসঙ্গেই মন্দিরের গর্ভগৃহের ভিতরে ঢুকতে পারলাম। দেখলাম গর্ভগৃহের অন্ধকার কাটাতে সেখানে ইলেকট্রিক বালব জ্বলছে। সেই আলোয় দেখলাম, গর্ভগৃহ একটি বিশাল পাথর দখল করে আছে, শুধুমাত্র একটি  তিন ইঞ্চি লম্বা পিতলের ছবি যেটি হিড়িম্বা দেবী হিসাবে পুজো পান। পাথরের সামনে একটি দড়ি ঝুলে থাকে। পুরোহিতদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, এক কিংবদন্তি অনুসারে, আগের দিনগুলিতে 
ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা দড়ি দিয়ে পাপীদের হাত বেঁধে ওই পাথরের গায়ে ঝুলিয়ে দিতেন।  ওটাই ছিল সবচেয়ে কঠোর শাস্তি। মন্দিরের এক আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য হল দেবীর পায়ের ছাপ। মন্দিরের ভিতরে একটি পাথরের খণ্ডে খোদাই করা রয়েছে সেই ছাপখানা। তাকেই পুজো করা হয়।
মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, কিছু দূরে রয়েছে আরও একটা মন্দির, দেবী হিড়িম্বার ছেলে ঘটোৎকচকে উৎসর্গ করা।  
আমরা তিনজন মন্দিরের শান্ত নিরিবিলি এলাকায় কিছুটা সময় কাটানোর জন্য দেবদারু জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় বসলাম। দূর থেকে যতটা ঘন লেগেছিল এই জঙ্গলকে, বাস্তবে দেখলাম সেই দেবদারুর জঙ্গল অতটা ঘন নয়। তবে গাছগুলোর আকৃতি যেমন বড়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রায় প্রতিটি গাছের গুঁড়ি ততটাই মোটা। কিছুক্ষণ সেই শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিয়ে মন্দির চত্বর ছেড়ে বাইরে এসে দেখি কয়েকজন হিমাচলি ডালায় করে আপেল কেটে বিক্রি করছেন।  পর্যটকরা ভিড় করে সেই আপেল কিনছেন। দোকানিও শালপাতার ছোট ছোট প্লেটে আপেল কেটে  তাতে বিটনুন ছড়িয়ে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। 
নজর করে দেখলাম, এই আপেলের রং লাল নয়। দোকানিদের ঝুড়িতে রাখা গোটা আপেলগুলোর রং সবুজ! তবে কি কাঁচা আপেল?  প্রশ্নটা মনেই রেখেছিলাম ভাগ্যিস কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার কন্যা উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘ও মা গ্রিন অ্যাপেল!’  সঙ্গে আরও বলল এর স্বাদ নাকি অত্যন্ত ভালো। লোভ সামলাতে পারলাম না। অতি সস্তায় বিক্রি হচ্ছে দেখে কিনেই ফেললাম। কিনতে গিয়ে দোকানির সঙ্গেও একটু আলাপ জমল। শুনলাম বাড়ির বাগানের আপেল বলেই সস্তায় তা বেচছেন দোকানি। আমরা তিনজনে তিন প্লেট সবুজ আপেলের টুকরো মুখে দিয়েই চমকে উঠলাম! কী অপূর্ব সুন্দর স্বাদ! এত মিষ্টি ফলের স্বাদ আগে পাইনি। কাটা আপেলের টুকরোগুলোর উপর ছিটিয়ে দেওয়া বিট নুন থাকায় খেতে আরও ভালো লাগছে! লোভে পড়ে আমি ও আমার স্ত্রী আরও এক প্লেট করে অর্ডার দিয়ে বসলাম।  
আপেল খেতে খেতে দেখলাম, কিছু দূরে বেশ কিছু চমরি গাইয়ের গায়ে নানা রংবেরঙের কাপড় দিয়ে সাজিয়ে হাতে দড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন স্থানীয় মানুষ। সত্যি 
বলতে কী, এর আগে কখনও 
চমরি গাই দেখিনি। অনেক পর্যটক সেই চমরি গাই এর পাশে দাঁড়িয়ে বা চমরি গাইয়ের পিঠে চেপে ছবি তুলছেন। চমরি গাইগুলোর শিঙের আকৃতি দেখে আমার আর সাহস করে সামনে দাঁড়িয়ে বা পিঠে চেপে ছবি তোলা হয়নি। তবু জীবনে প্রথমবার চমরি গাই দেখছি, একটা স্মৃতি রাখব না? পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে ফোনের ক্যামেরা যেই না একটা চমরি গাইয়ের দিকে তাক করেছি, অমনি চিৎকার করতে করতে তেড়ে এলেন তার মালিক। আমার সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া শুরু করলেন হিমাচলি 
ভাষায়। 
আমি তো অবাক! এদিকে ভাষার বিন্দুমাত্র কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না। ফলে প্রত্যুত্তর করব, তারও উপায় নেই। পরে একজন হিন্দি ভাষায় জানালেন, আমি চমরি গাইয়ের পিঠে চেপে ছবি তোলার দরদাম করেও  ভাড়া নিইনি। ফলে চমরি গাইয়ের ছবি তোলারও কোনও অধিকার আমার নেই! তাজ্জব কাণ্ডই বটে। যাই হোক, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে ঝামেলা করার কোনও মানে হয় না তাই বিরক্ত হলেও সরে এলাম।  
অন্যদিকে সরে এসে রোদের তাপ নেওয়ার জন্য যখন দাঁড়িয়েছিলাম আমরা তিনজনে, সেসময় হঠাৎ নজরে এল আমার থেকে কিছুটা দূরে একটা চমরি গাই ঘুরে ঘুরে ঘাস খাচ্ছে। আশপাশে কোনও লোক নেই। আমি দেখলাম, এই সুযোগ! পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে ঝটিতি তুলে ফেললাম কয়েকটা ছবি। তারপর হাঁটা দিলাম পার্কিংয়ের উদ্দেশ্যে।
তখন ভরদুপুর। সকালের নরম রোদ এবার কড়া হয়ে উঠেছে। সূর্য একেবারে মাথার উপরে চলে এসেছে। মানালি ম্যালের পাশে কয়েকটা বাঙালি হোটেলের সন্ধান পেয়েছিলাম, গত রাতে। শুনেছিলাম, ওই হোটেলগুলোতে ভাত, ডাল, সব্জি, এমনকী আলুসেদ্ধ, মাছ, খাসির মাংস সবই পাওয়া যায়। আমাদের রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার কিছু লোক ওই এলাকায় বাঙালি খাবারের হোটেলগুলো পরিচালনা করেন। সেই কবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি!  ডাল, ভাত, আলুসেদ্ধর জন্য মন কেমন করছিল।  গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বললাম, ‘চলো মানালি ম্যালের পাশের বাঙালি খাবারের হোটেলে।’
কীভাবে যাবেন: বিমানে যেতে চাইলে কলকাতা থেকে সরাসরি শিমলা পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে মানালি ও হিড়িম্বা মন্দির দর্শন করতে পারেন। হাওড়া থেকে মানালিগামী ট্রেনে সরাসরি মানালি পৌঁছে সেখান থেকেও হিড়িম্বা মন্দির যেতে পারেন গাড়ি নিয়ে। মানালিতে থাকার জন্য বহু ধরনের হোটেল রয়েছে। পছন্দ অনুযায়ী বুকিং করে নিতে পারবেন সহজেই।
ছবি: লেখক  
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা