বিকিকিনি

বরফ ঢাকা গুলমার্গ

বরফে ঢাকা এক অপূর্ব স্বর্গরাজ্য। অপার্থিব রূপের মহিমায় মন ব্যাকুল হবেই। গুলমার্গ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বহুদিন হৃদয়ে থেকে যায়।
 
মন ভোলানো, চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে গুলমার্গ এমনই এক পাহাড়ি অঞ্চল যা একসময় ব্রিটিশদের গ্রীষ্মাবকাশের অন্যতম পছন্দের ঠিকানা ছিল। গুলমার্গ অর্থাৎ ফুলের উপত্যকা। শুনলাম আগে নাম ছিল গৌরী মার্গ। সুলতান ইউসুফ নাম বদলে রাখেন গুলমার্গ। সম্রাট জাহাঙ্গীরেরও খুব পছন্দের জায়গা ছিল এটি। আসলে পুরো কাশ্মীর‌ই রাজরাজরাদের গল্প-কাহিনি আর ইতিহাসে ভরপুর। শ্রীনগর থেকে আমাদের গাড়িটা যতই গুলমার্গের পথে এগচ্ছিল উত্তেজনার পারদ ততই চড়ছিল। গাড়িচালক সন্দীপ কথা দিয়েছিল সে সকালবেলায় আমাদের বরফে মোড়া গুলমার্গে নিয়ে যাবে। বরফ শব্দটার উপর একটা দুর্বলতা আমার রয়েছে। বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার মতো ঠান্ডার সময় শীতের দেশে বরফের দেখা নিয়ে বাঙালির আহ্লাদেপনার শুরু আছে শেষ নেই।  তাই আপামর বাঙালির মতোই বেড়াতে গিয়ে বরফের দেখা মিললেই কেমন যেন একটা ‘লাভ ইউ জিন্দেগি’-র মতো গান গাইতে ইচ্ছে করে। গাড়ি যত এগিয়ে চলেছে, দেখছি রাস্তার দুই পাশে জমাট বাঁধা বরফ ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। তারই মাঝে বড় বড় পাইন, চিনার, দেবদারুরা যেন সবুজ কবিতা হয়ে দাঁড়িয়ে। বড় মনোরম সে দৃশ্য। ক্যামেরাবন্দি করেও সুখ নেই, মনে হয় কী যেন বাকি রয়ে গেল। 
ভূস্বর্গের গুলমার্গ! বরফের সাম্রাজ্য আর নিসর্গের ছোঁয়া, সেই রূপে পাগলপারা প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের দল। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা। শীতল ঝরনা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ, আর হঠাৎ হঠাৎ মেঘের শামিয়ানা ধরে শ্রীনগর থেকে গুলমার্গ যেতে সময় লাগল ঘণ্টা দুয়েক। শীতের মরশুমে বরফে ছাওয়া যেন ভারতের ছোট্ট সুইজারল্যান্ড। গুলমার্গের অনন্য প্রকৃতিকে শুধু চোখে দেখেই মন ভরে না, অনুভব করতে হয়। দেখলাম, চারদিকে বরফ অন্তত পাঁচ-ছ’ফুট পুরু। চলতে হলে বরফে পরার জুতো, স্পাইক দেওয়া লাঠি, ওভারকোট পরতেই হবে। সবকিছুই গুলমার্গে ভাড়া পাওয়া যায়।  
বরফ বিছানো বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সুদৃশ্য কাঠের বাড়ি অল্প দূরে বরফের মাঝখান থেকে উঁকি মারছে চার্চ।  চলছে স্লেজ গাড়ি। গাইড শাহিনের কথায় জানলাম এখানে প্রচুর সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে। আমিই বা কম যাই কীসে? আমার ছবি কেউ তুলুক না তুলুক নিজেই চারটি সেলফি তুললাম! এখানে ফোটোগ্রাফারও পাওয়া যায়। যাঁরা আপনার জীবনের এই আনন্দময় মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করে তক্ষুনি অ্যালবামে সাজিয়ে দিতে  হাসিমুখে তৈরি। 
প্রকৃতি মানুষের মনে এমনই অনুভূতি আনে যা বয়সের সীমারেখা নিমেষে দূরে ঠেলে দেয়। দেখছিলাম বয়স্করাও কী সুন্দর আহ্লাদে, আনন্দে মেতে উঠে ছবি তুলছেন, কাব্যি করছেন, গলা ছেড়ে গান গাইছেন।  উজ্জ্বল ঝকমকে রোদ পিঠে চাপিয়ে চলতে চলতে মনে হচ্ছিল স্বর্গ কি এর চাইতেও সুন্দর? প্রকৃতির যে কত রকম রূপ! চারদিকে অপার নৈঃশব্দ্য। পাইন দেবদারুর গায়ে থোকা থোকা বরফ যেন সাদা ফুল হয়ে ফুটে আছে। কোথাও আবার একদিনের পুরনো বরফ থেকে জল ঝরছে টুপটুপ। তারই মধ্যে বিপণির ব্যবস্থা রয়েছে। 
কেবল কার প্রকল্প, গুলমার্গ গন্ডোলা হল গুলমার্গের শীর্ষ আকর্ষণ। ফরাসি ভাষায় গন্ডোলা মানে স্বর্গের গাড়ি। ছ’জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে।‌ দু’টি পর্যায়ে ভ্রমণ সম্ভব। প্রথম পর্যায়ে দর্শনার্থীদের ৪৫৩০ ফুট উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২,২৯৩ ফুট উচ্চতায় নেওয়া হয়।  স্বর্গের গাড়িতে চড়ে যখন মেঘের কোলে ইচ্ছেডানাকে মেলে দিয়েছি তখন মনের ভেতরের এক অনন্য, অনবদ্য, অবিস্মরণীয় অনুভূতি। সেখানে পাইন গাছগুলোর সারা শরীর জুড়ে বরফের কম্বল! একদম অন্যরকম লাগছে দেখতে। রোপ‌ওয়ের মধ্যে বসে পাওয়ার কাট। এও এক উপরি পাওনা। বেশ খানিকক্ষণ শূন্যে ঝুলে  থেকে চারপাশ দেখলাম প্রাণভরে। একটু যে বুক ঢিপ ঢিপ করছিল না তা নয়। কিন্তু প্রকৃতির অমন পাগলপারা রূপ সব ভুলিয়ে দিল। আইস স্কেটিংয়ের একেবারে প্রথম অভিজ্ঞতা। যতই পা বসাতে যাই, পা আর চলে না। বারবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছি। অথচ কী অবলীলায় কাশ্মীরি মানুষজন স্কেটিং করছে। পর্যটকদের জন্য সমস্ত রকম সরঞ্জাম এখানে ভাড়া পাওয়া যায়।  গরম বড় মোজা, জ্যাকেট, টুপি ও জুতো। ইন্সট্রাক্টরও থাকেন। স্নো বুট পরে হাঁটতে গেলে চিনির দানার মতো গুঁড়ো বরফে পা বেশ খানিকটা ডুবে যায়। শুধু চোখ ছাড়া সারা শরীরই প্রায় ঢেকে, লম্বা বুট পরে আনাড়ি মানুষের অনভ্যস্ত চলায় ধুপধাপ বরফের মাদুরে পড়ে যাওয়া সেও কম উপভোগ্য নয়। আশপাশের সবাই (কেউ কাউকে চিনি না কিন্তু) আমরা নির্মল হাসিতে মাতছি। এশিয়ার অন্যতম  স্কেটিং স্পট গুলমার্গ। স্নো স্কেটিংয়ের দক্ষিণা সাতশো থেকে হাজার টাকা। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি আদর্শ সময়। প্রচুর দেশি বিদেশি পর্যটক এই আকর্যণে আসেন এখানে। এই খেলায় অভ্যস্ত যারা, তারা খিলেনমার্গ অবধি যায়।  সেখান থেকে হিমালয়ের রেঞ্জ এবং পুরো কাশ্মীর উপত্যকা দেখা যায় আকাশ পরিষ্কার থাকলে। গুলমার্গে ঘোড়ায় চড়াও এক দারুণ অভিজ্ঞতা! দু’পাশে পপলার গাছের সারি, তার মধ্যে দিয়ে মেঘে ঢাকা রোমান্টিক রাস্তা মেঘের পাহাড় দু’হাতে সরিয়ে  আপনি ঘোড়ায়  চলেছেন। ভাবতেই কী রোমাঞ্চ, তাই না?  পৃথিবীর উচ্চতম  গল্ফ কোর্স রয়েছে এখানে। শ্রীনগর থেকে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় গুলমার্গ যাওয়ার জন্য। একদিনেই যাতায়াত সম্ভব। 
কীভাবে যাবেন: বিমান বা ট্রেনে শ্রীনগর পৌঁছে সেখান থেকে গুলমার্গ গাড়ি ভাড়া করে, শেয়ার ট্যাক্সি নিয়ে অথবা বাসে যেতে পারেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য: গুলমার্গ গন্ডোলার জন্য অনলাইন টিকিট বুক করা যায়। গন্ডোলার বোর্ডিং পাস হাতে পেলে তিন ঘণ্টার জন্য তা বৈধ। সকাল দশটায় খোলে। বিকেল পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায়।
তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক
 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা