বিকিকিনি

অল্প যত্নেই গাছ বাঁচান

গাছ ভালোবাসেন। চেষ্টাও করেন তা দিয়ে ঘরবাড়ি বা বাগান সাজাতে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে গাছ বাঁচাতে পারেন না। এর প্রতিকার কীভাবে হবে জেনে নিন।

মধুরিমার গাছের শখ। ছোট্ট ফ্ল্যাটটা যখন অয়নের সঙ্গে দেখতে এসেছিল, তখনই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল একফালি বারান্দা ও ঘরের কোন কোন কোণে কেমন গাছ লাগাবে। গৃহপ্রবেশের পর শখ করে কিনেও আনল। কিন্তু বিধি বাম! গাছ আর বাঁচে কই? কিছুদিন ভালো থাকছে, কিন্তু অল্প দিনেই কেমন যেন দুর্বল হয়ে পাতা ঝরে পড়ল। কোনও কোনও গাছের ডাল মরে গেল। সাধের অর্কিড গাছগুলো তো বড়ই হল না। প্রতিবেশীর বাগানেও দেখেছে, বেগুনি জবার গাছটা অল্প কয়েকটা ফুল দিয়েই কেমন যেন মিইয়ে পড়ল। ডালিমে ফুল এল কিন্তু ফল ধরার আগেই সে গাছ শুকিয়ে গেল। 
মধুরিমার মতো অবস্থা আরও অনেকেরই হয়। হয় পদ্ধতি জানেন না, নয়তো ব্যস্ততার কারণে গাছকে সময় দিতে পারেন না, এমন নানা কারণে শখ করে লাগানো গাছ বাঁচে না। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে গাছকে বাঁচানো সম্ভব। পল্লবিত বাগান দেখেতে আর কে না ভালোবাসে!

গাছ বাছাই: নিয়মিত যত্ন নিতে পারবেন না কিংবা হাতে সময় কম, যদি এমন হয়, তাহলে গাছ বাছাইয়ের সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। এমন কিছু গাছ বাছুন, যেগুলো খুব সুখী গাছ নয়। অর্থাৎ প্রচুর যত্ন ও সময় লাগে এমন গাছ না বেছে বরং অল্প যত্নে বাঁচে এমন গাছ বাছুন। অ্যালোভেরা, লাল অ্যাগনোলিমা, ব্রোমেলিয়াড, স্নেক প্লান্ট, হলুদ, তুলসী, আইভি, ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা, কারিপাতা, পানপাতা ইত্যাদি গাছ লাগাতে পারেন। হলুদ গাছে যেমন জল-সার দেওয়ারও খুব প্রয়োজন হয় না। মাটি থেকে শোষণ করা জল নিয়েই এই গাছ ফলন দিতে পারে। খুব অল্প যত্নেই বাঁচে যে কোনও ফার্ন। পানপাতা যেমন দেওয়াল পেয়ে গেলেই নিজের মতো বাড়তে পারে। স্নেক প্লান্ট, অ্যালোভেরা গাছেরও বাড়তি যত্ন সেভাবে লাগে না। যে কোনও ক্যাকটাসও ঘরের শোভা বাড়ায়। কিন্তু যত্নের তেমন বালাই নেই। অল্প যত্নের ফুলগাছ চাইলে টগর, কলকে ইত্যাদি লাগাতে পারেন। তবে এসব গাছ সাধারণত ঝাঁকড়া ও মাঝারি আকারের হয়। তাই বাগান করার মতো জায়গা থাকলে তবেই এসব গাছ বাছুন। 

গাছ ছাঁটুন: গাছের স্বাস্থ্য যাঁরা ভালো বোঝেন, তাঁরা বছরে অন্তত তিন-চারবার গাছ ছাঁটেন। গাছ অনেকটা মানুষের চুলের মতো। ট্রিম করলে যেমন চুল স্বাস্থ্যকরভাবে বাড়ে, তেমনই মাঝেমধ্যে গাছ ছাঁটলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। গাছের মৃত ডালপালা কেটে, শুকিয়ে যাওয়া হলুদ পাতা ছেঁটে ফেলুন। ইনডোর প্লান্ট ট্রিম করার জন্য নির্দিষ্ট কাঁচিও পাওয়া যায়, সেগুলিও ব্যবহার করতে পারেন। এতে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় থাকে। ছত্রাক সংক্রমণ ও পোকামাকড়ের উৎপাতও কমে।

জল দেওয়ার নিয়ম: গাছ আছে বলেই দু’বেলা তাতে জল দিতে হবে— এমন ধারণা কিন্তু গাছের যত্নের ক্ষেত্রে খুব একটা খাটে না। গাছের ত্বকেও ময়েশ্চারাইজেশন প্রয়োজন। মাটি খুব বেশি শুকনো কিংবা ভেজা থাকলে তা গাছের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক নয়। মোমের প্রলেপের মতো পাতা বা ঘন ঝোপ হয়ে থাকা গাছে জল বেশি পরিমাণে লাগে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল দিয়ে ফেলছেন কি না বোঝার কিছু সহজ নিয়ম আছে। টবের গোড়ায় জল জমে থাকলে বুঝবেন, জলের পরিমাণ বেশি দেওয়া হয়েছে। তাই সেই জল দ্রুত কোথাও ফেলে দিন। জল প্রয়োজন আছে কি না, তা বোঝার আরও একটি সহজ উপায় আছে। একটা লম্বা সূচ টবের মাটিতে গেঁথে সঙ্গে সঙ্গে বের করে আনুন। যদি সূচের গায়ে অল্প ভেজা মাটি লেগে যায়, তাহলে বুঝতে হবে জল দেওয়ার প্রয়োজন আপাতত নেই। নইলে গাছের গোড়ায় পচন ধরে গাছ মরে যাবে। ঋতুভেদে জল দেওয়ার পরিমাণ বাড়বে-কমবে। গরমে বা শীতে যে জল লাগবে, বর্ষায় কিন্তু সেই পরিমাণ জল লাগবে না। এক একটি গাছের জলের প্রয়োজন ও শোষণক্ষমতা এক একরকম। সেদিকটিও খেয়াল রাখা প্রয়োজন।  

গাছের স্বাস্থ্যের খেয়াল:  গাছ বাঁচাতে চাইলে গাছের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা আবশ্যক। কিছু লক্ষণে বোঝা যায়, গাছ কেমন আছে। যেমন— ১) অতিরিক্ত পাতা ঝরতে থাকলে বা পাতার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে ও পচন ধরলে সচেতন হতে হবে। অনেক সময় জলের অতি প্রয়োগে এই সমস্যা হয়। ২) পাতা যদি শুকিয়ে যায় অথবা গাছের নীচের অংশের পাতা যদি কুঁচকে হলুদ হয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে গাছে জল লাগবে। ৩) গাছ পরিচর্যার সময় কখনও গরম বা বরফশীতল জল ব্যবহার করবেন না। গাছে সাধারণ তাপমাত্রার জলই কাজে লাগে। বরং বরফশীতল জল ও গরম জল গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে। 

আলোর সন্ধান: গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যে সূর্যালোকের প্রয়োজন, এ আর নতুন কথা কী! তবে অতিরিক্ত রোদও গাছের ক্ষতি করে। পাতাবাহার ও অর্কিড এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় কিন্তু কড়া রোদ পড়ে না। ফুলের গাছের জন্য ১০-১২ ঘণ্টা রোদ যথেষ্ট। পাতাবাহারি গাছ হলে ১৪-১৫ ঘণ্টা সূর্যালোকে রেখে অন্য সময়টা ছায়ায় রাখতে পারেন। আজকাল নানা সোলার প্যানেল ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন সূর্যের আলোর বদলে বাগান পরিচর্যায় ব্যবহার করা যায়।

নড়াচড়া নয়: একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একটি গাছ রাখার কিছুদিন পরেই সেই জায়গা থেকে সরিয়ে অন্যত্র রাখেন অনেকে। অনেকেই ভাবেন, গাছের জায়গা বদলে বদলে দিলে হয়তো গাছ দ্রুত বাড়বে। এটি একটি মিথ। বরং এতে গাছের ক্ষতি হয়। একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বারবার গাছ সরালে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গাছের অসুবিধা হয়। ধরা যাক, বারান্দায় পড়া রোদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে একটি গাছ ভালোই বড় হচ্ছে। তাকে অল্প কিছুদিন পরেই বারান্দা থেকে সরিয়ে বাগানে চড়া রোদে রাখলেন। এতে তার সমস্যা হতে পারে। যদি একান্তই কোনও গাছকে অন্যত্র সরাতে হয়, তাহলে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ার জন্য তাকে সপ্তাহখানেক এক-দু’ঘণ্টা রেখে আসুন নতুন জায়গায়। তারপর পুরোপুরি সরান। 

সারের সারকথা: বেশিরভাগ গাছে সার দেওয়ার একটি ফর্মুলা আছে। এন-পি-কে, অর্থাৎ নাইট্রোজেন (এন), ফসফরাস (পি)ও পটাশিয়াম (কে) এই পদ্ধতি মনে রাখুন। টবের মাটিতে প্রথমে নাইট্রোজেন, তারপর ফসরাস ও শেষে পটাশিয়াম দিতে হবে। পাহাড়ি বা অন্য ধরনের গাছের জন্য এর সঙ্গে খোল পচা, গোবর সার বা হাড় গুঁড়োও প্রয়োগ করতে হয়। তবে হাতে বিশেষ সময় না থাকলে এধরনের গাছ লাগাবেন না। সাধারণ ফুল গাছের জন্য পটাশিয়াম খুব জরুরি। পাতাবাহার জাতীয় গাছে নাইট্রোজেন প্রয়োজনীয় উপাদান। খোল পচা বা গোবরসার তৈরি করে গাছে দেওয়ার সময় না থাকলে বাজারে আজকাল রেডিমেড সারও কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। 

ক্যাকটাসের খেয়াল: এইসব গাছে জল বিশেষ লাগে না। তবে এরা মরুভূমির মতো শুকনো বালি ও পাথুরে মাটিতে ভালো হয়। তাই এদের জন্য প্রয়োজন আলাদা ড্রেনেজ সিস্টেম। এসব গাছে বেশি জল দেবেন না। জল যাতে বেরিয়ে যেতে পারে, তার জন্য টবের নীচে যেন ফুটো থাকে। 
মনীষা মুখোপাধ্যায়
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা