বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি

ভালো থাকুন সারা বছর

একটা ঝাঁ চকচকে নতুন বছর! গায়ে নতুন বইয়ের মতো সুগন্ধ। সবে তার চারটি দিন পেরিয়েছে। হাতে বাকি এখনও ৩৬১ দিন। কম কথা নয়! গোটা বছর খুব ভালো যাক— এমন শুভেচ্ছাবার্তা  দিয়ে আমরা নববর্ষে পথ চলা শুরু করি ঠিকই, তবে সকলেই জানি, জীবন তার নিজের নিয়মেই এগবে। সেখানে সুখের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শোক, হাসির পাশে কান্না, সাফল্যের কাছেই ব্যর্থতা। 
নতুন বছরে তাই খারাপকে পাশ কাটিয়ে বাঁচা যাবে না। তবে ভালোর পাল্লা ভারী হলে খারাপ সেখানে কোণঠাসা। সুতরাং বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ভালোর দিকে মন দিন। মন ও শরীর মোটের উপর ভালো থাকলে চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেকটাই আয়ত্তে থাকে। 
মনোবিদ ডঃ সুতনুকা গুহ এবং লাইফস্টাইল এক্সপার্ট ও ডায়েটিশিয়ান সুমেধা সিং জানালেন, ‘সুখী ও সুস্থ থাকার চাবিকাঠি রয়েছে মূলত মনের হাতে। শারীরিক নানা সমস্যা থাকলেও মনকে ভালো রাখলে জীবন আর একটু সুন্দর হয়ে ধরা দেয়।’ তাই মনের ঘর সাজিয়ে ফেলুন এখনই। প্রথমেই রইল ২৫-৬০ বছর বয়সি মানুষদের কথা, যাঁরা কর্মজীবন কাটাচ্ছেন। 

কৃতজ্ঞতার অনুশীলন: বিপদে-আপদে যাঁরা একবার হলেও পাশে থেকেছেন, তাঁদের কথা ভুলবেন না। হয়তো আর্থিকভাবে নয়, কিন্তু মানসিকভাবে দুটো ভালো কথা বলেছেন আপনার সমস্যার সময়ে। নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে তাঁদের বিরুদ্ধে যাওয়ার আগে দু’বার ভাবুন। বরং তাঁদের বিপদে সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করুন। কৃতজ্ঞতা মনে শুধু প্রশান্তিই আনে না, ব্যক্তিত্ব ও আদর্শকেও শক্তিশালী করে— যা চলার পথের বড় পাথেয়। 

ছোট ছোট লক্ষ্য: অফিসের কাজ হোক বা বাড়ির কোনও গুরুতর পরিকল্পনা, সফল হতে গেলে প্রথমেই কাজটিকে কয়েকটি ভাগে ভেঙে ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করুন। এবার এক একটি ভাগ সফলভাবে পূরণ করতে করতে এগন। একটা সময়ে দেখবেন, উদ্বেগ ও মানসিক চাপের বাড়াবাড়ি ছাড়াই কাজটি সুন্দরভাবে উতরে গিয়েছে। অফিসের কোনও বড় প্রোজেক্ট করার সময়ও এই একই পথ নিন। আপনার ছুটি, অসুস্থতা, অধীনস্ত কর্মীর সুবিধা-অসুবিধা সবকিছু মাথায় রেখে লক্ষ্য ভাগ করুন। তাহলে পরিকল্পনা ও ফোকাস নড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। 

সঠিক ডায়েট: শরীরের প্রয়োজন বুঝে ডায়েট করুন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে, বাড়ির খাবার খেয়েই কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌঁছনো সম্ভব। অনেকেই সোশ্যাল সাইটের পাল্লায় পড়ে ডায়েট শুরু করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবছর আর সেই বোকামি নয়। কতটা জল খাবেন সারাদিনে, তাও নির্ধারিত হয় অসুখ ও শরীর বুঝে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  
ঘুম প্রিয় হোক: সারাদিন একেবারেই সময় পান না পছন্দের ওয়েব সিরিজে চোখ রাখতে। তাই রাতটুকুই ভরসা! এই রুটিনে এতকাল অভ্যস্ত হলে এবার তা বদলে ফেলুন। ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা দেখার জন্য কিছুটা সময় চুরি করতে হবে নিত্য কাজের মাঝেই। তাতে একটি ওয়েব সিরিজ দেখতে একটু বেশি সময় লাগলেও তা মানিয়ে নিন। কিন্তু কোনওভাবে রাতের ঘুম নষ্ট করে মোবাইলে চোখ নয়। অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা নিশ্ছিদ্র ঘুম আবশ্যক।

মেডিটেশন ও নিজেকে সময়: মনোযোগ বাড়াতে এর বিকল্প নেই। মনের উপর আস্থা বাড়াতে, মেজাজ-রাগ-স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে আনতে ও মন শান্ত করতেও এর জুড়ি নেই। নতুন বছরে দিনে অন্তত কিছুটা সময় মেডিটেশনে দিন। প্রথমে একটানা ৩০ সেকেন্ড একাগ্রতার অভ্যাস করুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে। এছাড়া নিজের জন্যও সময় বের করুন কিছুটা। ‘মি টাইম’-এ ফাঁকি নয়। এই সময়টা নিজের যা ভালো লাগে করুন। কোনও শখের চর্চাও করতে পারেন। 

উল্টোপাল্টা খরচ নয়: মুদ্রাস্ফীতির বাজারে সংসার চালানোর পালে যোগ করুন বাড়তি হাওয়া। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা অনেক আজেবাজে খরচ করি। কেউ হয়তো অ্যাপ ক্যাব বেশি বুক করি, কেউ আবার একটু বেশিই বাইরে খাওয়াদাওয়া করি। কারও বা কেনাকাটার শখ আছে। অফলাইন ও অনলাইনে নানা ছাড়ের হাতছানিতে খরচ বেশি হয়। এবছর প্রথম থেকেই খেয়াল রাখুন সেসব। সারা মাসের খরচের হিসেব রাখতে নানা অ্যাপ আছে। সেসব অ্যাপ রেখে দিন ফোনে। 

বেড়াতে যান: মনের আগল খুলে দিয়ে বিশ্ব দেখুন। বেড়াতে যাওয়ার লিস্টে বাড়ির কাছের কোনও ডেস্টিনেশন থাকলেও কোনও অসুবিধা নেই। বছরে এক-দু’বার সময় বের করে টুক করে ঘুরে আসুন কোথাও। সপ্তাহে একদিন বাড়ির সব সদস্য মিলে একসঙ্গে একটা গোটা দিন কাটানোর চেষ্টা করুন। এতে মন ভালো থাকার পাশে সম্পর্কগুলোও মজবুত থাকে। গুড হরমোন ডোপামিন ক্ষরণ হয়। ফলে ডিপ্রেশন দূরে থাকে। 

ভুলতে শিখুন: কিছু কিছু বিষয় মনে রেখাপাত করে। কিন্তু সেসব বিড়ম্বনা ও বিরক্তি বাড়ায়। তাই খুঁটিনাটি সবকিছু ধরে বসে থাকবেন না। যে ইচ্ছাকৃত অপমান করে, তার অপমানের জবাব দিন নিজের সাফল্য ও কাজ দিয়ে। উপেক্ষা করুন তাঁদের। 

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শরীরচর্চা: কোনও সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত দু’বার রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, হার্টের অবস্থা খতিয়ে দেখুন। থাইরয়েড, ডায়াবেটিস হল কি না দেখে নিন। জিমে ভর্তি হওয়ার আগে ফুসফুস ও হার্টের চেক আপ করিয়ে নিন। অজানা সমস্যা থাকলে তা ধরা পড়বে এবং সচেতন হয়ে শরীরচর্চা করা যাবে। দিনে অন্তত ৪০-৫০ মিনিট শরীরচর্চা করুন। হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার বা জিমে এয়ারোবিক্স এক্সারসাইজ— যে কোনও একটি বেছে নিতে পারেন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও একাধিক লাইফস্টাইল ডিজিজ দূরে থাকবে। 

বিনিয়োগে সচেতন হন: শেয়ার বাজার থেকে নানা মিউচুয়াল ফান্ড, সহজে ধনী হওয়ার হাতছানি চারপাশে। কিন্তু আপনি কোথায় কতটা বিনিয়োগ করবেন, নতুন করে কোনও বিমা বা এসআইপি শুরু করবেন কি না— এগুলো সোশ্যাল মিডিয়া দেখে একটা ধারণা করে নিন। কিন্তু বিনিয়োগের আগে আর্থিক পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করুন।  
ধূমপান ও অ্যালকোহলে রাশ: হার্ট ও ফুসফুসকে ভালো রাখতে, দু’-তিন ধরনের ক্যান্সারের থেকে বাঁচতে ও স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমাতে ধূমপান ও অ্যালকোহল আজই বর্জন করুন জীবন থেকে। 
এবার আসা যাক ছোটদের কথায়। ১৪-২৪ বছর বয়স— বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ইউনিভার্সিটির জীবন, এই পর্যায়ে আছে যারা, তাদের জন্যও রইল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। 
ভালো মানুষের অধ্যায়: এই বয়সই চরিত্র, আদর্শ ও বোধ তৈরি করে। দয়ামায়া, কৃতজ্ঞতা, স্বার্থহীনতা এসব সুকোমলবৃত্তি নিজের মধ্যে তৈরি হচ্ছে কি না খেয়াল রাখতে হবে। জীবন বুঝতে সাহায্য করবেন বাবা-মা। তাই তাঁদের সঙ্গে যেন দূরত্ব না বাড়ে।
বন্ধু চেনা: কে বন্ধু, আর কার শুধুই বন্ধুত্বের মুখোশ— এটা ছোটবেলা থেকেই চিনে গেলে জীবনে অনেকটা এগিয়ে থাকা যায়। কর্মক্ষেত্রে কারা বন্ধুর বেশে ক্ষতি করতে সচেষ্ট, তাদের চেনা সহজ হয়। বাড়িতে যাতে সব কথা খুলে বলা যায়, সেই অবকাশ বাবা-মা দেবেন সন্তানকে।  সন্তানকেও বাবা-মায়ের উপর আস্থা রাখতে হবে। বন্ধুদের প্রভাব যেন পরিবারের চেয়ে বড় হয়ে না দাঁড়ায়।

কেরিয়ারে মন: উঁচু ক্লাস থেকেই কেরিয়ারের প্রতি যত্নবান হতে হবে। পড়াশোনা হোক, খেলা হোক বা অন্য কোনও গুণ— যা নিয়ে জীবনে এগনোর ইচ্ছা, তা স্থির করে ফেলার এটাই সময়। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে সে পথই যেন ‘প্রায়োরিটি’ হয়ে ওঠে। 

আবেগে রাশ: বর্থ্যতাকে গ্রহণ করার শিক্ষা এখন থেকেই রপ্ত করতে হবে। বাবা-মা নিজেরা যা পারেননি, সেই স্বপ্ন বা প্রত্যাশা শিশুর উপর চাপিয়ে দেবেন না। ওকে ওর মতো করে বড় হতে দিন। সন্তানকেও মনে রাখতে হবে, সারাজীবন বাবা-মা আগলে রাখার জন্য থাকবেন না। তাই বাইরের পৃথিবীর চেহারা চিনতে হবে। অতিরিক্ত আবেগ, অতিসক্রিয়তা, ঝুঁকি নেওয়ার মারাত্মক ঝোঁক,  নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ঘন ঘন প্রবণতা— এসব দেখলে প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নিন। 

মাদক নয়: একটা বয়সে জেদ, অবাধ্যতা, কুসঙ্গ করার প্রবণতা বাড়ে। তার উপর সেসময় ক্ষতির দিকে ঠেলে দেওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। মাদকের জালে জাড়িয়ে পড়া সহজ হলেও তা ভেদ করে বেরনো কঠিন। জীবনের যাবতীয় সম্ভাবনা শেষ করে দিতে পারে এমন ভুল ভুলেও নয়। তাই মাদক থেকে দূরে থাকতেই হবে। সন্তান মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে দেখলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নিন অভিভাবকরা। 
মনীষা মুখোপাধ্যায়
11d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন।  অর্থপ্রাপ্তির যোগ...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৮৩ টাকা৮৭.৫৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.০৫ টাকা১০৭.৭৪ টাকা
ইউরো৮৭.৩০ টাকা৯০.৬৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা