আমরা মেয়েরা

বিয়ের আইনি পদ্ধতি

বিয়ের জন্য যে নির্দিষ্ট আইন আছে, সেটা আজও গ্রামগঞ্জে অনেকে খোঁজ রাখেন না। বিস্তারিত লিখছেন আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়।

কথা অস্বীকার করব না যে, সাধারণ মানুষ মাত্রই কোর্টে আসতে ভয় পান বা এড়িয়ে চলেন।
আবার এটাও ঠিক যে, ভারতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোয় সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ বাস করেন। সবাই ‘আইন’ সম্পর্কে সমান সচেতন তো ননই, এমনকী, সবাই তথাকথিত ‘শিক্ষা’য় শিক্ষিতও নন।
আমাদের কাছে, ভূরি ভূরি নিদর্শন আসে, যেখানে আমরা দেখি, আমাদের রাজ্যেই, বিয়ের জন্য যে নির্দিষ্ট আইন আছে, সেটাও সাধারণ মানুষ জানেন না। আমি এমন মামলা পেয়েছি, যেখানে একজন পুরুষ গ্রামে তাঁর নিজের স্ত্রীকে রেখে, কাজের সন্ধানে শহরে এসে, আরও একজন মহিলাকে বিয়ে করেছেন এবং তাঁর সঙ্গেই ঘর করছেন। গ্রামে স্ত্রী যখন জানতে পারলেন, তখন আমাদের কাছে ছুটে এলেন, আমরা যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনার কাছে বিয়ে সংক্রান্ত কোনও নথি (ডকুমেন্টস) আছে? বিয়ের কোনও প্রমাণ আছে? সেই স্ত্রী বলেছিলেন, তাঁর স্বামী তাঁকে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, মাথায় অর্থাৎ সিঁথিতে সিঁদুর পরানো হচ্ছে, এইরকম কোনও ‘ফটো’ আছে কিনা, যা থেকে আদালতে প্রমাণ করা যাবে যে তাঁকে বিয়ে করা হয়েছে। সেই মহিলা সেই প্রমাণটুকুও দিতে পারেননি। অর্থাৎ, তিনিই যে ওই পুরুষটির প্রকৃত স্ত্রী ও ‘বৈধ’ সে প্রমাণটা দিতে পারেননি। অথচ, ওই পুরুষটি পরে শহরে এসে যাঁকে বিয়ে করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে কিন্তু রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে এবং সেই বিয়ের ‘প্রমাণপত্র’ও রয়েছে। ফলে আদালতে শহরের ওই মহিলাটিই ‘বৈধ’ স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
এই গল্পটা বললাম কারণ, বিয়ের ‘প্রমাণপত্র’ বা বিয়ে সংক্রান্ত ‘নথি’ বা ‘অন্য প্রমাণ’ স্বরূপ, বিয়ের সময়ে ছবি রাখা যেতে পারে। হিন্দুদের জন্য স্বীকৃত রীতি যেমন সিঁদুর দান, আগুনের চারপাশে ঘোরা বা সাতপাক ঘোরা, মালাবদল ইত্যাদির ছবি থাকলে ভালো। এই সিঁদুর দান, আগুনের চারপাশে ঘোরা বা সপ্তপদী ইত্যাদি হিন্দুরীতি অনুযায়ী সম্পন্ন করা হলেও, হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫-র মাধ্যমে আইন স্বীকৃত।
যেহেতু, হিন্দু বিবাহ আইন-এ রেজিস্ট্রেশন এখনও আবশ্যিক নয়, সেইহেতু অনেকেই আজও ‘হিন্দু বিবাহ আইন’-এ বিয়ে হলেও সেই বিয়েটাকে রেজিস্টার্ড করেন না। মনে রাখবেন, ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করানো সবসময়ই ভালো।
হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী রীতি মেনে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর, ওই বিয়েটাকে রেজিস্টার্ড, করা যায়। সেক্ষেত্রে, বিয়ের ওই তারিখেই বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্ভব। রেজিস্ট্রিশন সার্টিফিকেটও পাওয়া যাবে। এটা স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনকেই সুরক্ষা দেবে।
আবার, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট বা বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ অনুযায়ী, একমাস আগে নোটিস দিয়েও বিয়ে করা যায়। এই আইন  অনুযায়ী, বিয়েতে সিঁদুর দান, মালাবদল বা সাত পাক ঘোরা বাধ্যতামূলক নয়।
অনেকেই বলেন, বিয়ের নিয়মকানুন অত্যন্ত কঠিন। আমি কিন্তু, তা মনে করি না। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে তো অত্যন্ত সহজ। আপনি আপনার এলাকা বা জুরিসডিকশন অনুযায়ী ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে যান, বিয়ের পদ্ধতিটা ভালো করে বুঝে নিন। এই আইন অনুযায়ী, এক মাস আগে, একটা নোটিস দেওয়ার বিধান আছে। সেই নোটিস দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। নোটিস দেওয়ার এক মাস পর বিয়ের দিন নির্দিষ্ট হবে।
এই আইন অনুযায়ী বিয়ের সুবিধা হল, আপনি ম্যারেজ সার্টিফিকেট অবশ্যই পাবেন। যেটি আপনার বিয়ের প্রমাণপত্র। আজকাল বিয়ের ক্ষেত্রে প্রতারণা রুখতে অনলাইন ফর্ম ফিলাপের মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্টার করা যায় যা যথেষ্ট সরল ও সুরক্ষিত।
বহু আগে থেকেই মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের ক্ষেত্রে, বিয়ে সংক্রান্ত নথি মেনটেন করা হতো। এই সম্প্রদায়ের মানুষদের বিয়েতে কাবিলনামা বলে একটা নথি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
আজকাল, হিন্দু বিবাহ আইন ও বিশেষ বিবাহ আইন উভয়ক্ষেত্রেই, রেজিস্ট্রি করার জন্য ছবি দিতে হয়। মনে রাখতে হবে, বিয়ে রেজিস্ট্রি করবার ক্ষেত্রে, কোনওরকম গোপনীয়তা বরদাস্ত করা হয় না। ফলে পরিচয় লুকিয়ে একজন মানুষ কখনওই, আর একজন মানুষকে বিয়ে করতে পারবেন না।
মুসলমান সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিয়ে হয়, মুসলিম শরিয়তী আইন অনুযায়ী। সেক্ষেত্রে ‘কাবিলনামা’ স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী ১)যে কোনও ধর্ম সাপেক্ষে বিয়ে করা যায়, ২) হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান, পারসি, ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষেরা এই আইনে বিয়ে পরস্পর বিয়ে করতে পারেন, ৩) ভিন্ন ধর্মের মানুষরা পরস্পর এই আইনে বিয়ে করতে পারেন, ৪) মহিলা ও পুরুষ পরস্পরও বিয়ে করতে পারেন।
হিন্দু বিবাহ আইন, বা বিশেষ বিবাহ আইন— এই দুই আইনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল, একটি বিয়ে বজায় থাকাকালীন, আর একটি বিয়ে করা যাবে না। তবে ডিভোর্সি, বিধবা, বিপত্নীক— এই ধরনের মানুষরা বিশেষ বিবাহ আইনে পরস্পর বিয়ে করতে পারবেন।
যে, দু’টি আইনের কথা বললাম, ওই দুই আইনেই, পাত্রের বয়স কম করে একুশ ও পাত্রীর বয়স কম করে আঠারো হতেই হবে। বিয়ের সময়, পাত্র-পাত্রীকে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ ও সক্ষম থাকতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এই দুই আইনেই, পাত্র-পাত্রী, নিষিদ্ধ সম্পর্কের আওতাভুক্ত হতে পারবেন না। ‘নিষিদ্ধ সম্পর্ক’ বলতে, নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে বৈধ নয়।
হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ অনুযায়ী বিয়ে করতে গেলে, পাত্র-পাত্রী উভয়কেই ‘হিন্দু’ হতে হবে। এছাড়াও, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ধর্মের মানুষরাও এই অনুযায়ী বিয়ের আওতায় আসবেন। এছাড়াও শিখ সম্প্রদায়ের জন্যও নিজস্ব বিবাহ আইন আছে। যাকে আনন্দ বিবাহ (শিখ বিবাহ) আইন বলে। শিখ ধর্মাবলম্বী পাত্র-পাত্রী, এই আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য, ভারতীয় খ্রিস্টান বিবাহ আইন, ১৮৭২ নামে আরও একটি বিবাহ আইন রয়েছে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। তাঁদের বিভিন্ন পারিবারিক বিধি-নিয়ম, রীতি-নীতি ও প্রথা আছে। নিজস্ব পারিবারিক বিধি নিয়ম মেনে, বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
যদি পাত্র-পাত্রী বিয়ে করার পর নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল না হয়, তাহলে বিয়ে বৈধ কী অবৈধ এই নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না হয়তো। কিন্তু, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী গণ্ডগোল শুরু হলে, বা বিয়ে ভাঙতে বসলেই, প্রশ্ন ওঠে, ‘বিয়েটা বৈধ ছিল তো?’
বিয়ের অনুষ্ঠানে, নিমন্ত্রিতদের ডেকে এনে খাওয়ানোর প্রথা চালু হয়েছে। সেটা বিয়েতে অতিথি অভ্যাগতদের স্রেফ সাক্ষী হিসেবে রাখবার জন্য। অর্থাৎ, যদি কেউ বিয়েটাকে অস্বীকার করতে চান তখন ওই অতিথি, অভ্যাগতরা, সাক্ষী হিসেবে এসে বলবেন যে, আমরা ওই বিয়েটা সম্পন্ন হতে দেখেছি। এরপর অবশ্য বিয়ের রেজিস্ট্রেশনে সাক্ষী আবশ্যিক হয়ে যায়।
বিয়ের আইনে যতটুকু নিয়ম কানুনের বেড়াজাল আনা হয়েছে, তা কেবলমাত্র ‘বিয়ে’ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে সম্মান জানানোর জন্য। বিয়ে যে কোনও জায়গাতেই হতে পারে, মন্দিরে, মসজিদে, চার্চে, ক্লাবে বা গাছের নীচে। কিন্তু বিয়ের বিচ্ছেদ করতে হলে আদালতেই যেতে হবে।
যাঁদের হিন্দু রীতিনীতি মেনে বিয়ে হয়েছে, তাঁরা পরবর্তীকালে বিয়ের কার্ড এবং নানাবিধ প্রমাণ দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিলে নানা রকম সুবিধা পাবেন। পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলেও এই সার্টিফিকেট প্রয়োজন। পার্সোনাল আইনে বিয়ে হলেও কোনও একটা ম্যারেজ অ্যাক্টের মাধ্যমে সেই বিয়ে নথিভুক্ত করানো উচিত। 
 
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা