আমরা মেয়েরা

পুতুল নেবে গো... পুতুল

কালীপুজোর আগে দেওয়ালি পুতুলের চাহিদা তৈরি হয় গ্রাম বাংলায়। মেদিনীপুরের সুতপা পাল দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তৈরি করছেন এই পুতুল। তাঁর কথা লিখছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।
 
• নয় ভাইবোনের সংসারে সাধারণভাবেই বড় হওয়া মেয়েটির। গৃহস্থ পরিবারে অভাব না থাকলেও দারুণ সচ্ছল, তা বোধহয় বলা যায় না। বেশিরভাগের মতোই তাঁর অল্প বয়সেই বিয়ে। শ্বশুরবাড়ির পরিবার বংশপরম্পরায় কুম্ভকার। কুমোরের চাকা ঘুরিয়ে তৈরি হয় নানাবিধ জিনিস। তার মধ্যেই খানিক অন্য ধারার দেখতে ছিল এক বিশেষ ধরনের পুতুল। যা দেওয়ালি পুতুল নামেই বিখ্যাত। বিয়ের পর সেই মেয়ে শাশুড়ির পাশে বসে পুতুল তৈরির কাজ শিখত। প্রথমে নিছকই কৌতূহল। তারপর শখ। তারপরও সাংসারিক প্রয়োজন সেই শেখার পথের চালিকাশক্তি। যে মেয়ে ছোট থেকে কোনওদিন এসব করেনি, সে কি পারবে? কখনও আড়ালে কখনও বা প্রকাশ্যেই হাসতেন স্বজনরা। কিন্তু মেয়ের জেদ ছিল। মনে মনে ভাবতেন তিনি শেখার কি কোনও বয়স আছে? সত্যিই তো ইচ্ছে থাকলে শেখা যায় যে কোনও কাজ। মেদিনীপুরের সুতপা পালেরও তাই দিওয়ালি পুতুল তৈরির কাজ শিখতে সময় লাগেনি। সেদিনের নতুন বিয়ে হওয়া বউ থেকে ধীরে ধীরে সংসারে দায়িত্ব বেড়েছে তাঁর। দুই ছেলের মা হয়েছেন কালের নিয়মে। কিন্তু হাত চলেছে অহর্নিশি। সংসারের প্রয়োজনে যে কাজের শুরু, তার হাত ধরেই এখন পরিচিতি পেয়েছেন সুতপা।  
দেওয়ালি পুতুল তৈরি করা সুতপার পেশা। নেশাও বটে। ‘বিয়ের আগে এই কাজ জানতাম না। শাশুড়ি মায়ের কাছে এই কাজ শিখেছি। ননদরাও এই পুতুল তৈরি করতেন। ওদের দেখেও শিখেছি। আমার শ্বশুরবাড়ির বংশে পরম্পরা হিসেবে এই কাজ চলছে’, বলছিলেন শিল্পী। দীপাবলির দিন স্থানীয়দের ঘরে ঘরে দেওয়ালি পুতুলকে দীপলক্ষ্মী হিসেবে পুজো করা হয়। মেদিনীপুরে প্রায় সব বাড়িতেই দীপাবলির দিন এই পুতুলের হাতে ধরা প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানো হয়। এই ধরনের পুতুলের বিশেষত্বই হল প্রদীপ বা মোমবাতি। যা পুতুলের হাতে থাকবেই। পুতুলের হাতের আঙুল থাকে না। পুতুলের নীচের অংশ কুমোরের চাকাতে বানানো হয়। আর উপরের দিকটা ছাঁচে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ পুতুলের মুখটা ছাঁচে তোলা হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে শুকনো করতে সময় লাগে এক মাস। তারপর ভাটিতে পোড়ানো হয়। এরপর পুতুলের গায়ে রং করা হয়। আলাদা করে তৈরি হয় পুতুলের হাত। এবার সবকটা আলাদা অংশ একসঙ্গে জোড়া হয়। আলোর উৎসবে লক্ষ্মীদেবী রূপে এই পুতুলকে পুজো করার পর অনেকে ঘরে সাজিয়ে রাখতেও পছন্দ করেন তাকে। বাড়িতে অনেকে দেব দেবীর মূর্তি, ছবি সাজিয়ে রাখেন, দেওয়ালি পুতুলও 
তারই অঙ্গ। 
সুতপার বড় ছেলে কেশব পাল। গ্রাফিক ডিজাইনিং, ভিএফএক্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। পুতুল তৈরির কাজে তাঁরও আগ্রহ রয়েছে। জ্ঞান হওয়া থেকে মাকে এই কাজ করতে দেখেছেন। একসঙ্গে বসে কাজও করেছেন। মায়ের দীর্ঘ লড়াইকে তিনি সম্মান করেন। কেশব বললেন, ‘মা অনেক কষ্ট করেছেন। এখনও করছেন। দীপাবলির তিন চারদিন আগে আমাদের এলাকায় মেলা হয়। কয়েক বছর আগেও মেলায় প্রায় ২৫-৩০টা দোকানে এই পুতুল সাজানো থাকত। বিক্রিও হতো। এখন সেই সংখ্যাটা কমে ৮-১০টা দোকানে এসে দাঁড়িয়েছে। পুরো শহরের লোক সেদিন পুতুল কিনতে আসেন। আবার পাইকারি হিসেবেও কিনে নিয়ে যান। পুতুল তৈরি থেকে বিক্রি— মা সবটাই করেন। কিন্তু বছরে চারদিন ব্যবসা করে তো সারা বছর সংসার চালানো যায় না। সেজন্য ব্যবসা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা ভাবি আমরা। বিভিন্ন প্রদর্শনী বা মেলাতে যদি আমাদের কাজ নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে একটু সাহায্য হয় আমাদের। এসব দিক থেকে সব রকম সরকারি সাহায্য 
পাই আমরা।’
ছোট, বড় নানা আকারের পুতুল তৈরি করেন সুতপা। দিওয়ালির সময় আট, ন’দিন ধরে ঘর গুছিয়ে নেন। তারপর সারা বছর ধরে চলে পুতুল তৈরির কাজ। অর্ডার আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। ছেলেরা এখন কিছুটা বড় হয়েছে। ফলে এই কাজে আরও বেশি সময় দিতে পারেন তিনি। কিন্তু যে পুতুল পুজো হয়, তাকে কি সাজিয়ে রাখেন মানুষ? এর উত্তর দিলেন কেশব। তাঁর কথায়, ‘যাঁরা পুজো করেন তাঁরা তেল দিয়ে পুজো করেন। তারপর সেটা মুছে বাড়িতে রেখে দেন। আমাদের বাড়িতে যে ঠাকুরের মূর্তি থাকে তাতে সিঁদুরের দাগ, ফুলের দাগ কি পড়ে না? তা বলে কি তা ফেলে দেওয়া হয়? তা তো নয়। সেটা তার চিহ্ন হিসেবেই থেকে যায়। ওই তেলের দাগ এই মূর্তিকে কলঙ্কিত করে না।’ 
বছরের এই সময়টা তুমুল ব্যস্ত থাকেন সুতপা। সব পুতুলে শেষবার তুলির আঁচড় ছোঁয়ানো শেষ। এক ঘর ছেড়ে আর এক ঘরে যাওয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি। বছরভর তৈরি করা সব পুতুলই প্রায় বিক্রি হয়ে যায় কালীপুজোর আগে। সুতপার ঘরে লক্ষ্মী আসে। হাসি ফোটে বছরভর চেয়ে থাকা মুখে। আবার নতুন করে কুমোরের চাকা ঘোরে। ছাঁচে তৈরি হয় নতুন মুখ। রঙে রেখায় সেজে ওঠে আরও একদল পুতুল। সেই সাজ প্রাণ পায় সুতপার হাতে। বংশের ধারা একার হাতে ধরে রাখার চেষ্টা করেন এই মহিলা। পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের কাঁধেও তিনি দায়িত্ব দিতে শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে তাঁরাই নেবে এই পুতুলের ভার।  
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা