আমরা মেয়েরা

জগতে আনন্দযজ্ঞে

আকাশে বাতাসে এখন উৎসবের আমেজ। পুজোর গন্ধ। আনন্দঘন মুহূর্তে দেবী দুর্গার আগমনি সুর বঙ্গহৃদয়ে বাজছে অবিরাম। লিখেছেন কমলিনী চক্রবর্তী।    

কাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে...’— আজ মহাসপ্তমী। আকাশে বাতাসে শুধুই পুজোর সুর। সেই সুরই প্রবাহিত হচ্ছে বাঙালির মনে। সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে পুজো প্যান্ডেল আলো করে বসেছেন দেবী দুর্গা, সপরিবার। বাঙালির সেরা উৎসবে শামিল আমরা। বঙ্গজীবনে  দুর্গাপুজো ঘিরে উন্মাদনা সীমাহীন। রথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে খাতায় কলমে দুর্গাপুজোর শুভ সূচনা হয় ঠিকই, কিন্তু আমাদের মনে মা দুর্গা পাকা আসন পেতে বসেন বৈশাখ থেকেই। বাংলা ক্যালেন্ডারে পুজোর তারিখগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিয়েই মহিলারা পুজোর সাজগোজ, কেনাকাটা আর খাওয়াদাওয়ার বহর মাপতে শুরু করেন। চাকরিরতরা ছুটির হিসেব কষে বেড়ানোর পরিকল্পনা ছকতে শুরু করে দেন। এমনকী ঠাকুর দেখার রুটম্যাপও মনে মনে এঁকে ফেলেন অনেকেই। 
পুজো ঘিরে আমাদের পরিকল্পনার শেষ নেই। আর বাঙালির এই উন্মাদনার সঙ্গে তাল মিলিয়েই যেন প্রকৃতিও নিজেকে সাজিয়ে তোলে এই সময়। শরতের আকাশে নীলের মাত্রাটা একটু বুঝি বেড়ে যায়। আর সেই ঘন নীলের ব্যাকড্রপে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ যখন মিলেমিশে একাকার হয় তখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে পুজোর আমেজ অনুভব করি আমরা। প্রকৃতির সাজের কথা যখন উঠলই, তখন শরৎকালের কাশের দোলাই বা বাদ দিই কেমন করে? শহুরে প্রকৃতিতে কাশের প্রাবল্য হয়তো বা খানিকাংশে ফিকে হয়েছে, কিন্তু গ্রামবাংলায় সবুজ ঘাসের মাঝে সাদা কাশ ফুলের নাচন দেখলে হৃদয় মাঝে খুশির ঝিলিক বয়ে যায়। পুজোর আনন্দযজ্ঞে যোগদান করার আশায় যেন প্রকৃতিও একটু একটু করে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত। প্রখর গ্রীষ্ম আর প্রবল বর্ষার পর আকাশে বাতাসে নব রূপের সূচনা তারই বার্তা বয়ে আনে। কড়া রোদের খোলস গা থেকে ঝেড়ে ফেলে সূর্যদেব তখন মিঠে আলোয় ভরিয়ে দেন চারপাশ। এদিকে বর্ষার জল পেয়ে গাছের পাতায় সবুজের প্রকোপ আরও বেশ কিছুটা গাঢ় হয়। সেই ঘন সবুজ খেতের মাঝে কাশের সাদা আরও প্রস্ফূটিত হয়ে ধরা পড়ে আমাদের চোখে। বঙ্গদেশের সেরা উৎসব দুর্গাপুজোর আয়োজনে প্রকৃতির যোগদান একেবারে ষোলোকলায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
পুজোর গন্ধে ভরপুর প্রকৃতির বর্ণনা পাই বুদ্ধদেব গুহর ‘হলুদ বসন্ত’ উপন্যাসে। তিনি লিখেছেন, ‘মহালয়ার ভোরে, আধো-ঘুমে-আধো-জাগরণে বালিশটা আঁকড়ে ধরে শুয়ে শুয়ে যখন মহিষাসুর বধের বর্ণনা শুনব রেডিওতে..., তখন যে কী ভাল লাগবে সে কী বলব। শুধু আমার কেন? খাঁটি বাঙালি মাত্রেই লাগবে। ... তারপর মহালয়ার ভোর হবে। শরতের নীল আকাশে রোদ্দুর ঝিলিক দেবে। ...চোখ চেয়ে শরতের রোদ দেখব, নাক ভরে শিউলি ফুলের গন্ধ নেব; আর ভাললাগায় মরে যাব।’ 
সপ্তমীর সকালটা চিরকালই ভারি মধুর। ভোররাত থেকেই ঢাকের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। নবপত্রিকা স্নানের সময় আগত। ঢাকের বাদ্যি আর মন্ত্রোচ্চারণের ধ্বনিতে শোভিত হয়ে নবপত্রিকা চলেছেন স্নানযাত্রায়। সূর্যদেব আকাশে গাঢ় হয়ে প্রকট হওয়ার আগেই নবপত্রিকার স্নানপর্বের সমাপন ঘটে। পাড়ার পুকুর থেকে গঙ্গার ঘাটে তাই সাজ সাজ রব। ঢাক, কাঁসর, উলুধ্বনিতে মুখরিত চারদিক। এই নবপত্রিকাই যে দেবী দুর্গার রূপ তা ছোটবেলায় মোটেও জানতাম না। বরং তখন তাকে চিনতাম ‘কলাবউ’ নামে। পরিবারপ্রিয় বাঙালি বাড়িতে ওটাই তার পরিচয়। লালপাড় সাদা শাড়িতে সজ্জিত ঘোমটা টানা কলাবউকে গণেশ ঠাকুরের বউ হিসেবেই চেনে আপামর বাঙালি। 
দুর্গাপুজো ঘিরে বাঙালিরা যে একটা ঘরোয়া ছবি তৈরি করে তার সঙ্গে কলাবউ অসাধারণ মিশ খেয়ে যায়। সেই কারণেই হয়তো আমরা নবপত্রিকাকে কলাবউয়ে রূপান্তরিত করতে দ্বিধা করিনি।  দুর্গা আমাদের বাড়ির মেয়ে। পুজোর চারদিন সে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসে, ছেলেমেয়ে নিয়ে। এর মধ্যে একটা আদুরে ব্যাপার আছে। দুর্গাপুজো বাঙালির মিলন উৎসব। পারিবারিক একটা মিলনক্ষেত্রও তৈরি হয় এই পুজোকে ঘিরে। সারা বছর যে যেখানেই থাকুক না কেন পুজোর সময় সকলে একত্রিত। এই যে মিলনোৎসবের আবহাওয়া, সেখানে মায়ের এই চার সন্তান এবং পুত্রবধূ নিয়ে মর্তে বিরাজ করাটা যেন ভীষণ মানানসই। এইসব কারণেই হয়তো নবপত্রিকা আমাদের কল্পনায় কলাবউ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে একটা আকর্ষণ, একান্নবর্তী পরিবারের প্রতি আমাদের ভালোবাসা সবকিছুই জড়িয়ে রয়েছে। দুর্গাপুজো মহাপুজো। তাই তার আয়োজনও বিপুলায়তন। সেই সম্বন্ধে হুতোম প্যাঁচার নকশায় ভারি সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। ‘ক্রমে দুর্গোৎসবের দিন সংক্ষেপ হয়ে পড়ল; কৃষ্ণনগরের কারিকরেরা কুমারটুলী ও সিদ্ধেশ্বরীতলা জুড়ে বসে গ্যাল।... এবার অমুক বাবুর নতুন বাড়ীতে পুজোর ভারী ধূম!... ষষ্ঠীর শর্ব্বরী অবসন্না হলো, ... সেই সঙ্গে সহরের চারি দিগে বাজ্‌না বাদ্দি বেজে উঠলো, নবপত্রিকার স্নানের জন্য কর্ম্মকর্ত্তারা শশব্যস্ত হলেন— ভাবুকের ভাবনায় বোধ হতে লাগল, য্যান সপ্তমী কোর মাকান নতুন কাপড় পরিধান করে হাঁসতে হাঁসতে উপস্থিত হলেন।’ 
এত কিছু সত্ত্বেও দেবী দুর্গার দুর্গতিনাশিনী রূপ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। বিভিন্ন সময় নানা রূপে তিনি অসুর বিনাশ করেছেন। কখনও কালী, কখনও চামুণ্ডা, কখনও কাত্যায়নী রূপ ধারণ করেছেন। বিভিন্ন দেবতার শ্রেষ্ঠ গুণ নিয়ে তৈরি হয়েছেন দেবী দুর্গা। তিনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের শ্রেষ্ঠ শক্তির প্রদর্শন করেন। আবার একই সঙ্গে বাঙালি জীবনের প্রাত্যহিকীতে মিশে রয়েছেন কন্যারূপী দুর্গা। বাঙালির কাছে দুর্গা একাধারে জগজ্জননী যেমন, তেমনই তিনিই আবার বাড়ির সেই মেয়েটি যার প্রতীক্ষায় বঙ্গজননী সারা বছর দিন গোনেন। বাঙালি জীবনের সুন্দর সামাজিক চিত্রের পরিপূরক দেবী দুর্গার এই কন্যা রূপখানা। জমিদারের হাত ধরে যেহেতু বাংলায় দুর্গা পুজোর সূচনা ঘটেছিল, তাই দেবীর সাজের মধ্যে আড়ম্বরও একটু বেশি মাত্রায় লক্ষ করা যায়। বাংলার বাইরে গেলে আবার দেবী দুর্গার এই কন্যা রূপের খোঁজ পাওয়া ভার। সেখানে মা ব্যাঘ্রবাহিনী। তখন তিনি সম্পূর্ণ রূপে তেজশ্বিনী, অসুর বিনাশিনী, শক্তিরূপিণী দেবী। যাঁর আগমনে জগতে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। অন্ধকার কাটিয়ে জগতে তিনিই আলোর প্রদর্শন করেন। অশুভর বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনিই শুভশক্তির আগমন ঘটান। তাই তো তিনি আমাদের রক্ষাকর্ত্রী, অভয়দাত্রী, দেবী দুর্গা। 
9Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা