বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
সভ্যতার সামনে সম্পূর্ণ নতুন এক রাস্তা খুলে দিয়েছে এই ‘ডেটা’। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে আমাদের বিশ্বের মোট ডেটা। মনে করুন, ৫টি ডেটা ১০০ জন ব্যক্তি বা সংস্থা ব্যবহার করল। এভাবে ব্যবহার করার জন্য ওই ডেটা কিন্তু কমল না। বরং মুহূর্তেই হয়ে গেল ৫০০টি। বোঝা যাচ্ছে, বিপুল বেগে বেড়ে চলা এই ডেটাকে সামলাতে, তা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নিতে, নতুন চাকরি এবং বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বাড়ছে গুণোত্তর প্রগতিতে। অ্যালফাবেট (অর্থাৎ গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি বা মালিক সংস্থা), আমাজন, অ্যাপেল, ফেসবুক এবং মাইক্রোসফট- এরা হল ডেটার জগতে পাঁচ মহারথী। এছাড়াও প্রতিদিন নতুন সংস্থা জন্ম নিচ্ছে, বহু পুরনো সংস্থা ঝাঁপিয়ে পড়ছে ডেটা ব্যবসায়ে। এখনই ডেটা ক্ষেত্রে কাজ করছেন প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ। ২০২০ সালের মধ্যে এই ক্ষেত্রে ২৭ লক্ষ চাকরির জন্ম হবে বলে অনুমান, অর্থাৎ এখনকার চেয়ে আরও ৪ লক্ষ বেশি। ভারতে এই মুহূর্তে ডেটা সংস্থাগুলির ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ৩০৩ কোটি ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি হবে এই ডেটা। একশো বছর আগে এই চালিকাশক্তির নাম ছিল অয়েল বা তেল। তেলের নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিস্তৃত নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা- কিছুই দেখতে বাকি ছিল না গত শতকে। আমাদের দেশে এখনও তেল নিয়ন্ত্রণ করছে মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিই। আগামী দিনে ডেটা এবং তার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করাও একটি বড় কাজ হবে, এবং সেখানেও বিপুল সংখ্যায় নতুন চাকরির সুযোগ ঘটবে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডেটা নিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে- কিছুকাল আগে এমন একটি খবরে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ডেটা নিয়ন্ত্রণ করা হোক, এমন দাবিও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তবে ডেটা নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে কর্মযজ্ঞ চলেছে, তার তুলনায় এই ঘটনাটিকে হিমশৈলের চূড়া মাত্র বলা চলে। বিনোদন থেকে বিপণন, প্রোডাকশন থেকে প্যাকেজিং, এমনকী শেয়ার বাজার থেকে শিক্ষা এবং চিকিৎসা— সবেতেই বাড়ছে ডেটার ব্যবহার। হ্যাঁ, হু হু করেই। সুতরাং উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের খোঁজে ডেটা সংস্থাগুলি মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাঁদের জন্য চোখ কপালে তোলা দাম দিতেও পিছপা নয় তারা। চাই এমন ব্যক্তিদের, যাঁরা ডেটার জগতটাকে বোঝেন, ডেটার মহাসাগর মন্থন করে তুলে আনতে পারেন অমৃত-সিদ্ধান্ত, যা ব্যবহার করে আগামী দিনে ব্যবসা আরও লাভের মুখ দেখবে।
ডেটা অ্যানালিটিক্স-এর বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন দক্ষতা লাগে। তবে এই ক্ষেত্রে সব কাজেই মূলত কয়েকটি গুণ থাকা জরুরি। তা হল: দ্রুত সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার দক্ষতা, সৃষ্টিশীলতা, এবং টিমওয়ার্ক বা দলগতভাবে কাজ করা। ডেটা ক্ষেত্রে মূল কাজগুলি হল:
ডেটা সায়েন্টিস্ট: আমেরিকার কনসালট্যন্সি সংস্থা ‘গ্লাসডোর’-এর সেরা ৫০টি চাকরির তালিকায় বেশ কিছুদিন ধরেই শীর্ষস্থান অধিকার করে রয়েছে ডেটা সায়েন্টিস্ট। এঁরা মূলত ডেটা অ্যানালিটিক্স প্রোগ্রাম এবং একটি টিমের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করার কাজ করেন।
বিজনেস ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিস্ট: কোনও কোম্পানি কোনও বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়াই এই পেশাদারদের কাজ। ডেটা বিশ্লেষণ করে যে ঝোঁক বা ট্রেন্ড পাওয়া যায়, তার উপরেই বেশি করে নির্ভর করে এই কাজ করা হয়।
ডেটা ইঞ্জিনিয়ার: উপরের দুই ধরণের পেশাদাররা যে বিপুল আয়তনের ডেটা সেট ব্যবহার করেন, তার ডিজাইন করা এবং সেই সব সেট তৈরি করাই এই ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ।
ডেটা সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর: যেসব সংস্থা বিপুল ডেটা নিয়ে কাজ করে, তাদের ডেটা যাতে সুরক্ষিত থাকে সেটা নিশ্চিত করাই এই পেশাদারদের কাজ।
এছাড়াও ডেটা অ্যানালিটিক্স ম্যানেজার এবং অন্যান্য কাজ রয়েছে এই ক্ষেত্রে।
ডেটা ক্ষেত্রকে জীবিকা হিসেবে বেছে নিতে হলে, শিল্প সংস্থাগুলি কী চাইছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। এমনই একটি পাঠ্যক্রম বা কোর্সের ব্যবস্থা করেছে টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ-এর সংস্থা বিএসই ইন্সটিটিউটের সঙ্গে একযোগে ‘বিএসসি ডেটা সায়েন্স’ নামে এই কোর্সটি চালু করেছে তারা।