শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
এবার আসা যাক সেরা ছবির তকমা পাওয়া ‘গ্রিন বুক’-এর কথায়। ছবিটি পাল্লা দিয়েছে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’, ‘বোহেমিয়ান র্যাপসডি’, ‘আ স্টার ইজ বর্ন’ প্রভৃতি ছবির সঙ্গে। ছবিতে আমেরিকায় কালোদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এখনও কতটা স্বাভাবিক হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই ছবিরই অভিনেতা মাহেরশালা আলি সেরা সহ-অভিনেতার সম্মানটি জিতে নিয়েছেন। মাহেরশালা অবশ্য এর আগেও দু’বার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, পেয়েছেন গোল্ডেন গ্লোবসহ অনেক সম্মান। মাহেরশালা হলেন ডেনজেল ওয়াশিংটনের পর দ্বিতীয় ব্ল্যাক-আমেরিকান অভিনেতা যিনি উপুর্যপুরি অস্কার পুরস্কারে সম্মানিত হলেন।
একইভাবে ‘ভারত’-ও বিগত কয়েকবছর ধরে কোনও না কোনও ভাবে স্থান করে নিচ্ছে অস্কার মঞ্চে। এবারে কোনও ভারতীয় ছবি কিংবা ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা কলাকুশলী পুরস্কারে ভূষিত না হলেও এমন একটি ছবি সেরা ছোট তথ্যচিত্র হিসেবে পুরস্কার পেল যার গোটাটা জুড়েই রয়েছে ভারত। ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় যেসব বিষয়ের আলোচনা করাও নিষিদ্ধ তেমনই একটি বিষয় উঠে এসেছে ছবিটিতে—‘মেন্সট্রুয়েশন’। ছবিটির অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাই ভারতীয়, শ্যুটিংও হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। তবে সে অর্থে এটিকে ভারতীয় ছবি বোধহয় বলা যাবে না। কারণ, ছবিটি নেটফ্লিক্সের, পরিচালকদ্বয়ও অভারতীয় (ইরানিয়ান-আমেরিকান পরিচালক রায়কা জেটাবসি ও আমেরিকান পরিচালক মেলিসা বার্টন)। ছবির নাম ‘পিরিয়ড, এন্ড অব সেনটেন্স’। ছবিটিতে টাকা ঢেলেছেন ভারতীয় প্রযোজক গুণিত মোঙ্গা ও লস এঞ্জেলসের একদল ছাত্রছাত্রী। এক কথায় ছবিটি ক্রাউড ফান্ডেড।
তবে, এবারের অ্যাকাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানের সব থেকে বড় খবর হল, সেরা অভিনেতা সহ চারটি অ্যাকাডেমি পুরস্কার জিতে নেওয়া ছবি ‘বোহেমিয়ান র্যাপসডি’-র পরিচালক ব্রায়ান সিঙ্গারের নামও উচ্চারিত হল না অস্কার পুরস্কারের মঞ্চে। কারণ যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত এই পরিচালকের নাম ছবি শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে বাদ দেওয়া হয়েছিল এই প্রোজেক্ট থেকে। ব্রায়ান সিঙ্গারের বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। ‘এক্স-মেন’, ‘ইউজ্যুয়াল সাসপেক্ট’-এর মতো ছবির পরিচালক ব্রায়ানের বিরুদ্ধে তাঁর সহকর্মীরা এর আগে একাধিকবার এই অভিযোগ তুলেছেন। ১৯৯৭, ২০১৪, ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।
‘বোহেমিয়ান র্যাপসডি’ ছবিরই অভিনেতা রামি মালেক জিতে নিয়েছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। ‘গ্রিন বুক’ জিতেছে সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের সম্মানও। তবে এবারের অস্কার নাইটে মূলধারার হলিউডের প্রতিনিধি গায়িকা লেডি গাগার গাওয়া ‘শ্যালো’ পেয়েছে সেরা গানের তকমা। ছবির নাম ‘আ স্টার ইজ বর্ন’। গানের কথা ও সুর দুটোই লেডি গাগার।
‘বোহেমিয়ান র্যাপসডি’ সেরা অভিনেতার সম্মান ছাড়া আর যে তিনটি বিভাগে সেরার সম্মান লাভ করেছে সেগুলি হল বেস্ট সাউন্ড এডিটিং, বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং ও বেস্ট এডিটিং।
‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ জিতেছে তিনটি বিভাগে সেরার সম্মান। সেগুলি হল, বেস্ট অরিজিনাল স্কোর, বেস্ট প্রোডাকশন ডিজাইন ও বেস্ট কসটিউম ডিজাইন।
বিদেশি ভাষায় সেরা ছবির তকমা পেয়েছে স্প্যানিশ ও মেক্সিকান ভাষার ছবি ‘রোমা’। পরিচালক আলফোনসো কুয়ারন। কুয়ারন এর আগেও অ্যাকাডেমি পুরস্কার জিতেছেন। বলা যেতে পারে তিনিই প্রথম লাতিন আমেরিকান পরিচালক যিনি অ্যাকাডেমি পুরস্কার জেতেন। ২০১৩ সালে তাঁর ছবি ‘গ্র্যাভিটি’ দশটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে সাতটি বিভাগে সেরার সম্মান পেয়েছিল। এর আগে ২০০৪ সালে তাঁর ছবি ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড প্রিজনার অব আজকাবান’-ও একাধিক বিভাগে অ্যাকাডেমি মনোনয়ন পেয়েছিল তবে কোনও বিভাগেই সেবার সেরার সম্মান জোটেনি। এবারে ‘রোমা’-ও দশটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল। তবে জিতেছে তিনটি বিভাগে। এবারের সেরা পরিচালক হিসেবেও অ্যাকাডেমি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন আলফানসো কুয়ারন। তাছাড়া বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফির সম্মানও গিয়েছে ‘রোমা’-র ঝুলিতে।
এবারের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চ সবথেকে হতাশ করেছে পরিচালক ইওরগিওস লানথিমোসকে। তাঁর নির্দেশিত ছবি ‘দ্য ফেভারিট’ দশটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েও একটি বিভাগেও সেরার সম্মান আদায় করতে পারেনি।
এবারের অ্যাওয়ার্ড সেরিমনিতে আর যে ছবিটি বহুল চর্চিত সেটির নাম ‘ব্ল্যাক ক্ল্যানসম্যান’। রন স্টলওয়ার্থের আত্মজীবনীমূলক বই ‘ব্ল্যাক ক্ল্যানসম্যান’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ছবিটি। রন স্টলওয়ার্থ হলেন কলোরাডো স্প্রিংস পুলিস ডিপার্টমেন্টের প্রথম কালো অফিসার। তিনি ‘ক্লু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের গুপ্ত দলের স্থানীয় ঘাঁটি রেইড করেন এবং তাদের কাজকর্ম সবার চোখের সামনে নিয়ে আসেন। সেই অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর বই ও সেই একই নামের ছবিটিতে। রনের ভূমিকায় ছবিতে অভিনয় করেছেন কালো আমেরিকান অভিনেতা জন ডেভিড ওয়াশিংটন। ‘ব্ল্যাক ক্ল্যানসম্যান’ এবারে ছ’টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল। তবে ছবিটিকে একটিমাত্র সম্মান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ছবিটি বেস্ট অ্যাডপটেড স্ক্রিন প্লে বিভাগে সেরার সম্মান পেয়েছে।
‘ব্ল্যাকক্ল্যান্সম্যান’ ছবির শিরোপা এই কথাই প্রমাণ করছে যা লেখার শুরুতেই বলেছিলাম যে, এবারের অ্যাকাডেমি পুরস্কারে অন্যধারার ছবিগুলিই রাজ করেছে এবং ট্রাম্পের নীতিতে ছাই দিয়ে রাজ করছেন অভিবাসী ও ব্ল্যাক আমেরিকান অভিনেতা ও পরিচালকরা।
স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী ছবি: পিটিআই
সেরা ছবি গ্রিন বুক
সেরা পরিচালক আলফোনসো কুয়ারন
সেরা অভিনেতা রামি মালেক
সেরা অভিনেত্রী অলিভিয়া কোলম্যান
সেরা সহঅভিনেতা মাহেরশালা আলি
সেরা সহঅভিনেত্রী রেগিনা কিং
সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য গ্রিন বুক
সেরা গান আ স্টার ইজ বর্ন ছবির ‘শ্যালো’ (লেডি গাগা)
সেরা বিদেশি ছবি রোমা
সেরা সম্পাদনা জন ওটম্যান
সেরা কসটিউম ডিজাইন রুথ ই কার্টার
সেরা সিনেমাটোগ্রাফি
আলফোনসো কুয়ারন (রোমা)