শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
না। টেনশন কেন হবে? এটা তো আমার জীবনের অভিনীত প্রথম ছবি নয়।
না, কিন্তু উত্তমকুমার হিসেবে অভিনয় তো প্রথম...
সেটা একটা বড় ঘটনা। কিন্তু তাই বলে টেনশন বা চ্যালেঞ্জ নয়। বস্তুত অভিনয় জিনিসটাই আমার কাছে আনন্দের বিষয়। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই-ই না। তবে হ্যাঁ, বলতে পারেন উত্তমকুমার সাজা আর পাঁচটা চরিত্রে অভিনয় করার তুলনায় আলাদা। কারণ বাঙালির কাছে উত্তমকুমার একটা ঘটনা। সেই পর্যায় বা তাঁর আগে পরে বাঙালি কাউকে বসাতে পারেনি। ফলে আমি কেন, যত বড় অভিনেতাই উত্তমকুমার হিসেবে অভিনয় করুন না কেন, তাঁকেও বাঙালির কাছে দু’কথা শুনতে হবে। কিন্তু মহালয়া ছবিতে ঘটনাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উত্তমকুমার সেই ঘটনাটাকে ছাপিয়ে যাননি।
চরিত্রটার জন্য কীভাবে নিজেকে তৈরি করছেন?
এক্ষেত্রে আমার কয়েকটা রেফোরেন্স পয়েন্ট আছে। যেমন চুলের ছাঁট, পোশাক ইত্যাদি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ঘেঁটে দেখা গিয়েছে যে সেই সময় উত্তমকুমার একটু বড় চুল রাখতেন, সেইভাবেই আমিও মেকআপ নিয়েছি। মহানায়ক ধুতি পাঞ্জাবি পরতেন। আমিও তাই করেছি। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা বিশাল সুবিধে আছে। আমার শাশুড়ি (অঞ্জনা ভৌমিক) উত্তমকুমারের নায়িকা ছিলেন। ওঁর কাছে উত্তমকুমার প্রসঙ্গে, তাঁর ম্যানারিজম, হাঁটাচলা, কথা বলা ইত্যাদি সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। সেগুলোকে পার্সোনাল রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগিয়েছি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার বাইরে আমি যে খুব একটা উত্তমকুমার হয়ে উঠতে চেয়েছি তা নয়। বরং আমি নিজে উত্তমকুমারকে যেমনভাবে জেনেছি, যেমন বুঝেছি সেভাবেই চরিত্রটা করার চেষ্টা করেছি।
উত্তমকুমারের মহালয়া তো একটা ঘটনা মাত্র। সেক্ষেত্রে একটা ঘটনার উপর ভিত্তি করে গোটা একটা ফিচার ফিল্ম বানানো কতটা বাস্তব?
প্রশ্নটা সৌমিককে করা উচিত। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলি ১৯৭৬ সালে মহালয়া পাঠ উত্তমকুমারের জীবনের সবচেয়ে বড় ফ্লপ। উনি সেটা করতেও চাননি। কিন্তু পরে যেভাবেই হোক রাজি হন। সেই ঘটনার ভিত্তিতে ছবিটা করা হয়েছে। কিন্তু এই ছবিতে উত্তমকুমারের চরিত্রটাই যে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। বরং এটাকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ছবি বলা উচিত। উনিই ছবির নায়ক। পাশাপাশি পঙ্কজ মল্লিক আছেন যাঁর গুরুত্বও এই ছবিতে অসীম। এঁদের মাঝে উত্তমকুমার ও তাঁর পাঠ করা মহালয়া একটা ঘটনা। যাকে ঘিরে হয়তো ছবিটা শুরু হয়েছে। কিন্তু তার আগে পরে কী ঘটেছিল সেগুলোও এই ছবির পক্ষে ভীষণ প্রাসঙ্গিক এবং ছবির গল্প সেভাবেই এগিয়েছে।
আপনি তো দক্ষিণী ছবিতেও অভিনয় করছেন।
আমি এল ভি প্রসাদের চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্রটা ছোট হলেও ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। এল ভি প্রসাদ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এন টি আর-কে ছবিতে নিয়ে আসেন। সেক্ষেত্রে এন টি আর-এর জীবনে তিনি একটা ডিটারমিনিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন।
‘মণিকর্ণিকা’য় কাজ করে কেমন লাগল?
হঠাৎ এমন প্রশ্ন? আমি তো এর আগেও বলিউডে কাজে করেছি। ছবির পরিচলক কৃষ আর নায়িকা কঙ্গনার সঙ্গে আমার খুবই সুসম্পর্ক। ফলে মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করাটা আমার কাছে নতুন নয়। সেই ২০০২ সাল থেকে মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে টুকটাক বহুকাজ করে চলেছি। শ্যাম বেনেগালের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। ফলে হঠাৎআজ ‘মণিকর্ণিকা’ করেছি বলে এত প্রশ্ন উঠছে কেন?
সা রে গা মা পা-এ অ্যাঙ্কারিং করা আর যে কোনও ছবিতে চরিত্র হিসেবে অভিনয় করা কতটা এবং কীভাবে আলাদা?
সম্পূর্ণ আলাদা। সিনেমায় আমি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করি। আর সা রে গা মা পা-এ আমি আমিই। সেখানে চরিত্র নেই, চিত্রনাট্য নেই। নিজের মতো সেটে যাই, কথা বলি, মজা করি, প্রতিযোগীদের সঙ্গে ঠাট্টা করি। এই নিয়ে তো সোশ্যাল মিডিয়াতে সম্প্রতি একটা কাণ্ডই ঘটে গেল।
কীরকম?
আমাদের প্রতিযোগীদের মধ্যে একটি ছেলে ছিল লামা। আমি স্বাভাবিকভাবেই তাকে নিয়ে একটু রসিকতা করতাম। আর সেই রসিকতা লামাও উপভোগ করত। হঠাৎ একদিন দেখি ট্যুইটারে একজন লিখেছেন তিনি অনুষ্ঠানটি দেখেন কিন্তু লামার প্রতি আমার ব্যবহারে তিনি অসন্তুষ্ট। লামা নেপালি বলেই নাকি আমি তাকে দারোয়ানের মতো ট্রিট করি। মন্তব্যটা পড়ে আমি একই সঙ্গে আহত ও বিস্মিত হই। লামাকে বলতে ও তো কেঁদেই ফেলল। বলল, ‘দাদা আপনি এমন করেন বলে আমার কত আন্তরিক লাগে। যে যাই বলুক,আপনি ঠাট্টা বন্ধ করবেন না।’ তো এই হলাম আমি। প্রতিযোগীদের সঙ্গে আমিও টেনশন করি। ওদের সাফল্যে আমার গর্ব হয়, ব্যর্থতায় দুঃখ পাই। ঠাট্টা করি, গল্প করি, সবার সঙ্গে মিলেমিশে যাই।
টিভি থেকে সিনেমায় এলেন কেন?
আমার জীবনটা ওঠাপড়ায় ভর্তি। এই ভালো তো এই খারাপ। যাই হোক, টিভিতে তখন আমি সুপারস্টার। হঠাৎ একজন আমার মুখের উপর বলল, ‘ইয়ে লড়কা চলনেওয়ালা নেহি হ্যায়।’ ভীষণ খারাপ লেগেছিল কথাটা। প্রচণ্ড কাঁদলাম। কিন্তু একটা জেদ চেপে গেল। চলবে না মানে? চলে দেখিয়ে দিতে হবেই। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আর টিভি নয়। এবার অভিনয় করলে বড়পর্দায় করব। সেই থেকে শুরু। স্বপন সাহা আমায় রোল দিতে শুরু করলেন। একটু একটু করে আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি।
আপনি তো ভালো খেলতেন। খেলাকে কেরিয়ার করলেন না কেন?
টাকা ছিল না বলে। খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় পাইনি। চটজলদি রোজগার করতে না পারলে আমাদের খাওয়া জুটত না। ফলে খেলাটা বন্ধ করে অভিনয়ে এলাম। তবে জীবনে যাই করেছি, যেভাবেই থেকেছি আনন্দ খুঁজে নিয়েছি। যখন স্ট্রাগেল করেছি তখন তার মধ্যেও আনন্দ খুঁজেছি। তাই আজও, পাঁচতলা বাড়ি বানিয়ে, বিদেশি গাড়ি চড়েও ওই দিনগুলো মিস করি।
উমা ছবিতে আপনার বড় মেয়ে যে অভিনয় করেছে সেটা কি ওর সিদ্ধান্ত?
একদম ওর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বস্তুত সৃজিত ওকেই জিজ্ঞেস করেছিল ও অভিনয় করতে চায় কি না। আমাকে বা নীলাঞ্জনাকে প্রশ্নই করেনি। এরপরও মেয়ে যদি চায় তাহলে নিশ্চয়ই অভিনয় করবে। আমি শুধু বলেছি, আর একটু বড় হোক, নিজের মতামতগুলো তখন আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে শিখবে। সিদ্ধান্তগুলো আরও দৃঢ়ভাবে নিতে পারবে। কী করছে, কেন করছে সে বিষয়ে একটা সুচিন্তিত মতামত তৈরি হবে। তখনও যদি ও অভিনয়কেই কেরিয়ার হিসেবে নিতে চায় তাহলে আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করব।
অভিনয় জীবনে আপনার টার্নিং পয়েন্ট কী?
ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে কাজ করাটাই আমার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট। ঋতুদা একবার বলেছিলেন, ‘তুই যে অভিনয় করিস, ভেবে করিস?’ আমি সটান না বলে দিলাম। তারপর কথাটা আমাকে হন্ট করতে শুরু করল। আমি ঋতুদাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কি ভুল করছি। ঋতুদা বলেছিলেন, ‘না ভুল নয়। তবে যে কাজটা করছিস সেটা একটু ভেবে করলে হয়তো আরও অন্যরকম হতে পারে।’ এই কথাটাই আমার জীবনের বা অভিনয় কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারেন। চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করার পরে দেখলাম লোকে আমাকে অভিনেতা হিসেবে গুরুত্ব দিতে শুরু করল। এমন ছবি পেলাম যেগুলোতে অভিনয়ের সুযোগ বেশি। এখনও সেইভাবেই চলছে।
কমলিনী চক্রবর্তী