নায়িকা মানেই ঢলঢল অঙ্গে উপচে পড়া রূপ-যৌবন। পটল চেরা চোখে ঢেউ খেলানো কেশ—আদ্যিকালের এই ধারণা বদলে ইদানীং পর্দার স্বপ্নসুন্দরীরা প্রায়শই নিজেদের চেহারা আমূল বদলে দিচ্ছেন। সেই ট্রেন্ডে শামিল এবার চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী। যিনি নায়িকার চেনা কনসেপ্টকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের নতুন লুকেই নেটিজেনদের কাছে এখন বেশি জনপ্রিয়। পরিচালক আদিত্য কৃপালিনীর নতুন ছবি ‘টুটা পটাকা আইটেম মাল’। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে চলতি ধারার ছবি এটা নয়। এই ছবিরই একটি অন্যতম চরিত্রে অভিনয় করছেন শতরূপা সান্যালের বড় মেয়ে তথা ঋতাভরীর দিদি চিত্রঙ্গদা। তবে আসল খবরটা হল ছবিতে চরিত্রের প্রয়োজনে চিত্রাঙ্গদা মাথার চুল কেটে নেড়া হয়েছেন। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। নেড়া মাথায় সদ্য গজানো খোঁচা খোঁচা চুল-এই ছিল ছবিতে চিত্রাঙ্গদার লুক। তার জন্য কোন হেয়ার এক্সটেনশনের সাহায্য নেননি অভিনেত্রী। বদলে নিজেই নেড়া হয়ে গেলেন। কিন্তু এমনটা করতে তো বেশ মনের জোর দরকার। কি বলছেন চিত্রাঙ্গদা? ‘আমার কাছে ছবিটা বেশ জটিল ছিল। যদি এমন ঘটে-সেই রকম একটা পরিস্থিতি নিয়ে গল্পটা। আদিত্যর নিজের চিত্রনাট্য। আমরা প্রতিটা মেয়েই কোনও না কোনওভাবে নির্যাতনকে ভয় পাই। পুরুষরাও কি সেই ভয়টা পায়? এই ভাবনা থেকেই চারজন মেয়ে এক পুরুষকে সেই পাশবিক অত্যাচারের ভয় দেখায়।’ চারটি মেয়ের সঙ্গে যেটা ঘটে সেই একই ঘটনা যদি পুরুষদের সঙ্গে ঘটে তখন কী হবে, তাই নিয়েই এই ছবি। ছবিতে চারটে মেয়ের নাম টুটা, পটাকা, আইটেম আর মাল। এই চারজনের একজন হলেন চিত্রাঙ্গদা। মার্শাল আর্ট টিচার। চরিত্রটার জন্য পরিচালক চিত্রাঙ্গদাকে নেড়া হতে বলেছিলেন। ‘আমাদের দেশে ছোট চুলের মেয়েদের সিনেমা বা সিরিয়ালে সেভাবে কাস্ট করা হয় না। হলেও তার জন্য উইগ আছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টো। আমার লম্বা চুল চরিত্রের জন্য কেটে ফেলেছি। এই বিষয়টা এবং আমার নতুন লুক দুটোই দারুণ উপভোগ করেছি’, বললেন চিত্রাঙ্গদা। মজার বিষয় আদিত্যর ছবির জন্য সেট করা লুকেই প্রতীম ডি গুপ্তর ‘আহারে মন’ ছবিতে কাজে লাগিয়েছিলেন অভিনেত্রী। ‘টুটা পটাকা আইটেম মাল’ ইতিমধ্যেই ইউকে এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হয়েছে। এই উৎসবেই চিত্রাঙ্গদার ছবি ‘টিকলি অ্যান্ড লক্ষ্মী বোম’ পুরস্কৃত হয়।
আদিত্যর সঙ্গে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কাজ করলেন চিত্রাঙ্গদা। ছবির গল্প দিল্লি কেন্দ্রিক। জানালেন, আদিত্যর আগামী ছবি ‘ডেথ অ্যান্ড উইসডম’-এও কাজ করছেন তিনি। এছাড়া হাতে রয়েছে হরি বিশ্বনাথের নতুন ছবি। উল্লেখ্য এই ছবিতেই জুটি বাধঁছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং অনুরাগ কাশ্যপ। চিত্রাঙ্গদা কাজ করতে চান মা ও বোনের সঙ্গেও। বললেন, ‘কলকাতায় থাকি না বলেই হয়তো মা-বোনের সঙ্গে এখনও কাজ করা হয়নি।’ ইচ্ছে আছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, বিশাল ভরদ্বাজ, নীরজ খৈয়াম, জোয়া আখতারের সঙ্গে কাজ করার। কাজই বর্তমানে চিত্রাঙ্গদার প্রথম চয়েস। আর প্রেম-বিয়ে? ‘মা কোনও কিছু নিয়েই চাপ দেন না। বিয়ে নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। তাই সবাইকে ফ্রেন্ডস অন করে রেখেছি। তাছাড়া বিয়েতে অনেক লোক খাওয়াতে হবে। তার আগে প্রচুর কাজ করে অনেক অর্থ উপার্জন করতে চাই।’ ফোনের ওপার থেকে চিত্রাঙ্গদার হাসি ও প্রাণোচ্ছ্বল জবাব নায়িকার মনোভাবের খানিক ইঙ্গিত দিল বৈকি!
মানসী নাথ